মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

সিলেট ও তরপ বিজয়ী সিপাহসালার শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দীন রহ.

পীরজাদা সৈয়দ মো. আহসান | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দিল্লীর সম্রাট সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী ও বাংলার শাসনকর্তা সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ’র শাসনামলে ১৩০৩ ঈসায়ি ও হিজরী ৭০৩ সনের শেষের দিকে সিলেটের গৌর রাজ্যের প্রতাপশালী রাজা ছিলেন গোবিন্দ। গৌড় রাজ্যের রাজা বলেই প্রজারা তাকে গৌড় গোবিন্দ বলে ডাকত।

মুসলীম বিদ্বেষী অত্যাচারী রাজা হিসাবে তার কুখ্যাতি ছিল। তখন মুসলমানেরা গৌড় রাজ্যে সম্পুর্ন নিরাপত্বাহিনতায় কালাতিপাত করত। সামান্য অজুহাতেই যখন-তখন নেমে আসত তাদের উপর জুলুমের খড়গ। মুসলমানদের উপর অত্যাচার জুলুমের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর খবর বাদশাহের দরবারেও পৌঁছায়। বাদশাহ তার ভাগিনা সিকান্দার শাহ গাজিকে সেনাপ্রধান করে সৈন্যবাহিনী প্রেরন করেন গৌড় রাজ্য বিজয়ের জন্য। শাহী সৈন্য যখন ব্রহ্মপুত্র নদী পার হতে চেষ্টা করে,তখনই রাজা গৌর গোবিন্দ যাদুর বলে মুসলিম সৈন্য বাহিনীর উপর অগ্নিবান নিক্ষেপ করে মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়। সিকান্দার গাজীর নেতৃত্বে প্রেরিত সৈন্যরা গৌর গোবিন্দের অগ্নিবান ও ঐন্দ্রজালিক যাদু বিদ্যার কাছে বার বার পরাজিত হচ্ছেন এই সংবাদ দিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজীর কাছে পৌঁছালে সম্রাট খুবই ব্যথিত হন।
শত বাধা বিপত্তি সত্বেও হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের রাজ্যে বসবাস করেও মুসলমানেরা নিজেদের ঈমান-বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি আস্তা স্থাপনে বা ধর্ম পালনে বিরত হননি তারা। তাদেরই মাঝে একজন ছিলেন শেখ বুরহান উদ্দীন। সিলেট শহরের উপকন্ঠে সুরমা নদীর তীরে রাজা গৌড় গোবিন্দের পূজা মন্ডপের অদুরেই তার বাসস্থান ছিল। বুরহান উদ্দীন তার নবজাতক সন্তান শেখ গুলজার আলমের আকিকা উপলক্ষ্যে গরু জবেহ করেছিলেন। গোস্ত বানানোর সময়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে একটি চিল এক টুকরো গোস্ত ছু মেরে নিয়ে উড়ে যায় , কয়েকটি চিল উরন্ত অবস্থায় গোস্ত নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করলে টুকরোটি চিলের মুখ থেকে নিচে পড়ে যায়। নিচে রাজা গৌড় গোবিন্দের পূজা মন্ডপ ও মন্দির। সাথে সাথে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায় এ গো মাংস কোথা থেকে এল! খোজা খুজি শুরু হয়ে যায়। অনেক খোজা খোজির পর জানা যায় শেখ বোরহান উদ্দীন এর বাড়ীতে তার ছেলের আকিকা উপলক্ষ্যে গো জবাই করা হয়েছে।
রাজা গৌড় গোবিন্দের রাজত্বে গো জবাই করার অপরাধে রাজা তাকে শাস্তি দিলেন । হুকুম হল শেখ বোরহান উদ্দীনের হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলার এবং নবজাতক শিশুকে তলওয়ারের আঘাতে দু টুকরো করে দেয়ার, সাথে সাথে হুকুম কার্যকর করা হল। সংবাদ জানতে পেরে বুরহান উদ্দীনের স্ত্রী সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নবজাতক শিশু গুলজার আলমের ও তার মায়ের মাজার রয়েছে সিলেট শহরের উপকণ্ঠে বুরহানাবাদে। শিশু শহীদ গুলজার আলমই সিলেট বিজয়ের প্রথম শহীদ। তার শহীদ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ব্যথিত বুরহান উদ্দীন প্রথমে ব্রঙ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থানরত দিল্লীর বাদশাহের ভাগিনা সিকান্দার শাহ গাজীর নিকট গৌড় গোবিন্দ কর্তৃক অত্যাচারের প্রতিকারের ব্যবস্থা প্রার্থনা করেন, তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন আমি দুবার তার সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছি, সে বড় ধুর্ত ও শক্তিশালী আপনি এই বিচারের জন্য দিল্লীর বাদশাহর নিকট ঘটনা অবহিত করে বিচার প্রার্থনা করুন। অবশেষে শুকাতুর বুরহান উদ্দীন ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের জ্বালাকে উপশম করার জন্য আজীবন একান্তভাবে ধর্মীয় জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং পথিমধ্যে দিল্লীর বাদশাহ আলাউদ্দীন খিলজীর নিকট পাপিষ্ট গৌড় গোবিন্দের অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।আদ্যপান্ত ঘটনা শুনে বাদশাহ খুবই ব্যাথিত হলেন।
বাদশাহ চিন্তিত হয়ে রাজপরিষদের সভা আয়োজন করলেন, একজন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ পরামর্শে বললেন, হিন্দু সাধু সন্নাসীদের যাদু টোনা, বান, তন্ত্র, মন্ত্র ধ্বংস করার জন্য পারদর্শী একজন সেনাপতি নিয়োগ প্রদান করলেই এর থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব। পরবর্তিতে বাদশাহ দিল্লীতে হযরত খাজা নিজাম উদ্দীনের দরবারে গমন করলেন (তিনি বাদশার পীর ছিলেন) এবং আলেম ওলামাদের নিয়ে এক পরামর্শ সভা ডাকলেন। পরামর্শ সভায় সুলতান এই মর্মে অবহিত হলেন যে,আপনার সৈন্যবাহীনিতেই একজন আউলাদে রাসূল কামেল ওলী আছেন যার দ্বারা হিন্দু সাধু সন্নাসীদের সকল প্রকার তন্ত্র-মন্ত্র উড়িয়ে দেয়া সম্ভব। একথা শোনে সুলতানের আশা-নিরাশার দোদুল্যমানতা কেটে গেল। পরামর্শ সভায় তারা বললেন, জাঁহাপনা আগামীকাল সন্ধায় আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে ভয়ঙ্কর ঝড় সৃষ্টি হবে আপনি সেনা বিভাগের প্রত্যেক সেনাপতিকে বলে দেন তারা যেন সেই ঝড়ের সময় নিজ নিজ শিবিরের মধ্যে প্রদীপ জ্বালীয়ে রাখেন। সেই প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে কোন সেনাপতির শিবিরই জলন্ত প্রদীপ থাকবে না, কিন্তু একজন সেনাপতির প্রদীপ জলন্ত অবস্থায় থাকবে, তিনিই সেই ব্যাক্তি যার দ্বারা এই দুঃসাধ্য কাজ সম্ভব। পর দিন সন্ধায় ভীষন ঝড় বৃষ্টি হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammad Salim ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৩:২২ পিএম says : 0
Sah sayad Nasir uddin (Rah:)mazar sylhat kon alajai?Janale khosi hobo.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন