রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকরে জরিপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৪ পিএম

ঢাকা শহরের গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর প্রয়োগে অবদান রাখতে, Effective enforcement of smoke-free provision in Public transport in Dhaka City-শীর্ষক ২ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডেভেলপমেন্ট এক্টিভিটিজ অব সোসাইটি (DAS)। ২বছরের প্রোগ্রাম শেষে প্রকল্পের অর্জন ও অগ্রগতি জানার জন্য একটি কমপ্লায়েন্স মনিটরিং জরিপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে, গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালগুলোর ঐ সময়কার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারনা নিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০২০ সালে একটি বেসলাইন স্টাডিও করা হয়েছিল।

শনিবার (২৭ আগস্ট) ভার্চুয়ালি জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠোনে বলা হয়, কমপ্লায়েন্স মনিটরিং জরিপের তথ্য সংগ্রহকালীন সময় সার্ভেয়াররা লক্ষ্য করেছে, ৩৯% মানুষ গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালে প্রকাশ্যে ধূমপান করছে, দুই বছর পূর্বে যা ছিলো প্রায় দ্বিগুন (৭৬%)। সাধারন যাত্রীদের উপর সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩৫% (বেসলাইন ৫২%) বাস যাত্রী টার্মিনালের ভিতরে এবং চলন্ত বাসের ভিতরে ধূমপান করতে দেখেছেন। আশার বিষয় হলো, বেশীর ভাগ গণপরিবহন যাত্রী তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ (৯২%) (বেসলাইন ৮৯%) এবং পরোক্ষ (৭৫%) (বেসলাইন ৭৩%) ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত।

পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও অন্যান্যদের মধ্যে ৫৭% (বেসলাইন ৬৬%) বাসের ভিতর বা তাদের কর্ম এলাকায় ধুমপানের শিকার হয়েছেন। এরা প্রায় সকলেই (৯৭%) তামাক ও তামাকজাত পন্য গ্রহনের প্রত্যক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে ধারনা রাখেন এবং একটা বড় অংশ (৬৭%) (বেসলাইন ৫৫%) পরোক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে জানেন। এবং অর্ধেকের বেশি তথ্য প্রদানকারী তামাক নিয়ন্ত্রন আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন (৫৮%) (বেসলাইন ৫৫%) যাদের অর্ধেকেই (৫১%) সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রকাশনা বা রেডিও টিভির প্রচার থেকে জেনেছেন। বাকীদের ৪১% জেনেছেন সামাজিক মাধ্যম ও সচেতনতামুলক প্রোগ্রামগুলো থেকে।

তথ্য সরবরাহকারীগন প্রত্যক্ষ করেছেন মোট গণপরিবহনের ৫২% ধুমপানমুক্ত, বেসলাইনে যা ছিলো ৩৪% । সমীক্ষায় জানা গেছে ৪৪% যাত্রী, ৩০% বাস চালক এবং ২৬% বাসের হেল্পার/কন্ডাক্টর বাসের ভিতরে বা টার্মিনালগুলোতে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন করে থাকে। তবে, যেকোনরকম গণপরিবহনে ধূমপান করলে ৬১% (বেসলাইন ৩৪%) সাধারন যাত্রী সরাসরি তার প্রতিবাদ করে থাকেন।

বেসলাইন ও কমপ্লাইয়েন্স উভয় রিপোর্টে বাস যাত্রীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ৫৮% গণপরিবহনে তামাকমুক্ত সাইনেজ অনুপস্থিত। কিন্তু সমীক্ষা চলাকালীন ৭০% (বেসলাইন ৬৩%) বাসে তামাকমুক্ত সাইনেজ দেখা গেছে যার ২৯% (বেসলাইন ৬২%) ছিলো অস্পষ্ট বা দূর্বোধ্য।

সাধারন যাত্রীদের ৮৩% গণপরিবহনে ধূমপানের উপর আইনগত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানেন। কমপ্লায়েন্স স্টাডি চলাকালীন ৭৭% সাধারন যাত্রীরা মতামত দিয়েছেন যে, বর্তমান ব্যবস্থাপনায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপানের পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। আবার পরিবহন কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের ৮৮% পূর্বের তুলনায় ইতিবাচকভাবে পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন।

বিআরটিএ, এলজিআই, সিটি কর্পোরেশন, ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ও গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের সাথে জরিপে জানা গেছে, তাদের ৭% (বেসলাইন ৩৩%) তাদের অফিসে বা কর্ম এলাকায় গ্রাহক বা অতিথিদের কেউ ধূমপান করলে তারা সাধারনত নিষেধ করেন না। কর্মকর্তাদের শতভাগ তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ২০০৫ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু, বর্তমান আইনের বাস্তবায়ন সঠিক পথেই আগাচ্ছে, এরকম মন্তব্যের সাথে তাদের মাত্র ১৩% একমত। একটা বড় অংশ ৭৩% মনে করে এই আইনে অনেক দুর্বল দিক বিদ্যমান এবং ৬০% কর্মকর্তা মনে করেন সামগ্রিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের বাস্তবায়ন করতে হলে এই আইনের আরও পরিমার্জন করা দরকার।

উপরোল্লিখিত তথ্য, বেসলাইন জরিপ ও কমপ্লায়েন্স মনিটরিং এর তুলনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারী সংস্থা গুলোর পাশাপাশি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ফলে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার অনেকাংশে কমলেও এখনও সাধারন যাত্রী, ট্রান্সপোর্ট কর্মচারী এবং শ্রমিকদের অনেকেই প্রকাশ্যে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন করছে।

আবার সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিবহনকর্মীসহ সাধারন যাত্রীদের বেশীর ভাগ তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ২০০৫ সম্পর্কে অবহিত থাকলেও, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক সেবনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ও সচেতনতা এখন পর্যন্ত আশানুরুপ অবস্থানে যায়নি। তাছাড়া, বিদ্যমান আইন প্রয়োগে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় প্রত্যাশিত ফলাফল নিশ্চিত হচ্ছে না।

তাই, গণপরিবহন ব্যবহারকারী সাধারন যাত্রী, গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্তরিক অনুশীলনের জন্য আরও জোরালোভাবে ধূমপান বিরোধী কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া দরকার। একই সাথে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সীমাবদ্ধতাগুলোর সমাধান করা জরুরী।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন