শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আজ বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে! এর জনঘনত্ব বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। মোট জনসংখ্যা দুই কোটির অধিক, যা জনসংখ্যার বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। শ্রীঘই বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর হবে। ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০২২ সালের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় বিশ্বের ১৭২টি শহরের মধ্যে ঢাকা ১৬৬তম, স্কোর ৩৯.২। ইউএনইপি’র ২০২২ সালের রিপোর্ট মতে, শব্দ দূষণে বিশ্বের শীর্ষ ঢাকা। আইকিউএয়ার’র ২০২১ সালের রিপোর্ট মতে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, ঢাকার নদীগুলো (তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা) মারাত্মক দূষিত। ধলেশ্বরী নদীও এখন দূষিত হচ্ছে সাভারের ট্যানারির বর্জ্যে। দেশে যত প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা আছে, তার অধিকাংশই ঢাকায়। ব্যবহারও সর্বাধিক। এসবে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যাপক ই-বর্জ্যও পড়ে আছে যত্রতত্র। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের মতে, ঢাকায় খেলার মাঠ আছে ২৩৫টি, যার মাত্র ১৮% সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে। বাকিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে ৬০% ও সরকারের দখলে ৭% আছে। মার্সার ‘কষ্ট অব লিভিং সার্ভে-২০২২’ মতে, বিশ্বের ব্যয়বহুল ১০০ শহরের মধ্যে ঢাকা ৯৮তম। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশের শহরাঞ্চলের নির্মাণ করা ও নির্মাণাধীন ৬৬% ভবনই তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। সবচেয়ে বেশি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে রাজউকের অধিভুক্ত এলাকায়। ঢাকা ওয়াসার এমডির অভিমত, ঢাকার ৮০% ভবনের পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। জাতিসংঘের মতে, স্বাস্থ্যকর শহরের প্রতি একর এলাকায় সর্বোচ্চ ১২০ জন মানুষ বাস করতে পারে। কিন্তু ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় বাস করে ৭০০-৮০০ জন মানুষ। ইউএন হ্যাবিটেটের মতে, একটি আদর্শ বড় শহরের কমপক্ষে ২৫% এলাকা সবুজ, ১৫% এলাকা জলাভূমি ও ২০% এলাকা সড়ক থাকতে হয়। ঢাকায় বর্তমানে আছে সবুজ এলাকা-২%, জলাভূমি-১.২৬% ও সড়ক-৮%। নামবিও’র যানজট সূচক-২০২১ মতে, বিশ্বের ২৫০টি শহরের মধ্যে ঢাকা নবম। এতে বছরে দেশের জিডিপির ৬% ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকার আবাসন, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুচিকিৎসার ব্যাপক সংকট রয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও খারাপ! তাপমাত্রাও ব্যাপক। তাই ৮৭% স্থান আরবান হিট আইল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে তাপ সংবেদনশীলতার দিক থেকে সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, লালবাগ, পল্লবী ও শ্যামপুর। ঢাকার যত্রতত্র যখন তখন পশু জবাই করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে আধুনিক পশু জবাইখানা করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু তা চালু করা হয়নি! নগরের অনেক স্থানে সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। অধিকাংশ ভবনেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তাই প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ঢাকায় জীবন যাত্রার ব্যয় সর্বাধিক হওয়ার কারণ হচ্ছে: আবাসন সংকটজনিত বাড়ি ভাড়া অত্যধিক। নগরবাসীর উপার্জনের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ায়। বাধ্য হয়ে গরিব মানুষ বস্তিতে বাস করে, যা মোট বাসিন্দার ৩০%। বস্তিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সরকারি জায়গায় গড়ে উঠেছে। সরকারি দলের লোকেরা বস্তি ও সেখানে দোকান উঠিয়ে বিপুল অর্থ আয় করে। ব্যক্তি পর্যায়েও অনেক বস্তি রয়েছে। বস্তির ঘরগুলো খুব ছোট। আলো-বাতাস, গ্যাস, পানি, স্যানিটেশন, পয়োঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, রাস্তা ইত্যাদির ব্যাপক অভাব রয়েছে। বস্তিতে মাদকের কারবার সর্বাধিক। বিপুল সংখ্যক বস্তির কারণে শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারি জায়গার বস্তিতে বহুতল বিশিষ্ট ভবন করে নিম্ন আয়ের মানুষকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা কবে হবে তা বলা কঠিন। অপরদিকে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জনবলের প্রয়োজনীয় কোয়াটার নেই। তাই তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। যে সামান্য কোয়াটার আছে, তা পুরাতন ও ছোট। ঢাকায় ৩.৫ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন রয়েছে, যা এক মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলা হবে বলে জানিয়েছিলেন রাজউকের চেয়ারম্যান গত বছরের ২৮ আগস্ট। তা আজও হয়নি। এসবের ব্যবহার অব্যাহত আছে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিদ্যুতের অনেক খুঁটি ও তার রাস্তার মধ্যে থাকায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু ডিস ও ইন্টারনেটের তার বিদ্যুতের খুঁটির মাধ্যমে টানার কারণে মাকড়সার জালের মতো সৃষ্টি হচ্ছে খুঁটিগুলোতে। এতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও নানাবিধ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ভূগর্ভস্থ করা হলে এ সংকট দূর হবে। সে কাজ শুরু করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এটা হলে তারের জঞ্জাল শেষ হবে। ড্রেনের অধিকাংশ নষ্ট এবং প্লাস্টিক ও পলিথিনে ভরপুর। ফলে পয়ো ও পানি নিষ্কাশন হয় না বেশিরভাগেরই। বৃষ্টি হলেই ব্যাপক পানিজট সৃষ্টি হয়। অনেক স্যুয়ারেজের পয়ো ময়লা উপচে রাস্তায় পড়ে। এতে চলাচলের ব্যাপক অসুবিধা হওয়া ছাড়াও ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়। বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকান্ড চলছে। তাতে আবাসের নানাবিধ অসুবিধা হচ্ছে। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অনেকবার। কিন্তু সফল তা নেই। গার্মেন্ট কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে অনেকদিন আগে। তাও বাস্তবায়ন হয়নি।

ঢাকায় সর্বাধিক সংকট পুরান ঢাকায় (দক্ষিণ সিটির আটটি থানা ও ২৩টি এলাকা)। এর প্রধান কারণ-পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন, ঘিঞ্জি পরিবেশ, ছোট আকারের কক্ষ, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও রাস্তার অভাব। সর্বোপরি রয়েছে দুই হাজার কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়। এই গুদামগুলো উচ্ছেদের জন্য কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মাঝ পথে থেমে গেছে! রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে সিরাজদিখানে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল, যা বাস্তবায়ন হয়নি। তেমনি বাস্তবায়ন হয়নি ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত সিরাজদিখানে প্লাস্টিক জোন করার সিদ্ধান্ত। ফলে দুর্ঘটনা অব্যাহত আছে। যার সর্বশেষটি ঘটেছে গত ১৫ আগস্ট চকবাজারের। সেদিন সেখানে একটি ভবনের প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন লেগে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে! নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, পুরান ঢাকার উন্নয়ন ও পরিবর্তন ছাড়া রাজধানীর পরিবর্তন সম্ভব নয়। অন্যদিকে, নতুন করে যে কয়েকটি ইউনিয়নকে ঢাকা মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে মহানগরের কোনো ছায়াই পড়েনি!

অথচ, ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী করার জন্য দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে দু’জন নগরপিতা হয়েছেন। তারা পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদাবান। তবুও ঢাকার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি অব্যাহত রয়েছে। মাঝখানে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ঢাকার ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হতে পারে। ইতোমধ্যেই এটি ‘লাইফসাপোর্টে’ রয়েছে বলে অধ্যাপক আইনুন নিশাতের অভিমত।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকার করুণ পরিণতির জন্য দায়ী কেÑ নগরবাসী, নাকি নগর বিদরা, নাকি অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ আমলা ও নেতারা, নাকি শাসন ব্যবস্থার পদ্ধতি? নাকি মেয়র ও কাউন্সিলরা? কিন্তু মেয়রদের দায়িত্বে রয়েছে শুধুমাত্র ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার। তবুও নগরবাসী তাদেরকেই দায়ী করেন নগরের দুর্গতির জন্য। তাই প্রাক্তন মেয়রগণ ঢাকায় সিটি গভর্নমেন্ট চালু করে সব কাজের পূর্ণ দায়িত্ব প্রদানের দাবি করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা খর্ব হবে তাই সে দাবি মানেননি সরকার। নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরকে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য একের পর এক পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু তার বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে অবনতি হচ্ছে। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখানকার সবুজ ও নীল নেটওয়ার্ক বাঁচাতে হবে। কারণ আমরা এই শহরটিকে কংক্রিটের জঙ্গলে রূপান্তরিত করছি। বিআইপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আহসান বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে হয়তো ঢাকার উন্নতি হতো।

ঢাকার করুণ পরিণতির জন্য দায়ী যে বা যারাই হোক না কেন, চরম দৈনদশার দ্রুত অবসান ঘটিয়ে বাসের উপযোগী করা দরকার। সে জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন-যানজট, পানিজট ও দূষণমুক্ত করা। যানজট দূর করার জন্য প্রয়োজনানুগ ও মানসন্মত রাস্তা প্রয়োজন। উপরন্তু সব রাস্তাকে দোকান, স্থাপনা ও অবৈধ যানবাহন মুক্ত এবং নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যানবাহন পার্কিং ও আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক ঢাকার ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যেই মেয়রগণ ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকার চারিদিকে প্রবেশ পথে টার্মিনাল তৈরি করে ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করা হবে। যার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। খবরে প্রকাশ, ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও তিনটি বাস ডিপো তৈরির সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। টার্মিনালগুলো হচ্ছে: বাঘাইর, কাঁচপুর, ভাটুলিয়া, ভুলতা ও হেমায়েতপুরে। ২০২৫ সাল নাগাদ এসব টার্মিনালের নির্মাণ শেষে ব্যবহার শুরু হবে। এতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।

ঢাকার সংকট নিরসনে পূর্বের মতো বর্তমানেও প্রতিশ্রুতির অন্ত নেই। যার সাম্প্রতিক অন্যতম হচ্ছে- উত্তরের মেয়র গত ৩ আগস্ট বলেন, ঢাকা শহরে ২৮ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেওয়া ছিল। কিন্তু এখন প্রায় দশ লাখের বেশি রিকশা চলছে। আগের অনিবন্ধিত রিকশা তুলে দিয়ে নতুন করে কিউআর কোডযুক্ত ২ লাখ রিকশা নিবন্ধন দেব। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাবো। আগামী মাস থেকে রাস্তার পাশে পার্কিং করার জন্য ৫০০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি হবে স্মার্ট ডিজিটাল সিস্টেম। আইওটি ও মোবাইলের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী গত ২৬ জুন বলেন, ঢাকার চারপাশে নদীর ওপর যে সেতুগুলো নৌযান চলাচল উপযোগী নয়, তা ভেঙে নৌযান চলাচল উপযোগী করে নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নৌরুট চালু হলে ঢাকার যানজট কমবে।ঢাকায় যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেপটিক ট্যাংক তৈরি করবে না, তাদের সুয়ারেজ লাইন বন্ধ করে দেয়া হবে। দক্ষিণের মেয়র গত ২১ জুন বলেন,বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর হতে নগরীর ২২, ২৩ ও ২৬ নম্বর যাত্রাপথে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় ২০০ নতুন বাস চালু করা হবে। এর আগে এটি প্রথম চালু করা হয়েছে গত ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে। বাস রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘বাস রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বাসের রুট মোট ৪২টি হবে। যা সরকার নিয়ন্ত্রিত ২২টি কোম্পানির অধীনে থাকবে। অপ্রয়োজনীয় বাস রুট বন্ধ করা হবে। ২০১৯ ও ২০২১ সালের মডেলের বাস চলবে। ভাড়া নেয়া হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। উত্তরের মেয়র গত ২২ জানুয়ারি বলেন, কারওয়ানবাজার স্থানান্তর করে সায়েদাবাদে নেয়া হবে।

সেখানে অত্যাধুনিক বিজনেস হাব করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২২ এপ্রিল বলেন, সিএস রেকর্ড ধরে খালের সীমানা পিলার নির্ধারণ করবে। খালের সীমানা নির্ধারণের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। কয়েকটি খালের সীমানা পিলার বসিয়েছেন তারা। খুব দ্রুততম সময়ে খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হবে। ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম গত ৫ ফেব্রুয়ারি বলেন, পুরান ঢাকার চলমান নাগরিক সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই নতুন শহরের আদলে সাজানো হবে।দক্ষিণের মেয়র গত ১০ আগস্ট বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের চলমান সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে। উত্তরের মেয়র গত ১১ আগস্ট বলেন, পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত থাকবে। অপরদিকে, ঢাকায় মেট্রোরেলের একটি রুট আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে। পাতাল রেল নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী মার্চে।

মেয়র ও আমলাদের বর্ণিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকার অনেক কল্যাণ হবে। কিন্তু আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, আমাদের নেতা ও আমলারা যে প্রতিশ্রুতি দেন তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেন না। যে যৎসামান্য বাস্তবায়ন করেন, তারও বেশিরভাগই নির্দিষ্ট সময়ে হয় না। ফলে ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ে। কিন্তু না এই সর্বনাশা পথ বন্ধ করতে হবে। ঢাকাকে বাসোপযোগী করতে হবে দ্রুত। সে জন্য প্রতিশ্রুত প্রতিটি কর্মই নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া, সব নদীকে দখলমুক্ত, সংস্কার ও দূষণমুক্ত, প্রয়োজনীয় বৃক্ষ রোপণ, সব স্যুয়ারেজ ও ড্রেন আধুনিক, সব খেলার মাঠ ও পার্ক দখলমুক্ত ও সংস্কার,ড্যাপ বাস্তবায়ন, গার্মেন্ট ও প্লাস্টিক কারখানা এবং রানায়নিকের ব্যবসা ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, সব ধরনের দূষণ, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য, পলিথিন ও অপরাধ বন্ধ, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, নকশা বহির্ভূত বাড়ী/স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা, সব ই-বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ, যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ, সব ভবনে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা, ফাঁকা স্থানে, একতলা-দু’তলা বাড়ি ও সরকারি বস্তিতে বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক বিল্ডিং নির্মাণ এবং বালু নদীর পশ্চিম পাড় দিয়ে ডিএন্ডডি-টঙ্গি পর্যন্ত বাঁধ কাম রাস্তা করতে হবে। এসব হলে ঢাকার সার্বিক ব্যাপক উন্নতি হয়ে বাসোপযোগী হয়ে উঠবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন