রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সৈয়দপুরে ৫ দিন ধরে সংখ্যালঘু তিন পরিবারের ১৫ সদস্যের খোঁজ মিলছে না

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:২২ পিএম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে গত পাঁচ দিন যাবৎ তিন সংখ্যালঘু পরিবারের খোঁজ মিলছে না। বর্তমানে ওই পরিবারগুলোর বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। বিপুল পরিমাণ টাকার ঋণের চাপে তারা রাতের আঁধারে ঘর-বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন ধারণা করছেন গ্রামবাসী। উপজেলার চার নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। শিশু ও নারীসহ ১৫ সদস্যের পরিবারের লাপাত্তার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চার নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ার মৃত. গণেশ চন্দ্র সূত্রধরের তিন ছেলে কমল চন্দ্র সূত্রধর (৫৮), পরিমল চন্দ্র সূত্রধর (৫৫) ও নির্মল চন্দ্র সূত্রধর (৪৯)। এদের মধ্যে বড় ভাই কমল পেশায় একজন দিনমজুর। মেঝো ভাই পরিমল হোটেল এবং ছোট ভাই নির্মল ধান, গমের পাইকারী ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ির পাশে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন পোড়ারহাটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বড় ভাই দিনমজুর কমল ছোট দুই ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরিমল ও নির্মল তাদের ব্যবসার প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে দফা দফায় ঋণ ও ধানদেনা করেন। এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে তারা ব্যাপক ঋণী হয়ে পড়েন। বর্তমানে ঋণের টাকা পরিশোধে ওই সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন ও তাগাদা দেন।

এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতে ওই তিন সংখ্যা লঘু পরিবার নিজ নিজ বাড়িঘরে তালা ঝুলিয়া পরিজন নিয়ে উধাও হয়। সেই থেকে ওই পরিবারগুলোর কোন সদস্যের দেখা মিলছে না। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো বন্ধ রয়েছে।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে কথা হয় প্রতিবেশী গৃহবধূ গীতা রায় সূত্রধরের সঙ্গে তিনি বলেন, সম্পর্কে তারা আমার ভাতিজা লাগে। গত মঙ্গলবার দিনের বেলায় ওই তিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা ও কথাবার্তা হয়েছে আমার। কিন্তু পরদিন গত বুধবার সকালে তাদের বাড়ির তালাবদ্ধ দেখতে পাই। তিনি বলেন, শুনেছি তারা এনজিওসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেক ঋণ ও ধারদেনা করেছে। হয়তো তারা পাওনাদারের চাপে রাতের বেলা কোন এক সময় বাড়িঘরে তালা ঝুলিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই তিন পরিবারের ঋণ ও ধার দেনার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে সেখানে হাজির হন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নীলফামারী সদরের কাজিরহাট শাখার ম্যানেজার আইয়ুব আলী সহ কয়েকজন মাঠ কর্মী। ম্যানেজার জানান, ধান গমের পাইকারী ব্যবসায়ী নির্মল চন্দ্র সূত্রধর তাদের সংস্থা থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার মাসিক কিস্তি ৩৮ হাজার টাকার মতো। গত বৃহস্পতিবার মাসিক কিস্তি প্রদানের দিনক্ষণ ছিল। ওই দিন কিস্তি আদায় করতে এসে সংস্থার মাঠকর্মী তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাড়িতে পাননি। শুনেছি তিনিসহ তাঁর দুই ভাই বাড়িঘর ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন। বিষয়টি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অব্যহত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বড় ভাই কমলের টিনসেট এবং পরিমল ও নির্মলের পাকা বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ওই গ্রামের যুবক রাব্বী ইসলাম বলেন, তারা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালানোর খবর পেয়ে প্রতিদিনই এনজিও কর্মকর্তা-কর্মীসহ বিভিন্ন পাওনাদাররা তাদের খোঁজে বাড়িতে আসছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন এনজিও’র কর্মকর্তা-কর্মীর সংখ্যাই বেশি। তিনি আরো জানান, এদের শুধুমাত্র পাকা বাড়িসহ ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন সহায় সম্পদ নেই।

উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান জুন এর সঙ্গে রোববার (২৮ আগস্ট) তার পরিষদ কার্যালয়ে কথা হয়। তিনি জানান, আমি তিন সংখ্যালঘু পরিবার বাড়ি-ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি শুনেছি। তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গতকাল শনিবার বিষয়টি আমি সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামকে মুঠোফোনে অবহিত করেছি। তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি আমাকে অবগত করেছেন। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম হুসাইন বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন