শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

তামাক আইনে সংশোধনী, পুনর্বিবেচনার আহ্বান ১৭ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ৭:১৬ পিএম

ধূমপানের তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া ভেপিং এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমের ওপর প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ১৭ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা তামাকের ক্ষতিহ্রাস বিষয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন।

গত ১ জুলাই সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাঁরা বলেন, নিকোটিন-নির্ভর এসব পণ্য তুলনামূলক বেশ নিরাপদ যা ধূমপান হ্রাসে সফলতা পেয়েছে। চিঠিতে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত টেনে দেখানো হয়েছে, ভেপিং প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় বহুলাংশে নিরাপদ ও কম ক্ষতিকর।

আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ১৭ জন বিশেষজ্ঞরা প্রেরিত চিঠিতে বলেন, “ধূমপায়ীদের প্রচলিত ধূমপান ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্পের প্রতি উৎসাহিত করা উচিত বাংলাদেশ সরকারের। এর মাধ্যমে ধূমপানে সৃষ্ট নানাবিধ জটিল ব্যাধি থেকে সহজে নিরাপদ থাকা যাবে।”

চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারকে গবেষণা-নির্ভর তামাক নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিহ্রাস নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্য আরও বেশি সফল হবে।

ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (২০১৩ সনে সংশোধিত) সংশোধন করতে প্রস্তুত করা খসড়ায় তুলনামূলক নিরাপদ ভেপিং, ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম, নিকোটিন প্যাচ ও ট্যোবাকো হিটিং প্রডাক্ট নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়কে ওই চিঠি দেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ‘তামাকের ক্ষতিহ্রাসকরণ দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এই চিঠিতে। কারণ, অনেকের পক্ষে প্রচলিত সিগারেট হুট করে একবারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। তারা বিকল্প হিসেবে নিকোটিন-নির্ভর এসব পণ্য ব্যবহার করতে পারবেন। এতে তামাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।

চিঠিতে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ভেপিং ও অন্যান্য নিকোটিন পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে এসব পণ্যের কালোবাজারি বেড়ে যাবে, যেখানে অনিরাপদ পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে।

প্রচলিত ধূমপানের ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তা হ্রাসে ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমের নিয়মতান্ত্রিক বাজার চালু করার পরামর্শ দিচ্ছেন এই বিশেষজ্ঞরা। নিকোটিন-নির্ভর এসব বিকল্প পণ্যকে ঝুঁকি হিসেবে নয়, বরং ধূমপান হ্রাসের সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বিভিন্ন গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে দেখানো হয়েছে, পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ডের (বর্তমানে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি) গবেষণায় ভেপিং প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

চিঠিতে সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, এসব নিরাপদ বিকল্প পণ্য নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে বরং নজরদারী, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। যেমন, এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার বাধ্যবাধকতা, পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা, বিপণন ব্যবস্থা ভালো হওয়া, সঠিকভাবে লেবেলিং করা, ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।

ভেপিংয়ের সুফল নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যগুলোতে নিয়ন্ত্রণ বেশি কঠোর হওয়া উচিত. আর তুলনামূলক নিরাপদ পণ্যগুলোতে নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক শীথিল হওয়া প্রয়োজন। নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বাজে নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ, এর ফলে ধূমপান ছেড়ে দিতে আগ্রহীরা নিরাপদ বিকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, কালোবাজারির ঝুঁকি, অপরাধ ও দুর্নীতি বাড়ে।

চিঠিতে ১৭ জন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে রয়েছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তিনজন মহাপরিচালক ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের উপদেষ্টা ডা. ডিলন হিউম্যান, সুইডিশ গবেষক ও ইউরোপীয় রেড ক্রস/ক্রিসেন্ট নেটওয়ার্কের এইডস ও যক্ষ্মা বিষয়ক কর্মসূচির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে মিল্টন, নিউজিল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক মারেওয়া গ্লোভার, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যোশাল সায়েন্টিফিক অ্যাডিকশন রিসার্চের অধ্যাপক হেনো স্টুভার সহ অন্যান্য প্রসিদ্ধ গবেষকরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন