ওজন কমে যাওয়া ক্যান্সারের একটি লক্ষণ যা আপনি কখনোই ইগনোর করতে পারেন না। আপনার ওজন হঠাৎ করে যদি অনেক কমে যায় যা আপনি চিন্তাও করতে পারেন না তাহলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মেয়েদের ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রথম প্রথম অনেক খুশি হয়ে যায় এই ভেবে যে কোনো রকম ব্যায়্যাম অথবা ডায়েট ছাড়া দিন দিন ওজন কমে যাচ্ছে। ক্যান্সার সেল শরীরের স্বাভাবিক শক্তি ব্যবহার করে থাকে যার কারণে ওজন কমতে পারে। এধরনের সমস্যগুলো আপনার ক্ষেত্রে দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে কেন দিন দিন ওজন কমে যাচ্ছে। ক্যান্সার ছাড়াও ওভার একটিভ থাইরয়েড গ্লান্ডের কারণে ওজন কমে যেতে যারে। তাই হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে ক্যান্সার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হবে হবে।
মেয়েদের মাসিকের সময় ব্লোটিং বা পেট ফাঁপা অথবা ফুলে যাওয়া দেখা যেতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাসিকের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। কিন্তু ব্লোটিং বা পেট ফাঁপা যদি প্রতিদিন হয় এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থায়ী হয় তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ব্লোটিং দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি পেটে ব্যথ্যা বা পেলভিক পেইন হতে পারে। আপনি বেশি না খেলেও মনে হবে পেট ভরে গেছে। সিটি স্ক্যান এবং রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য। তবে এক্ষেত্রে ক্যান্সারের কথা মাথায় রাখতে হবে।
মহিলারা চাইলে নিয়মিত নিজের ব্রেস্ট নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কোনো লাম্প বা চাকা আছে কি না? ব্রেস্টের অন্যান্য পরিবর্তনও খেয়াল করে দেখতে হবে। প্রদাহজনিত ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ব্রেস্টের উপরে ত্বক লাল এবং পুরু হয়ে যাওয়া দেখা যেতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অনেক সময় ব্রেস্টে লাম্প বা চাকা দেখা দেয় আবার চলেও যায়। নতুন কোনো লাম্প বা চাকা যদি এক মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও চলে যাচ্ছে না বরং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। ব্রেস্টের উপর র্যাশ বা দাগ যদি কয়েক সপ্তাহ থাকে তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। স্তনের বোঁটায় যদি কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাহলে অবশ্যই তা পরীক্ষা করাতে হবে। যখন আপনি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন না কিন্তু স্তন থেকে কিছু নিঃসরণ হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
আপনার যদি নিয়মিত মাসিক হয় তাহলে মাসিকের মাঝখানে যদি রক্তক্ষরণ হয় তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মেনোপজের পর রক্তক্ষরণ হলেও বিষয়টি পরীক্ষা করতে হবে। মাসিকের আগে অন্তর্বাসে ফোটা ফোটা রক্তের সমস্যাকে স্পটিং বলা হয়। স্পটিংকে এন্ড্রোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে দেখা হয়ে থাকে। পরিপাক নালী থেকে পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তক্ষরণ কলোরেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আল্ট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোস্কোপি, কোলোনোস্কপি অথবা বায়োপসির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়।
মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কিন বা ত্বকের ক্যান্সার সবচেয়ে কমন ক্যান্সার হিসাবে দেখা যায়। আমাদের দেশেও এর প্রকোপ বাড়ছে। তিল বা আঁচিল যদি অনিয়মিত আকৃতি বা রঙে পরিবর্তিত হয় অথবা দুই পাশের ত্বক একই ধরনের না হয় তাহলে ত্বকের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে ধরে নিতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে আসলেই তা ক্যান্সার না অন্য কিছু। কিন্তু এগুলো ছাড়াও ত্বকের অন্যান্য পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ত্বকের পিগমেন্টেশন বা স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন, রক্তপাত, অতিরিক্ত স্কেলিং অর্থাৎ এপিডারমিস বা বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত অথবা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মিলানোমা ত্বকের একটি ক্যান্সার যা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
গিলতে অসুবিধা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে যেমন অন্ননালী বা ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার। বুকের এক্সরে এবং এন্ডোসকপির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। ক্রমাগত গিলতে অসুবিধা হলে দ্রুত আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পায়খানার সাথে রক্ত গেলে হেমোরয়েডের কারণে হতে পারে। প্রথমে এটি কোলন ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার কোলোনোস্কোপি করতে দিতে পারেন। প্রস্রাবের সাথে রক্ত দেখা গেলে মাসিকের রক্তের কারণেও হতে পারে যা অনেক সময় বোঝা যায় না। কিন্তু এটি ব্লাডার অথবা কিডনির ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। তাই এসব বিষয়ে ন্যূনতম সচেতন হতে হবে।
কাশির সাথে রক্ত ব্রংকাইটিস, যক্ষ্মা, এমনকি ভাগ্য খারাপ হলে ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষণ এবং রোগীর ইতিহাস জেনে অনেক কিছু অনুমান করা যায়।
যখন ডিপ্রেশন বা হতাশার সাথে এবডোমিনাল পেইন পেট ব্যথা যুক্ত হয় তখন এটি প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আপনার যদি এমন কোনো অবস্থা হয় তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে সেটি ক্যান্সার নাকি ক্যান্সার নয়। তবে ধরনের অবস্থার পর ডিপ্রেশন বা হতাশার চিকিৎসা অবশ্যই করিয়ে নিতে হবে। আপনি যদি ডিপ্রেশন বা হতাশায় ভোগেন তাহলে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। শিশুদের সাথে সময় কাটান। কারণ শিশুরা সহজ সরল থাকে। তাদের নিষ্পাপ হাসি আপনাকে অনেকটা সুস্থ করে তুলবে। আপনাকে ভাবতে শিখাবে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। কিন্তু কিছু মানুষ এত কুৎসিত যে তাদের জন্য হয়তোবা আপনাকে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হচ্ছে।
যখন বদহজম সনাক্তযোগ্য কারণ ছাড়া দেখা যায় যেমন ফ্যাটি খাবার, গর্ভাবস্থা তখন অবশ্যই বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। বর্ণনাতীত এবং অনবরত বদহজম খাদ্যনালী, পাকস্থলী অথবা গলার ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। তাই সব সময় বদহজমকে অবহেলা করা যাবে না।
মুখের অভ্যন্তরে সাদা প্যাচ বা দাগের মত দেখা গেলে অথবা জিহ্বার উপর সাদা স্পট দেখা দিলে তা লিউকোপ্লাকিয়ার মত ক্যান্সারপূর্ব অবস্থার লক্ষণ হতে পারে আবার অন্য কারণেও হতে পারে। বায়োপসির পর হতে পারে আবার পরীক্ষা করা ছাড়াও রোগ নির্ণয় করা যায়। লিউকোপ্লাকিয়া থেকে ওরাল ক্যান্সার হতে পারে। মুখে এধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বর্ণনাতীত ব্যথা ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। অধিকাংশ সময় এক্ষেত্রে ক্যান্সার হয় না। কিন্তু ব্যথা যদি অনবরত চলতেই থাকে আর ব্যথার জানা কোনো কারণ না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন কেন ব্যথা হচ্ছে। ব্যথা আল্লাহর অশেষ দান। ব্যথার মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি আমাদের শরীরের কোনো একটি অংশ অসুস্থ। তাই ব্যথা হলে অবশ্যই তা গুরুত্বের সাথে নিবেন।
লসিকা গ্রন্থি বা লিম্ফনোড বড় হয়ে যাওয়া অথবা বগলের নিচে লিম্ফনোডে লাম্প বা চাকা ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। যদি লাম্প বা চাকা বড় হতে থাকে এবং এক মাসেরও বেশি অবস্থান করে তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এটি সংক্রমণের কারণে হতে পারে আবার ক্যান্সারের কারণেও হতে পারে।
ঠাণ্ডাজনিত জ¦র অথবা ভাইরাসের কারণে জ¦র ছাড়াও জ¦র যখন ব্যাখ্যাতীত তখন তা ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। কিছু ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমার কারণে জ¦র আসতে পারে। যখন একটি ক্যান্সার উৎপত্তি স্থল থেকে শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে যা ডাক্তারি ভাষায় মেটাসটেসিস নামে পরিচিত সেক্ষেত্রেও জ¦র আসতে পারে। এ সময় আপনার ত্বক বা চোখ হলুদ হলে অথবা পায়খানার রঙ পরিবর্তিত হলে ডাক্তারকে জানাতে হবে। আপনার যদি ব্যাখ্যাতীত জ¦র থাকে তাহলে বুকের এক্সরে, সিটি স্ক্যান অথবা এম.আর.আই প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষাও প্রয়োজন।
ক্লান্তি অনেক অসুখের লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু অনেক সময় ক্লান্তি কিছু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে যেমন লিউকেমিয়া অথবা কিছু কোলন এবং পাকস্থলির ক্যান্সার। যদি আপনি ব্যাখ্যাতীত ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন আর তেমন কোনো কারণ খুঁজে না পান তাহলে দ্রুত আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
যদি আপনার ঠাণ্ডা, এলার্জি বা ফ্লু না থাকে কিন্তু লম্বা সময় ধরে কাশি থাকে এবং সেটি তিন থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে বিশেষ করে আপনি যদি ধুমপান না করেন। এধরনের ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং শ^াসনালীর রোগসহ ক্যান্সারও হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
অতএব উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। লক্ষণগুলো সবক্ষেত্রে ক্যান্সার না হলেও কোনো না কোনো সিস্টেমিক রোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে মুখের ক্যান্সারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে রোগীকে শতভাগ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন