শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ধান, মাছ, শাকসবজি উৎপাদনে উদ্বৃত্ত রাজশাহী, তবুও নাগালের বাইরে সাধারণ মানুষের

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১১:৩৩ এএম

বড্ড কষ্টে পড়েছে রাজশাহীর মানুষ। মাঠভরা ধান, বরজ ভরা পান, পুকুর খামার ভরা মাছ, শাকসবজি, ডিম, মুরগি, গরু, খাসী সবকিছুর উৎপাদনে প্রায় দেশ সেরা। ঘাম ঝরিয়ে দিনের পর দিন তারা উৎপাদন করে চলেছে। কিন্তু সেই পণ্য তাদের কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন দামে তাদের চিড়ে চ্যাপ্টা হবার অবস্থা।
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে যারা শ্রম ঘাম ঝরিয়ে ধানের আবাদ করছে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা। অথচ সেই চাল তাদের কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশী দামে। শাকসবজির উৎপাদনে উদ্বৃত্ত রাজশাহী অঞ্চল। এখান থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ট্রাক ট্রাক লাউ, কুমড়ো, পেপে, করল্লা, ঝিঙে, পটল, মিষ্টি কুমড়োসহ মওসুমের সব শাকসবজি। দিন দিন এসব উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। তারপরও তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা। হিসাবে উৎপাদন খরচ ওঠেনা। মাঠে দশ পনের টাকা কেজিতে পটল ঢেড়শ বিক্রি হলেও মধ্যস্বত্তভোগী ও সিন্ডিকেটের কারনে শহরে এসে এসব পন্য চার পাঁচ গুন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ফসল উৎপাদকদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে সিন্ডিকেট। বিভিন্ন কথা বলে তারা দাম নিয়ন্ত্রন করছে।
রাজশাহীতে দিন দিন মাছের আবাদ বাড়ছে। জ্যান্ত মাছ ট্রাক বোঝাই হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাজশাহীতে মাছ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। এখন বছরে ছিয়াশী হাজার মে:টনের বেশী উৎপাদন হচ্ছে। তারপর এখানকার মানুষের ভাগ্যে মিলছেনা কম দামে মাছ খাবার সুযোগ। এখানেও ঐ মধ্যস্বত্তভোগী। মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই। যদিও এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট সিটিহাট থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে গরু মহিষ। সাপ্তাহিক হাটগুলোতেও খাসী ভেড়া কম নয়। ভারত বাংলাদেশ গরু পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এ অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছে গরু খাসী খামারের। গ্রামের প্রায় ঘরে ঘরে গরু খাসী লালন পালন করা হচ্ছে। যার পরিমান কম নয়। হাটে হাটে হৃষ্ট পুষ্ট খাসী কেনা বেচা হচ্ছে। প্রানী সস্পদ দপ্তরের হিসাবে রাজশাহীতে ছোট বড় মিলিয়ে ষোল হাজারের বেশী খামার রয়েছে। এত গরু খাসী তারপরও বাজারে মাংসের দাম গরু সাতশো আর খাসী হাজার টাকা কেজি। সাধারন মানুষ শুধু চেয়ে দেখে কিন্তু তাদের আর পরখ করে দেখা হয়না। মুরগী খামারের সংখ্যা কম নয়। বাজারে এতোদিন মোটামুটি কিছুটা সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হচ্ছিল ব্রয়লার, সোনালিকা নামের মুরগী। বাজারে ডিমের সরবরাহ ভাল ছিল। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছিল বর্ন ভেদে ছয় সাত টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল চব্বিশ থেকে আঠাশ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির কারন দেখিয়ে হঠাৎ করে বিক্রি হচ্ছে পঞ্চাশ ষাট টাকা হালিতে। গরীবের আমিষ হিসাবে পরিচিত ডিমের এমন দামে হতচকিত সাধারন মানুষ। কোন কোন বিক্রেতা বলেন যেদিন থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার বড় বড় কোম্পানীর হাতে গেছে। সেদিন থেকে বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। সব জিনিষের দাম নিয়ন্ত্রন করছে তারা। জীবন ধারনের সবকিছুর দাম উল্টা পাল্টা হওয়ায় কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র অসহনীয় অবস্থা। মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। দাম বেড়েছে আয় বাড়েনি। পরিবারের কর্তা ব্যাক্তি রয়েছে পেরেসানে।
শিক্ষা নগরী রাজশাহী। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে লেখাপড়া করতে আসে লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। তাদের বেশীর ভাগ থাকে ছাত্রাবাস ছাত্রীনিবাসে। তাদের মেস জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। মেস ভাড়া খাবার খরচ সবকিছুই বাড়তি। অভিভাবকরা যা টাকা পাঠায় তাতেও টান পড়েছে। খাবার মান ও পরিমান কমেছে। মেন্যুতে এসেছে পরিবর্তন। সবার ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগী আর ডিম। সেখানে বৃদ্ধির আঁচ। আটা শাকস্বব্জি মাছ মাংস সবকিছর দামের প্রভাব পড়েছে এসব শিক্ষার্থীদের উপর। অনেকে টিউশনি করে খরচ চালান। তারাও রয়েছেন বিপাকে।
নগরীর হোটেল রেস্তরা গুলোতে টান পড়তে শুরু করেছে। ফাষ্টফুডের দোকান গুলোয় নেই তেমন ভীড়। কাপড় কসমেটিক্সের দোকান গুলোয় ভীড় কমছে। ব্যবসায়ীরা তাদের মন্দা শুরুর কথা জানান। বেড়েছে রিক্সাভাড়া জুতো পালিস সেলুনের খরচ। ফলে এক্ষেত্রেও অনেককে সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে সর্বত্র এক অসহনীয় অবস্থা। এসব যাদের দেখভাল ও নিয়ন্ত্রন করার কথা তাদের কোন খবর নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন