শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

টানা ৫ দিনের চেষ্টায় স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা হল কপোতাক্ষের রিং বাঁধ

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৪:৪৫ পিএম

খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ টানা ৫ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার সম্পন্ন করেছে এলাকাবাসি। আজ বুধবার (১৭ আগষ্ট) ভোরের আলো ফোটার আগেই এলাকার তরুণেরা প্রতিটি মসজিদের মাইকে এলাকাবাসিকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বাঁধে আসার জন্য ঘোষণা দেয়। নিজেদের রক্ষার তাগিদে ভাঙা বাঁধের কাছে একের পর এক কোদাল হাতে জড়ো হতে শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। নদীতে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলেই হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হয় কাজ। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি কেটে, বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা চলে। সাম্প্রতিক লঘুচাপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষের ভরা জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।
স্থানীরা জানান, গত ৪ দিন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও আজ পঞ্চমদিনে সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় তারা পুনরায় রিং বাঁধ দিয়ে কপোতাক্ষের লবন পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে শুধু এবার নয়, প্রতি দুর্যোগের পর এভাবেই ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হয় বলে জানালেন তারা। এর আগে গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধ্বসে যায়। সেসময় ভাঙা স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এর পর ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে জোয়ারে ওই রিং বাঁধটি পুনরায় ভেঙে যায়। সেই থেকে টানা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। গত (১৬ আগস্ট) মঙ্গলবার এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁধ নির্মাণ শেষে প্রবল জোয়ারে সেটি ভেঙে আবারো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এই ভাঙনে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে ডুবে যায় ১০টির বেশি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।
ইউনিয়নটির চরামুখা, হলুদবুনিয়া, মেদেরচর, বীণাপানি ও দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ধসে গেছে। এতে ওইসব গ্রামে যাতায়াতের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে আসবাব ও ধান-চাল নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের আমন মৌসুমের জন্য প্রস্তুতকৃত বীজতলা, বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে পরিবার পরিজনদের নিয়ে বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ আবার উঠেছে সাইক্লোন শেল্টারে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, একমাস আগে নির্মাণ করা বাঁধ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পুনরায় ভেঙেছিল। টানা ৫ দিন স্বেচ্ছাশ্রমে ঘাম ঝরিয়ে কয়রার সাধারণ মানুষ আবারও বাঁধটি আটকাতে পেরেছে। এবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রতিনিয়ত সংষ্কার কাজ অব্যাহত রাখতে হবে কর্তৃপ‌ক্ষের কা‌ছে এমন আহবান জানান তি‌নি। বেড়িবাঁধ সংষ্কার না করে যত উন্নয়নই করা হোক না কেন তা ভেসে যাবে পানির সাথে, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হওয়া উচিত দুর্বল বেড়িবাঁধ সংষ্কারের মাধ্যমে। কয়রায় দীর্ঘদিন পরে মজবুত বাঁধের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তবে এটা হবার কথা ছিল আরও আগে, যাইহোক দেরিতে হলেও পেয়েছি। এখন দ্রুত বাস্তবায়ন হোক এটাই চাই।
বাপাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া, মেদেরচর, ঘড়িলাল বাজার ও চরামুখা এলাকার বাঁধ মেরামতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজটিতে অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। কাজটির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বাপাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ‘অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজটির দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার জাকির মোহান্দি ফেনি জেলার বাসিন্দা। তিনি তার পূর্ব পরিচিত শ্রমিক সরদার সাতক্ষীরার আক্কাস আলীর কাছে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। অবশ্য বিষয়টি শ্রমিক সরদার আক্কাস আলী স্বীকার করেছেন। বর্তমানে ওই কাজটি তিনিই করছেন। গত ১৭ জুলাই চলমান কাজের চরমুখা অংশের প্রায় তিনশ’ মিটার ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সরঞ্জাম ও লোকবল নেই ওই শ্রমিক সরদারের। যে কারণে মান ভালো না হওয়ায় চলমান কাজের চরামুখা এলাকার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
দাপ্তরিকভাবে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন পাউবো’র উপ সহকারি প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন। জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, কাজটি আক্কাস আলী নামে সাতক্ষীরার এক ব্যক্তি করছেন। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ফেনি জেলার জাকির মোহান্দির লাইসেন্সে কাজ চলমান ছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক তার লাইসেন্সে আক্কাস আলীকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রাথমিক ভাবে পানি প্রবেশ রোধ করা গেছে। পাউবোর পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বাঁশ ও জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাউবো বাঁধ শক্তিশালী করার কাজ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন