বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কুবিতে আজকে একজন, কালকে আরেকজন, চিঠি ইস্যু করেন বেশ কয়েকজন!

কুবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১১:১৮ এএম | আপডেট : ১১:২৮ এএম, ২১ আগস্ট, ২০২২

আজকে একজন তো কালকে আরেক জন রেজিস্ট্রারের হয়ে চিঠি ইস্যু করেনন বেশ কয়েকজন ।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি ) চলতি বছরের ২৩ মার্চ রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের পাচঁ মাসে শূণ্য পদের বিপরীতে নতুন রেজিস্ট্রারের নিয়োগ দিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিনজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিয়ে কোনরকম কাজ চালালেও প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পছন্দের ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রার পদে বসাতে সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ১৩ এর ক ধারায় বলা হয়েছে রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কর্মকর্তা হবেন এবং সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিবের দায়িত্ব পালন করিবেন । এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পূর্ণকালীন নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসির নির্দেশনার কোনটিই মানছেন না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদে নিয়োগ দেয় তৎকালীন প্রশাসন। চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে ভিসি সাথে কাজ করতে গিয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে অস্বস্তিবোধের কথা জানিয়ে ২৩ মার্চ পদত্যাগ করে ড. আবু তাহের।

সে সময় ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দ্রুত রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়ার কথা বললেও ৫ মাসেও রেজিস্ট্রার বিহীন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর আগে ২০০৭ সালের স্থায়ী রেজিস্ট্রারের হিসেবে নিয়োগ পায় মুজিবুর রহমান মজুমদার। তিনজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে এমন অভিযোগ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবে বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ মনে করে জুনিয়র এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সুযোগ দিতে চায় ভিসি।

অধিকাংশ শিক্ষক বলছেন রেজিস্ট্রার যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বেশী কানেক্টেড সেক্ষেত্রে শিক্ষক থেকে রেজিস্ট্রার দেয়া উচিত।


একাধিক শিক্ষক নেতা নাম না প্রকাশ করা শর্তে বলেন, একেক দিন একেক জনের স্বাক্ষরিত চিঠি প্রকাশের করার ফলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার কার কাছে কোন আবেদন করবে সেটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। অনেকসময় তারা একজন আরেকজনের দায়িত্ব বলে চালিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে কাজের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হয়। একটি লম্বা প্রক্রিয়ায় আটকে পড়ে যেকোন আবেদন।

আরো বলেন, রেজিস্ট্রার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র। সেখানে রেজিস্ট্রার নিয়োগে কালক্ষেপণ দুঃখজনক। তারা অভিযোগ করেন, উপাচার্য নিজের পছন্দের লোককে রেজিস্ট্রার পদে বসাতে চায়। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য কাউকে বসালে সেটির বিরূপ প্রভাব পড়বে।

দফতরটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, রেজিস্ট্রার না থাকায় কাজে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রারের মত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অনেকদিন ধরে শূন্য থাকায় কাজের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। কোন একটি ফাইল বা চিঠি তুলতে হলে রেজিস্ট্রার দফতর হয়ে যেতে হয়। ইউজিসি থেকে রেজিস্ট্রার পদটি পূর্ণাঙ্গের কথা বলা আছে। অথচ সেখানে ৫-৬ মাস ধরে দপ্তরটি বন্ধ।

সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, রেজিস্ট্রার হল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও উল্লেখ আছে সকল চিঠিপত্র আদানপ্রদান হবে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে। ইউজিসি, মন্ত্রণালয়ের সাথে মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে রেজিস্ট্রার। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যেকোন আবেদন তার কাছে করবেন। এখন রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্তিতে পড়ছে কার কাছে আবেদন করবে এবং ফিডব্যাকটাও পাচ্ছে না। কিন্তু রেজিস্ট্রার না থাকলে প্রশাসন স্থবির হয়ে যায়। একদিনও রেজিস্ট্রার বিহীন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমাদের আহ্বয়ন ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া। আগে আমরা একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছি সেটির আবার রিমাইন্ডার দিব। আর একটি কনট্রাক্টচুয়াল নীতিমালা তৈরি করছি। কমিশনে পাশ হলে এক মাসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিতে হবে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ দিতে বলেছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, কোথাও কোনো স্থবিরতা নাই, কেউ যদি বলে থাকে তাহলে সেটা মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বরং রেজিস্ট্রার থাকার সময় আমরা দেখছি যে দলাদলি, অমুক তমুক, এটি এখন নাই। এখন ফেয়ার জাজমেন্ট হচ্ছে। শিক্ষকেরা এসে আমাকে বলে আগে ইচ্ছামত ফাইল আটকে রাখতো। তার দলের লোকদের সুবিধা দিত, জিনিসটা এখন নাই। এখন আগের চেয়ে আরও দ্রুত কাজ হচ্ছে। ডেপুটি তিন জনেই ভাল কাজ করছে। এখন আমার কাজ আরও তাড়াতাড়ি হয়।

ইউজিসির নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, ইউজিসি থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমরা বলছি শীঘ্রই নিয়োগের বিষয়টি জানিয়ে দিব। রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব এটি বিষয় না। যে কেউ মিটিং ডাকতে পারে, ডেপুটি রেজিস্ট্রারও ডাকতে পারে। দেখতে হবে কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা। আমাদের সব কাজ চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন