বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাড়ি সরে যেতে পারে। এসময়ে মাড়ি পিছনের দিকে সরে যেতে থাকে। তখন দাঁতের গোড়া দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া অতি সহজেই বংশ বৃদ্ধি করে থাকে এবং প্রদাহ ও দন্তক্ষয় সৃষ্টি করে থাকে। অনেক বয়স্ক লোকদের মাড়ি বা পেরিওডন্টাল রোগ হয়ে থাকে যা প্ল্যাকের মধ্যে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট। এর ফলে মাড়ি লাল হয়ে যেতে পারে। ফুলে যেতে পারে এবং মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাড়ি রোগ এত ব্যাপক এ কারণেই যে প্রায়ই এ রোগটি ব্যাথাহীন অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত রোগটি খুব খারাপ অবস্থায় না যায়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে শুষ্ক মুখ, রুট এবং করোনাল ক্যারিজ এবং পেরিওডন্টাইটিস দেখা দেয়। বয়স্কদের মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে মাড়ি গাঢ় লাল বর্ণের হয়ে থাকে। ফুলা এবং ব্যথাযুক্ত মাড়ি থেকে সহজেই রক্তপাত পরিলক্ষিত হয়। এসময়ে মাড়ি মসৃণ, উজ্জ্বল এবং নাজুক অবস্থায় থাকে। বয়স্কদের মাড়ি উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখলে অবশ্যই বুঝতে হবে মাড়িতে সমস্যা রয়েছে। যাদের আবার ডায়াবেটিস থাকে তাদের দ্রুততার সাথে মাড়ি রোগের অবনতি ঘটে থাকে। এবয়সে কিছু ঔষধের কারণে জিনজাইভাল হাইপারপ্লাসিয়া বা মাড়ির অতিবৃদ্ধি ঘটে থাকে। এন্টিকনভালসেন্ট জাতীয় ঔষধ ফিনাইটয়েন, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ নিফেডিপিন, এমলোডিপিন, ভেরাপ্রামিল, ডিলটায়াজেম ক্রমাগত সেবন করলে কারো কারো ক্ষেত্রে মাড়ির অতিবৃদ্ধি বা জিনজাইভাল হাইপারপ্লাসিয়া হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ পরিবর্তন করে দিলে অবস্থার উন্নতি হয়ে থাকে।
শুষ্ক মুখ হওয়ায় দাঁতের মাড়ি পিছনের দিকে সরে যাওয়ার কারণে দাঁতের গোড়া বের হয়ে যায় এবং সেখানে রুট ক্যারিজ বা দাঁতের গোড়ার দন্তক্ষয় দেখা দিবে। কারণ শুষ্ক মুখ হলে দাঁতে লেগে থাকা খাদ্যদ্রব্য ঠিকভাবে অপসারিত হতে পারে না। মাড়ির এসব সমস্যায় নন সার্জিক্যাল পেরিওডন্টাল থ্যারাপি প্রয়োগ করতে হবে। আর ভালো না হলে সার্জিক্যাল পেরিওডন্টাল থ্যারাপির মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন সিস্টেমিক রোগ বিবেচনায় এনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মুখের অভ্যন্তরে অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে শুষ্ক মুখ, ব্যথা, মুখের জ্বালাপোড়া এবং স্বাদের পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। স্বাদের মধ্যে বিশেষ করে লবণাক্ত অথবা টক স্বাদ মুখে অনুভূত হতে পারে। মাড়ি শুষ্ক এবং উজ্জ্বল দেখাবে যা থেকে সহজেই রক্ত পড়তে পারে। অধিকাংশ বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্ট এ লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। বয়স্ক মানুষদের পারকিনসনস্ রোগ হতে পারে। এ রোগে যেসব ঔষধ সেবন করা হয় তার কারণেও শুষ্ক মুখ হতে পারে। এটি হয় লালা নিঃসরণ কমে যাওয়ার কারণে। লালা কমে গেলে মুখের রোগ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। পারকিনসনস্ রোগে রোগির দাঁতের প্ল্যাক গঠন বেশি হয়। মাড়ি রোগ এবং পেরিওডন্টাল রোগ দেখা যায়। এটি হয় যেহেতু পারকিনসনস্ রোগে হাতের মুভমেন্ট মুখ পর্যন্ত কম হয় এবং টুথব্রাশ করার দক্ষতা হ্রাস পায়। ফলে মাড়ির রোগ অনেক বেশি হয়।
বয়স্ক রোগিদের ক্ষেত্রে অ্যালঝাইমারস রোগ বা ভুলে হাওয়া রোগ সৃষ্টি হতে পারে। দাঁতের পরিচর্যা কেন প্রয়োজন রোগি সেটাই ভুলে যায়। এমনকি কীভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে বা কৃত্রিম দাঁত পরিষ্কার করতে হবে তাও ঠিকমত মনে থাকে না। দাঁতের পরিচর্যায় অবনতি এবং লালা নিঃসরণ কমে যাওয়ায় দন্তক্ষয় বৃদ্ধি পায়। দাঁতের প্ল্যাক গঠন বেশি হয়। এর ফলে মাড়ি রোগ ছাড়াও দাঁতের ক্যারিজ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে রোগিকে সার্বক্ষণিক নার্সিং এর মধ্যে রাখতে হবে। বয়স্ক রোগিদের মাড়ির যত্নে পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজন না হলেও বছরে অন্তত তিন বার ডেন্টাল সার্জনের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টেমিক রোগ থাকলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নিতে হবে শরীরের প্যারামিটারগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কি না? এবং সেই অনুযায়ী মাড়ি রোগে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন