অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে পদ্মকে জলজ ফুলের রাণী বলা হয়। এ বিলের রাশি রাশি প্রস্ফুটিত পদ্মফুল দর্শনার্থীদের মধ্যে আভা ছাড়াচ্ছে। দল বেঁধে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে পদ্মবিলে। কেউ কেউ তুলে নিচ্ছে দু-একটা পদ্ম। পদ্ম বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ছুটে আসছে প্রকৃতি প্রেমীরা। আর এ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটছে দর্শনার্থীরা। তবে বিলে যাতায়াত ও নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে তাদের। এমন পদ্মফুলের দেখা মেলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়ায়। প্রতিবছরই প্রকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এখানকার পদ্মফুল দর্শনার্থীদের হাতছানি দেয়।
রাজবাড়ী থেকে আসা দর্শনার্থী মাহাবুব হোসেন বলেন, এই বিল সাধারণত স্থানীয়দের কাছে বুড়োর বিল নামেই পরিচিত। এই বিলে প্রতিবছর অসংখ্য পদ্ম ফুল ফোটে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। আমি এই বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। তবে বিলে ঘুরবাড় মতো কোন নৌকার ব্যবস্থা নেই। নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতো। পাশাপাশি স্থানীয়রা নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারতো।
আরেক দর্শনার্থী শারমিন আক্তার জানায়, তিনি তার এক আত্মীয়'র বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তার বাড়ি কুমারখালীতে। গত কয়েক বছর আগে এই বিলে পদ্ম ফুল দেখার পর থেকে তিনি প্রতিবছর বর্ষার সময় এই বিলে আসার জন্য চেষ্টা করেন। গত বছর আসতে পারেন নাই তাই এবার এসেছেন। এ বিলের সৌন্দর্য দেখার মতো। এখানে ঘুরতে আসলে মন ভালো হয়ে যায়।
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা আলআমিন শেখ বলেন, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে। তবে এখানে আসার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালোনা। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা শুকুমার রায় বলেন, আমি জন্মের পর থেকেই এই বিলে পদ্ম ফোটা দেখছি। এটাকে বুড়োর বিল বলে, আমরা বলি পদ্ম বিল। এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে, ছবি তোলে। সকাল বিকাল পদ্ম ফুল দেখে অনেক ভালো লাগে আমাদের।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল্লাহীল হাসান বলেন, পদ্মফুল একটি জলজ উদ্ভিদ। ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত তিন ধরনের পদ্ম ফুল দেখতে পাই লাল পদ্ম, শ্বেত পদ্ম ও নীল পদ্ম। নীল পদ্ম দেখা যায় না বললেই চলে। সাধারণত নীল পদ্ম আমরা গল্প উপন্যাসে পেয়ে থাকি। একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেতো । কিন্তু বর্তমান সময় বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্ম ফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। পদ্মফুল আমাদের জন্য অনেক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ওষুধীগুণসহ নানা ভাবে গুরুত্ব বহন করে।
তিনি আরও বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার বুড়োর বিলে যে পদ্ম ফুল ফুটেছে এটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো যারা দর্শনার্থী যাবেন তারা দয়া করে এই ফুল গুলো ছিড়বেন না, নষ্ট করবেন না। প্রকৃত পক্ষে আমরা যদি প্রকৃতিকে ভালবাসি এবং প্রকৃতির প্রেমে যদি নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই তাহলে এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা নষ্ট করবো না।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়া পদ্ম বিলে গত দুই বছর ধরে শত শত পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু সম্প্রতি ফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে সেহেতু এখন পর্যন্ত পদ্ম ফুল সংরক্ষণের জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়নি। তবে ভবিৎষতে কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা যায় কিনা সেটা বিবেচনাধীন আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন