কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বিকেলে উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের শংকরদিয়া বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের উপস্থিতিতেই নেতা–কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে শোকসভার আয়োজন করে দলটি। আজ পূর্বনির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নে শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভার প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক লাল্টু রহমান তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মিছিল সহকারে সভায় যোগ দিতে আসেন। লাল্টুর অনুসারীদের হাতে কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাঁরা হঠাৎ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান দবির উদ্দিনের অনুসারীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় দবির উদ্দিনের অনুসারীরাও লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লাল্টুর অনুসারীদের প্রতিরোধ করলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনুষ্ঠানের অতিথিরা তাঁদের থামানোর চেষ্টা করলেও নেতা–কর্মীরা একে অন্যের পর হামলা করতে থাকেন। ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে আবার আলোচনা শুরু হয়।
সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, ছাত্রলীগ কর্মী শিলন ও ডাবলু আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন বলেন, বিকেলে অতিথিরা আসার পরপরই সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানের দুই হাজার মানুষের জন্য তিনি খাবার রান্না করেন। বর্তমান চেয়ারম্যান লাল্টু রহমান শতাধিক লোকজন নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। তাঁদের অনেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাঁরা আসার পরপরই সাধারণ নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করেন। কুড়াল দিয়ে নেতা–কর্মীদের কুপিয়ে জখম করা হয়।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা লাল্টু রহমান বলেন, ‘আমার লোকজনের ওপর দবিরের লোকজন হামলা চালায়। এতে ৫ থেকে ৬ জন আহত হয়েছেন। আমার তিন ভাইয়ের মাথা ফেটে গেছে। নেতাদের সামনেই হামলা করেছে। আমরা প্রতিরোধ করেছি।’
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘সভা শুরু হওয়ার পর স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে সভা শেষ করা হয়। বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আন নুন যায়েদ বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। এ ঘটনায় মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন