বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জেআরসি’র বৈঠক : তিস্তাচুক্তি উপেক্ষিত

| প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এসব নদী আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে স্বীকৃত। কোনো একক দেশ, বিশেষত উজানের দেশ সমঝোতা ছাড়া ভাটির দেশের নদীর উপর কোনো বাঁধ বা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেনা। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এসব বিষয় পর্যালোচনা এবং সমঝোতার ভিত্তিতে যৌথ নদীর পানি সমস্যার সমাধান কল্পে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশন(জেআরসি) গঠিত হয়েছিল। কমিশনের লক্ষ্য ছিল বছরে কমপক্ষে একবার বৈঠকে বসা। কিন্তু গত দুই দশকে যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পানি সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ভারতের অনিচ্ছা ও অসহযোগিতার কারণে প্রায় একযুগ ধরে যৌথ নদীকমিশনের কোনো বৈঠকই হয়নি। এদিকে দেশের প্রধান নদী পদ্মা ও তিস্তার উজানে ভারতের বাঁধের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরণের ভূ-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে নাম কা ওয়াস্তে গঙ্গার পানিচুক্তি সম্পাদিত হলেও সে চুক্তি কখনো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। তিস্তাপাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদের কোটি কোটি মানুষ সেচ মওসুমে পানি সংকটের কারণে হাজার হাজার একর কৃষিজমি অনাবাদী রাখতে বাধ্য হচ্ছে। দুই দশক ধরে ভারতের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানিচুক্তির জন্য আবেদন-নিবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তিস্তাচুক্তির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও নানা বাহানায় তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যখন এক বিশেষ অবস্থায় উপনীত হয়েছে তখন প্রায় একযুগ পর যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের আয়োজন হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লীতে সচিব প্রর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মূলত ভারতের ইচ্ছায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের কোনো এজেন্ডা নেই। এমনকি তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ কথা বললে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হবেনা বলেও ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিস্তার ফাইল লকারে-লালফিতায় চেপে রেখে তারা এখন কুশিয়ারার পানি বন্টন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কুশিয়ারার সীমান্তখাল রহিমপুর খালে পাম্প বসিয়ে ভারত একতরফাভাবে ব্যাপক পরিমানে পানি প্রত্যাহার করে নিলেও সিলেটের জকিগঞ্জে স্থাপিত বাংলাদেশের একটি পাম্পহাউজ ভারতের বিএসএফ’র বাঁধার কারণে ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। যৌথনদী কমিশনের বৈঠক না হওয়ায় এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আজকে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্তরের বড় নদী কুশিয়ারা, দুধকুমার, মনু, ধরলা, গোমতি, মুহুরী, খোয়াই নদীসহ যৌথ নদীর পানি বন্টনে অমিমাংসিত ইস্যু এবং গঙ্গার পানি চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়ে আলোচনার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

আগামী দিনের বিশ্বে প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু ও খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নে সুপেয় পানির প্রাপ্যতা মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অভিন্ন নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। নির্মাণের পর বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তি ছাড়াই পরীক্ষামূলক চালুর কথা বলে ফারাক্কার গেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। এর দুই দশক পর ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানিচুক্তি হলেও বাংলাদেশ কখনোই চুক্তির শর্ত মোতাবেক পানি পায়নি। গত একযুগে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতা পৌছেছে বলে দুই দেশের সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। এ সময়ে প্রায় বিনা পয়সার ট্রানজিট-করিডোর থেকে শুরু করে ভারতের চাহিদামত সম্ভাব্য সবকিছুই দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নদী ফেনীনদীতে পাম্প বসিয়ে ভারতে পানি নেয়ার মত চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষের দুর্দশার প্রেক্ষাপট সামনে রেখেও একযুগ ধরে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক না হওয়া এবং তিস্তার পানিচুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের শৈথিল্য থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করতে ভারত কতটা বেপরোয়া। পানির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশকে অবশ্যই তার ন্যয্য হিস্যা আদায় করতে হবে। সেই সাথে পানি সমস্যার সমাধানে বিকল্প গঙ্গাবাধ নির্মাণসহ চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। নদীগুলোর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশালাকার রির্জাভার বা সুগভীর-সুরক্ষিত জলাধার নির্মাণের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে। শতবছরের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশের মানুষ। তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ভারত সফরে তিস্তাচুক্তি সহ পানি সমস্যার সমাধানে চুক্তি ও সমঝোতা হবে বলে আমরা আশাবাদী। ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় জেআরসি বৈঠক নির্ভরশীল হওয়ার বাস্তবতার অবসান ঘটাতে হবে। প্রয়োজনে ভারত-চীন-নেপাল-বাংলাদেশের সমন্বয়ে অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১১:৫৭ এএম says : 0
পানির অপর নাম জীবন | আমাদের মরহুম মুজিবুর রহমান বলেছিলেন আমরা ভাতে মারবো-পানিতে মারবো | এখন আমাদের সরকার আমাদেরকে ভাতে মারছে পানিতেও মারছে ইন্ডিয়ার গোলামী করে
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:১৮ পিএম says : 0
“বাংলাদেশকে অবশ্যই তার ন্যয্য হিস্যা আদায় করতে হবে। সেই সাথে পানি সমস্যার সমাধানে বিকল্প গঙ্গাবাধ নির্মাণসহ চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।” সম্পদক মহোদয়ের সাথে আমিও উল্লিখিত মন্তব্যের সঙ্গে একমত। আশা করি নিশ্চয়ই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে সদয় হবেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন