শাসক নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই ভূখন্ডে প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকেই নেতৃত্ব ছিল, গোত্র প্রধান ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা সকলেই শাসক হতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রথম একজন নেতা যিনি শাসক নয়, বাঙালির মুক্তি চাইলেন। এদেশের হাজার বছরের গ্লানি, নির্যাতন, নিপীড়ন, নিগ্রহের মধ্যে থেকে মুক্তির গান গাইলেন।’
রোববার (২৮ আগস্ট) গাজীপুরের টঙ্গীর টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর মহান আত্মত্যাগ বনাম ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন ভিসি।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘কেন বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। অন্যদের মধ্যে কী ছিল না, যেটা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। ধরুন বাঙালির হাজার বছরের পালা বদলে অনেক নেতার জন্ম হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ হাজার বছর আগে এখানে মানুষের বসতি ছিল। মেসোপটেমিয়, গ্রিক, সুমেরীয় সভ্যতার সময়েও এই অঞ্চলে মানুষ বসবাস করতো। আমরা এখন যেমন সার্বভৌম রাষ্ট্রকাঠামোয় বসবাস করছি-এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা তখন ছিল না। একসময় মানুষ যাযাবর ছিল। এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়াতো। কারণ তাদের খাবার ছিল না। খাদ্য সংগ্রহ করতে হতো। যখন মানুষের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হলো। তখন থেকে তারা সমষ্টিগতভাবে বসবাস শুরু করলো। তারা সব সময়ই অন্যের দ্বারা শাষিত ছিল। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান আমল-সব পর্যায়েই নেতা ছিলেন। কিন্তু তারা শ্রেষ্ঠ হতে পারনেনি। কারণ তারা সবসময় শাসন করতে চেয়েছেন, শোষক ছিলেন, কর্তৃত্ব চেয়েছেন, ক্ষমতা চেয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনি বলেছেন পৃথিবী আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। তিনি পৃথিবীকে বদলে দিতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। এটি ছিল পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক নতুন অর্থনৈতিক মডেল। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানে পরিণত হয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর ব্যতিক্রমী বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ভিসি ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে যেসব শাসকের অধীনে ছিলাম তারা কেউ আমাদের মুক্ত করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রথম অনুধাবন করলেন বাঙালির জন্য একটি পৃথক ভূখন্ড প্রয়োজন। যেখানে একই ভাষা, সংস্কৃতির মানুষ মুক্ত মানব হিসেবে বসবাস করবে। বঙ্গবন্ধু ধনিক শ্রেণির জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে চাননি। তিনি চেয়েছেন সবাই মিলেমিশে একটি সমতার সমাজ গঠন করবে। যেখানে কেউ শোষক হবে না। কেউ শোষিত হবে না। যেখানে সবাই একই অর্থনৈতিক কাঠামোয় মুক্তির মধ্যে আসবে। বঙ্গবন্ধু গ্রামে, গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, হিন্দু, বৈদ্য, খ্রিস্টান, মুসলিম সকলের সঙ্গে মিশে দেখলেন সবার মধ্যে মুক্তির আকাক্সক্ষা। তখনই তিনি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকাঠামোর স্বপ্ন দেখলেন। একারণেই তিনি সবার থেকে ব্যতিক্রম।’
টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান হাবীব তপাদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টেশিসের মহাব্যবস্থাপক আবু সাঈদ, টেশিসের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান মোল্লা প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন