রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

 সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বাজারে মূল্য বেশি হওয়ায় কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহ অভিযানে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। জেলায় প্রতি বছর চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হলেও এবছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং সরেজমিনে জেলার দুটি খাদ্য গুদামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে কুষ্টিয়াসহ সারাদেশে মিল মালিকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে একযোগে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। এবছর কুষ্টিয়া জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়ই চাল সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ৩৭ হাজার ৪৯৪ টন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে এ বছর চাল সংগ্রহ অভিযানের জন্য জেলার ৪৬৯ মিল মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করা হয়। প্রতি কেজি চালের সরকারি দর নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। কিন্তু চাল সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চালের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সংগ্রহ অভিযানে ধীরগতি দেখা দেয়। খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পরও মিলারদের মধ্যে চাল সরবরাহে অনীহা দেখা যায়। আগামী ৩১ আগস্ট চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জেলার বড়বাজার এবং জগতি খাদ্য গুদামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বড়বাজার খাদ্য গুদামে ১৮ হাজার ৯০০ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ করা গেছে ১৫ হাজার ৮০০ টন। আর জগতি খাদ্য গুদামে ১৮ হাজার ৫৯৪ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ টন। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে কুষ্টিয়া জেলায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়ে আসছে। কিন্তু এবছর কোনোভাবেই শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই সংগ্রহ অভিযানে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দফায় দফায় তাগাদা দেওয়া স্বত্ত্বেও মিলাররা কোনোভাবেই চাল সরবরাহ করছেন না। ৪৬৯ জন মিল মালিকের মধ্যে ২৫টি মিল মালিক একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ অটোমেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, মিলগেটে বর্তমানে স্বর্ণা মোটা চাল ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এই চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে বর্তমানে ধানের দামও বেশ চড়া। বাজারে মোটা ধান ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে গুদামে চাল দিলে লোকসান হবে দেখে মিলাররা চাল সরবরাহ করতে চাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিত ছিল দাম সমন্বয় করা। তাহলে মিলারদের এত লোকসানের মুখে পড়তে হতো না।
চাল সংগ্রহ অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দামও বেড়ে গেছে। যে কারণে মিলাররা লোকসান হওয়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সংগ্রহ অভিযানের গতি কমে গেছে। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও এরই মধ্যেই ৮০ ভাগ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, যেসব মিলাররা চাল সরবরাহ থেকে বিরত থাকবে তাদের মোট বরাদ্দের যে দুই শতাংশ হারে সিডি জামানত রয়েছে তা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হবে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে দুই থেকে চার মৌসুমের জন্য বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন