অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বিরোধিতার পরও জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন শুনতেও পায় না, দেখতেও পায় না। মনে হয় তারা অন্ধ, কালা। না হলে সবার বিরোধিতার পরও তারা কেন, কি উদ্দেশ্যে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় তা বোধগম্য হয়।’
রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের উপযোগিতা, কারিগরি দিক পর্যালোচনা ও নির্বাচনে এর প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বলেন, এটি দুর্বল যন্ত্র। কারণ তাৎক্ষণিক ফলাফল জানা যায় না। আর নির্বাচন কমিশনের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা একটা বড় বিষয়।
ইসির সংশ্লিষ্টরা পদে পদে ইভিএম দিয়ে কারসাজি করতে পারে বলেও দাবি করেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, ইভিএমের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনারের ওপর আস্থাশীলতার ওপর। কমিশনের ওপর আস্থা কতটুকু আছে তা সবাই জানেন।
সুজন সম্পাদক বলেন, ইভিএম দিয়ে নির্বাচন হলে কমিশন চাইলে এক দলকে ১৪০ আসনে বিজয়ী করে দিতে পারবে। কাউকে একটা, নির্দলীয়দের কয়েকটা আসনে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারবে। কুমিল্লার ভোটের মতো ঘোষণা করে দেবে কিন্তু কিছু বলার সুযোগ থাকবে না।
ব্যালটের ভোটে শতভাগেরও বেশি ভোট পড়ার ঘটনা আছে। আবার ইভিএমে ভোট কম কাস্টিং হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সুজন কোনটাকে বেশি ভালো মনে করে- এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সম্পাদক বলেন, কোনোটাই ভালো না। সবকিছু ঠিকঠাক না করতে পারলে তার দায় ইসির। কারণ ইসি সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে বিচারপতিদের মতো সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
বেশি আসনে ইভিএমে ভোট হওয়ার কারণেই কী সুজন বিরোধিতা করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি দুর্বল যন্ত্র। ইভিএমকে প্রশ্নাতীতভাবে বিশ্বাসযোগ্য করার আগে আমরা এর বিপক্ষে। গত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। আমরা মনে করি নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে করার জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা ইভিএম।
ইসি তাহলে কার স্বার্থে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করে সুজন- এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন কেন, কার জন্য ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারও চাপ আছে কিনা তাও আমরা জানি না।
এসময় সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ বলেন, আমি একজন সাবেক সচিব হিসেবে প্রশাসনিক কাজ করলেও নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে অংশ নিয়েছি। নতুন ইসির সঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সংলাপেও আমি অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে সবাই মিলে ঐক্যমত হয়েছিলাম যদি সব পক্ষ ইভিএমে ভোট করতে রাজি না হয় তাহলে এটায় ভোট হবে না। কিন্তু পরে দেখলাম হঠাৎ গুটি উল্টে গেল। কেন এমন সিদ্ধান্ত হলো বুঝি না।
সুজনের অনুষ্ঠানে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব নামের একজন প্রযুক্তিবিদ প্রেজেনশনের মাধ্যমে ইভিএমের কারিগরি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এতে তিনি এখনও নিখুঁত জাতীয় পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক তথ্যশালা তৈরি না হওয়া, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সব বুথের মাস্টার ডাটাবেজ না থাকা, ইভিএম হ্যাং করা যায় বলে তথ্য দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন