শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অফিস সময়সূচি কঠোরভাবে মানতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের শুরুতেই আমরা সব সরকারি অফিসের গাড়ি-এসি ব্যবহার ও অফিস সময় কমিয়ে আনার কথা বলেছি। বিলম্বে হলেও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এর আগে প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধন ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে সারাদেশে রুটিন করে লোডশেডিং দেয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তার কোনো আলামত দৃশ্যমান হয়নি। এহেন বাস্তবতায় সরকার আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি অফিস, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকসমুহের কার্যকালের সময়সুচী পুন:নির্ধারণ করেছে। গত সোমবার মন্ত্রীপরিষদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে আজ বুধাবর থেকে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় হবে সকাল ৮ থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। সব তফশিলি ব্যাংকের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়িয়ে ২দিন করা হয়েছে। এখন থেকে শুক্র ও শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৈনিক কার্যকাল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর নির্ধারণ করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যুতের ঘাটতি ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশে এক ধরণের সামাজিক-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এটি এখন বৈশ্বিক বাস্তবতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, ধনী ও সচ্ছলদের সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মূল্যসাশ্রয়, মিতব্যয়িতা ও কৃচ্ছ্রতার নীতিকে সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের অফিস ও বাড়ি থেকে শুরু করে সব সরকারি. বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি কার্যকরের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। কিছুটা দেরিতে হলেও সরকার প্রজ্ঞাপণ জারি করে সব প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় ও সাপ্তাহিক ছুটির নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। চলমান বাস্তবতায় এটি নি:সন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করলেই হবে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস ও দফতরগুলো সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে কিনা তার সঠিক নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের জনপ্রশাসন বিভাগ, ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রণালয়কে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা উদ্যোগ নিতে হবে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন সময়সূচি বাস্তবায়নে কঠোর না হলে যে লক্ষ্যে এ সূচি করা তা সফল হবে না।

বিদ্যুৎঘাটতির কারণে রেশনিং বা রুটিন লোডশেডিং বিদ্যুৎ বিভাগের ঘোষিত সময়সীমার চেয়ে অনেক বেশি। স্থানভেদে ৪ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের ধকল সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে। এবার বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরম তীব্র হয়ে উঠায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং জাতীয় উৎপাদনশীলতার উপর বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরী করেছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কারখানায় জেনারেটর চালনা এবং কৃষিকাজে সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় যথেষ্ট বেড়ে যাবে এবং বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হতে পারে। এদিক বিবেচনা করে কৃষিতে সেচের সুবিধার্থে গ্রামে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বেসরকারি অফিসের সময় সূচি সম্পর্কেও সরকারের নির্দেশনা থাকা জরুরি। সেই সাথে মার্কেট, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র ও হ্টাবাজারের সময়সীমা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার-মার্কেট কমিটির প্রতি নির্দেশনা থাকতে হবে। মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। করোনাকালে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি-দাখিল ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা আগামি মাস থেকে শুরু হচ্ছে। এ সময়ে লোপশেডিংয়ের মাত্রা কমিয়ে আনার উদ্যোগ থাকতে হবে। চলমান বাস্তবতায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কমার সাথে সাথে দেশে মূল্য সমন্বয় এবং জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের উদ্যোগগুলো কার্যকর করতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার মত ইস্যুগুলোর অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এই মুহূর্তে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত হলে সংকট কিছুটা হলেও সামাল দেয়া সম্ভব হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আবুল ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৬ এএম says : 0
সরকারের মন্ত্রীরা এতদিন বলেছে এ দেশ অনেক উন্নত হয়ে গেছে। এখন লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণের জন্য আবার এ আইন কেনো?
Total Reply(0)
আবুল ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৫ এএম says : 0
সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের দুইদিন বন্ধের আইন করে দেশ থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে।
Total Reply(0)
আবুল ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৯ এএম says : 0
বিদ্যুতের ঘাটতি ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশে এক ধরণের সামাজিক-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের কি হবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন