শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

লাখ লাখ টাকায় দফারফা

পিডিবির ১ কি.মি বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন, জানে না বিদ্যুৎ অফিস

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর আওতায় প্রায় ১ কিলোমিটার বিদ্যুতের খুঁটি কে বা কারা স্থাপন করলো জানে না অফিসের কোনো কর্মকর্তা। ওই কাজের কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে খুঁটিগুলো উঠিয়ে আনছেন উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী। পরে বিষয়টি নিয়ে সহকারী প্রকৌশলী সোমবার সকালে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
জানা যায়, ১৪ আগস্ট ঈশ্বরগঞ্জে যোগদান করেন সহকারী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন। যোগদানের পর তিনি জানতে পারেন, উপজেলার চরশিহারি গ্রাম ও রংগের বাজার এলাকায় ১২টি উচ্চ মাপের খুঁটি স্থাপন করা রয়েছে যেখানে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে অফিসের সকল কাগজপত্র খতিয়ে ওই ১২ খুঁটির কোন অনুমতি পত্র খুঁজে পাননি। পরে অফিসের সকল কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলে তারাও বিষয়টি জানে না বলে জানায়। এ অবস্থায় সহকারী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে খুঁটিগুলো তুলে অফিসের সামনে নিয়ে আসেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরশিহারী গ্রামের এবং রংপুর বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ছোট খুঁটি দিয়ে এলটি লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আছে। কিন্তু সেই সংযোগে বিদ্যুতের ভোল্ট কম থাকায় এসটি লাইন আনতে স্থানীয়রা ঈশ্বরগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান সাহায্যকারী পদে চাকুরীরত সাইফুল ইসলামসহ দুই একজন কর্মচারি গ্রাহদের নতুন লাইন পাবার আশ্বাস দেয়। পরে তারা এলাকায় গিয়ে সংযোগকারীদের কাছে খুঁটি ও ২৫০ কেভি ট্রান্সফরমার দিবে বলে জানায়। এই লাইন নির্মাণ বাবদ ওই এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বলেও জানান এলাকাবাসী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের এক কর্মচারী। তারা আরো জানান, এই উচ্চ মাপের খুঁটির কাজ স্থাপন ছাড়াও আরো অনেক অভিযোগের পাহাড় সাইফুলের বিরুদ্ধে। অথচ সাইফুল ইসলাম চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও তার চলাফেরা দেখে মনে হয় সে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন বড় অফিসার।
এলাকাবাসী জানান, নতুন লাইন দিবে বলে এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের সাইফুলসহ কয়েকজন কর্মচারী। টাকা নেয়ার পর ঈদুল আজহার দুইদিন আগে ওই এলাকায় খুঁটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়।
কিন্তু প্রায় দুই মাস পর খুঁটিগুলো অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পরে যারা টাকা নিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, এ ব্যাপারে কারো কাছে তাদের বিষয়ে কিছু না বলতে, বললে কোনদিন বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে না এবং তাদের চাকরিও চলে যাবে। তারা গ্রাহকদের আরো জানায়, কাগজপত্রের ঝামেলার কারণে খুঁটিগুলো উঠানো হচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক করে পুণরায় নতুন করে বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হবে এবং টাকাও ফেরত দেয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে লাইনম্যান সাহায্যেকারী সাইফুল ইসলাম টাকা ও খুঁটির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, কে খুঁটি দিয়েছে আর কে টাকা নিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তবে তিনি দেখেছেন ১২টি খুঁটি উত্তোলন করে এনে অফিসের সামনে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঈশ্বরগঞ্জ সহকারি প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন জানান, অফিসের সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখেও ১২টি খুঁটি স্থাপনের কোন অনুমতি পত্র পাওয়া যায়নি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে খুঁটিগুলি উত্তোলন করে নিয়ে অফিসের সামনে রাখা হয়। সেই সাথে বিষয়টি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। অফিসের কয়েকজন কর্মচারি এই কাজের সাথে জড়িত রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও আমার কাছে এ ধরনের কোন লিখিত অভিযোগ নেই। যদি এমন অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন