যশোরের সাতমাইল-বারিনগর দেশের অন্যতম সবজিজোন হিসেবে পরিচিত। বছরে শত কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে এখানে। এখানকার সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যেয়ে থাকে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর একদিনের ভেতরেই প্রভাব পড়েছে সবজির হাটে। বৃহৎ সবজি বাজার সাতমাইল-বারীনগরে দেখা মেলেনি আগের সেই জৌলুস। হাটের দিন যেখানে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে সেখানে অন্যদিনের থেকে তুলনামূলক কম ব্যাপারি ও চাষি হাটে এসেছেন।
সবজি ব্যাপারীরা বলছেন, ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে একদিনের ব্যবধানে প্রায় সব সবজিতে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যাপারী ইউনুস বলেন, কাঁচা বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে করে আমাদের ব্যবসা করার কোন পরিস্থিতি নেই। জ্বালানি তেলের দাম বাঁড়াতে পরিবহন খরচ আগের থেকে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। প্রতি কেজিতে গাড়ি ভাড়া প্রায় ৫/৬ টাকা বেড়েছে। এই অবস্থাতে ব্যবসা করা মুশকিল। সব মিলিয়ে কতটুকু লাভ করতে পারবো সেই সংশয়ে অনেক ব্যাপারি হাটে গতকাল হাটে আসেনি।
হঠাৎ জ্বালানি তেলে মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কারণে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান হাট মালিক আব্দুল সোবাহান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বেশি দামে সবজি কিনে পরিবহনে করে অন্য জায়গায় নিয়ে সঠিক দাম পাচ্ছে না। কেননা ট্রাক ভাড়া ৫-৭ হাজার টাকা ঢাকায় যেতে বেশি লাগছে। আবার রাতারাতি কৃষিপণ্যের দাম বাড়াতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। রোববার বেগুন, শিম, পটল, লাউ, কাকরোল, করোলা, পেঁপে, বরবটি, মুলোসহ সব সবজির দাম পাইকারিতে ৫-৭ টাকা কেজিতে বেড়েছে। এখানকার সবজি যশোর ও ঢাকায় গিয়ে বিক্রি হচ্ছে আর দ্বিগুন-তিনগুণ দামে।
যশোর শহরের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী টিটো বলেন, হঠাৎ সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। খুচরা বাজারে দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট। আবার যারা সবজি কিনতে আসছেন তারা কম কিনছেন।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব জনজীবনে পড়তে শুরু হয়েছে। পণ্য পরিবহণে বেড়েছে ভাড়া। সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন প্রকার সবজির দাম। এভাবে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেট্রোল-ডিজেল-অকটেনের দাম, ব্যাপক আকারে বাড়ানো সমর্থন করছেন না সাধারণ মানুষ।
এবারও সবচেয়ে বেশি পরিমানে সবজি চাষ হয়েছে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। এখানকার মাঠের পর মাঠ নানা প্রকারের সবজি ক্ষেত। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, হৈবতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৬শ ৩০ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ৮শ ২৮ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৫শ ৫৩ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সবজির সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে।
আব্দুলপুর গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে পটল ও করোলার চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ যশোরের অতিরিক্ত পরিচালক ড, এখলাস উদ্দিন জানিয়েছেন, সবজির রাজ্য হিসেবে যশোর জেলার পরিচিতি রয়েছে। প্রতি বছর এখানে দুই মৌসুমে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়। শুধু সবজিতে শত কোটি টাকার হাতবদল হয়ে থাকে জেলাটি থেকে। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন