প্রকল্পের মেয়াদ ছিল দুই বছর। তবে ছয় বছরেও কাজ শেষ করা যায়নি। এ অবস্থায় সময় আরো চার বছর বাড়ানো হয়েছে। আর প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে কাজের যা গতি তাতে বর্ধিত সময় আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় বিগত ২০১৭ সালের এপ্রিলে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর এ মেগা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে বিগত ২০২০ সালে জুনে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।
মহানগরীতে চক্রাকার সড়ক নির্মাণ ও দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জসহ বিশাল এলাকাকে পানিবদ্ধতামুক্ত করতে প্রকল্পটি নেয়া হয়। প্রকল্পের আওয়তায় চাক্তাই খালের মুখ থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত নয় কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সাথে মহানগরী থেকে কর্ণফুলী নদীর সংযুক্ত ১২টি খালের মুখে সøুইচ গেইট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য মহানগরীকে ঘিরে চক্রাকার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং পানিবদ্ধতা সমস্যার নিরসন।
পতেঙ্গা সৈকত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড নির্মাণ শেষ হয়েছে। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে লিঙ্ক রোড। তার আগেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক। চাক্তাই-কালুরঘাট সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বন্দরনগরীকে চক্রাকার সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। তাতে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এ সড়কটি চালু হলে উত্তর চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারমুখী যানবাহন এ সড়ক হয়ে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পথে চলাচল করবে। এতে মূল মহানগরীতে যানবাহনের চাপ কমবে। আবার আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে উত্তর চট্টগ্রামের যানবাহনগুলো বায়েজিদ লিঙ্ক রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোড হয়ে টানেল দিয়ে যাতায়াত করবে। এতে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মসৃণ হবে। একইসাথে ব্যস্ততম মহানগরীকে ঘিরে চারপাশের সড়ক যোগযোগ চালু হলে মহানগরীতে যানবাহনের চাপ তথা যানজটও কমে আসবে।
এ প্রকল্পে ১২টি খালের মুখে সøুইচ গেট নির্মাণ করা হলে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি আটকানো যাবে। আর ভারী বর্ষণের সময় গেট খুলে দিয়ে দ্রুত পানি অপসারণ করা যাবে। তাতে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকাসহ মহানগরীর পানিবদ্ধতার যে সমস্যা তা অনেকাংশে দূর হবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রতিনিয়ত ওইসব এলাকা জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে। তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তবে প্রকল্প কাজে সম্ভুক গতিতে যথাসময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে। নয় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে চাক্তাই খাল থেকে নয়া খাল পর্যন্ত সাত কিলোমিটার অংশে মাটি ভরাট হয়েছে। কর্ণফুলী নদী থেকে তোলা বালু দিয়ে মাটি ভরাট করা হয়। স্থানীয়রা জানান, কাজে ধীরগতির কারণে বৃষ্টি আর জেয়ারে ভরাট করা মাটি সরে যাচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করা না হলে প্রকল্পের ব্যয় আরো বাড়বে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১২টি সøুইচ গেটের মধ্যে চাক্তাই খালের মুখে নির্মাণাধীন সøুইচ গেটের দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার, প্রস্থ ১২ মিটার ও উচ্চতা ৩০ ফুট। এখানে থাকবে পাম্প হাউজ, জেনারেটর ও সাব স্টেশন। বাকি ১১টি খালের মুখেও পাম্প হাউজ ও জেনারেটর থাকবে। ১০টি সøুইচ গেট নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে চাক্তাই, রাজাখালী, রাজাখালী শাখা-১, রাজাখালী শাখা-৩, শাখা খাল-১, শাখা খাল-২, বলির হাট খাল, নয়া খালের স্ট্রাকচার নির্মাণ কাজ অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। একে খান ও ফরেস্ট খালের মুখে নির্মাণ কাজ এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে।
প্রকল্পের আওতায় চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরে প্রায় নয় কিলোমিটারে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। যার উচ্চতা বিদ্যমান সড়কের চার থেকে ৯ দশমিক ৪ মিটার উঁচু হবে। সড়কের প্রস্থ হবে ২৪ দশমিক ৫০ মিটার। তীর সংরক্ষণ এবং সড়ক নির্মাণের জন্য ৫৫ লাখ ঘন মিটার মাটি ভরাট করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সিসি ব্লক করা হবে দুই লাখ সাড়ে ১২ হাজার বর্গমিটার।
প্রকল্পের পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বিগত ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হতে কয়েক বছর সময় পার হয়ে যায়। মূল কাজ ২০১৯ সালে শুরু হলেও করোনার কারণে কাজ ব্যাহত হয়। সংশোধিত আকারে প্রকল্পের ব্যয় ৪৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। সড়কের বেশিরভাগ অংশে মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। ১০টি খালের মুখে সøুইচ গেট নির্মাণের অবকাঠামোও প্রস্তুত হয়েছে। প্রকল্পে আর্থিক সঙ্কটও নেই। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সংশোধনের ফলে প্রকল্পে দুটো পরিবর্তন আসছে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া সংশোধন করা হবে সøুইচ গেটের ডিজাইন। সøুইচ গেটে মরিচা প্রতিরোধক এবং টেকসই এমএস শিট সংযুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘ ৫০ বছরেও এর কোন ক্ষতি হবে না। ওয়াকওয়ে নির্মাণের ফলে নদী তীরে পর্যটন স্পট তৈরি হবে। সেখানে নগরবাসী ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন