শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

গুম-নিখোঁজের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমর্যাদা বিপদগ্রস্ত করছে : এমএসএফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

আজ ৩০ আগষ্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছর সারাবিশ্বের দিবসটি পালন করা হয়। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আজ সারা পৃথিবীতে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের ঘটনা রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি বিপদগ্রস্ত করছে।

বিশ্বের দেশে দেশে গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘দিবস’টি গৃহীত হয় ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স এ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসএ্যাপিয়্যারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ করা হয়; সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছে সাধারণ লোকজনও।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। যার ফলে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয় এবং কাউকে গুম করে দেয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃৃতি পায়। বাংলাদেশে গুম হওয়া ইস্যুতে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। এ নিয়ে এখনো ব্যাপক হৈচৈ চলছে।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। এদের মধ্যে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীর পাশাপাশি আছে বেসামরিক লোকজনও রয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬১৪ জন নাগরিক। অবিলম্বে গুম হওয়া সব মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে। এবং দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারও দাবি করেছে তারা।

এমএসএফের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গুমের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বিশেষ করে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।

এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের নাগরিকের জীবন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধানতম দায়িত্ব। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের ঘটনা অবশ্যই সংবিধানের পরিপন্থী। বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে সেগুলোরও পরিপন্থী। গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি বিপদগ্রস্ত করছে। গুম হওয়া পরিবারগুলো, সন্তানেরা প্রতি মুহূর্তে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষ ফিরে আসবেন, গুমের একটি ঘটনাও আর ঘটবে না, সেটাই সবার কাম্য। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তা যতই গুরুতর হোক, আমরা লক্ষ করেছি, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গেছে। তাঁকে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তির আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার।

এমএসএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১ সালে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের শিকার হন ১১ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, ৪জনকে উদ্ধার হয় এবং এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৪জন। এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন ১১ জন। যার মধ্যে ৬জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ৪ জন উদ্ধার হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন একজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন