সারা দেশের ন্যায় কুলাউড়ায় চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে উপজেলার ২২টি চা- বাগানে কয়েক লক্ষ কেজি গ্রীনলিফ চা পাতা বিনিষ্ট হয়ে গেছে। আন্দোলন শুরুর আগে শ্রমিকরা এই পাতাগুলো বাগান থেকে উত্তোলন করে ফ্যাক্টরিতে এনে মজুদ করে রেখেছিল। পরে আন্দোলন শুরু হয়ে যাওয়ায় পাতাগুলো আর প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি। ফলে এসব বাগানে কয়েক কোটি টাকার গ্রীনলিফ চা পাতা ফ্যাক্টরিতে থেকে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় পাশাপাশি বাগানে থাকা চা-গাছের নতুন কুঁড়ি সপ্তাহ পর পর উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও গত ১৫-২০ দিন থেকে চলমান আন্দোলন থাকায় সেই চা পাতার কুঁড়িগুলো উত্তোলন না করায় সেগুলোও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। (২৭ আগষ্ট) শনিবার প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা হাজিরা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়ায় গতকাল রোববার থেকে শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও পঁচে যাওয়া ওই গ্রীনলিফ চা পাতা গুলো আর কোন কাজে আসবে না। যা চা- শিল্পের জন্য বড় ধরনের মহাবিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ২২টি চা বাগানে চলতি মাসের ১৫-২০দিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছিলো চা কারখানাগুলো। শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে এর আগে বাগানের ভেতর আন্দোলন করলেও এবার তারা প্রথম রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করে বিরামহীন আন্দোলন করে। শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা চা কারখানার মেশিনগুলো বন্ধ থাকায় প্রতিটি বাগানে যেনো সুনসান নিরবতা বিরাজ করেছিলো এতোদিন। ডানকান ব্রাদার্স এর মালিকানাধীন লংলা-হিঙ্গাজিয়া চা-বাগানের শ্রমিকদের উত্তোলিত প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কেজি, লোহাইউনি-হলিছড়া চা-বাগানে প্রায় ১৫ হাজার কেজি, হাজি নগর চা-বাগানে প্রায় ১৩ হাজার কেজি, এবং অন্যান্য বাগান সহ কয়েক লক্ষ কেজি গ্রীণ লিফ চা পাতা শেড ঘরে পঁচন ধরে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে বলে বাগান কতৃপক্ষরা জানায়।
চা শ্রমিক নেতা হিঙ্গাজিয়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জামাল মিয়া বলেন,গত ১৫-২০ দিন থেকে উপজেলার সকল চা-বাগানে শ্রমিকদের আন্দোলন সফল হয়েছে। প্রধান মন্ত্রী ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা মজুরী নির্ধারন করে আমাদের দাবী মেনে নেওয়ায় আমরা আপাততো আন্দোলন স্থগিত করেছি। রোববার থেকে সবাই কাজে যোগদান করেছে। সামনে শারদীয় দূর্গোৎসব শ্রমিকদের অনেক টাকার প্রয়োজন রয়েছে। দু:সময়ে শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে প্রধান মন্ত্রী এই উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
ইস্পাহানি গাজিপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক জয়ন্ত ধর জানান, শ্রমিকদের আন্দোলন শুরুর আগে বাগানের শেড ঘরে উত্তোলন করে রাখা গ্রীণলিফ পাতা পক্রিয়াজাত না হওয়ায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে উঠা বাগান কতৃপক্ষের জন্য দুষ্কর হবে।
দিলদারপুর-ক্লিভডন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মিজান হাসিব বলেন,শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালে চা-বাগানের টিলা থেকে গত ১৫-২০ দিন থেকে কোনো পাতা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। বাগানে নিয়ম রয়েছে প্রতি সাত দিন পর পর চা গাছ থেকে কুঁড়ি উত্তোলন করার। কিন্তু তা না করায় সেই চা গাছগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে। এখন সেই গাছগুলো নতুন করে কাটিং দিয়ে পরিচর্যা করে তিনমাস পর নতুন কুঁড়ি উত্তোলন করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন