শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভবন নির্মাণের অনুমোদন সহজ ও দ্রুত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অবশেষে রাজধানী ঢাকার নতুন নগর পরিকল্পনা বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)’র গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ইতিপূর্বে ২০১০ সালে প্রথম ড্যাপের গেজেট প্রকাশিত হলেও নানাবিধ বিতর্ক ও সংশোধনের চাপে সে গেজেটের বাস্তবায়ন শুরুই করতে পারেনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আপত্তি ও সংশোধনের ধারাবাহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নতুন গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় একযুগ আগে প্রকাশিত গেজেট রহিত হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে জারি করা গেজেটের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ ২০১৬ সালের প্রস্তাবিত ২০ বছর মেয়াদী ড্যাপের সময়কাল ইতোমধ্যেই ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব, রাস্তা প্রশস্তকরণ, জলাভূমি ও পরিবেশগত নিরাপত্তাসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত রেখে নতুন গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কে দীর্ঘদিনের বন্ধ্যাত্ব কেটে গেল। নতুন ড্যাপের আওতায় রাজধানীতে নতুন ভবন নির্মাণের আবেদনের হিড়িক পড়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়। গত দুই-তিনদশকে নানাভাবে বিতর্কিত, বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য, বিশ্বমানের মেগাসিটিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে নতুন ড্যাপের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হবে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। এ ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পুরনো প্রতিবন্ধকতাগুলোকে অবশ্যই সুচিহ্নিত করে তা পরিহার করেই অগ্রসর হতে হবে।

মোঘল আমলে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা নগরী ছিল উপমহাদেশে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত শহর। চারদিকে নদীবেষ্টিত, শহরের ভেতরে অসংখ্য খাল ও জলাভূমিতে ঘেরা এক সবুজ শহরের পরিবেশবান্ধব সৌন্দর্য ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অপরূপ সমাবেশ ও সমন্বয় ঘটেছিল এই নগরীতে। ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ সালে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ প্রদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে নবরূপে সজ্জিত করার সুযোগ ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের মধ্য দিয়ে রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার তিন যুগ পর ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে ঢাকা যে নবযাত্রার সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫০ বছরেও সেই প্রাদেশিক রাজধানীর পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ১৯৬৩ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)’র আওতায় প্রণীত ঢাকার নগর পরিকল্পনার খণ্ডিত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই ঢাকা নগরী আজকের রূপ লাভ করেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও জনঘনত্বের বাস্তবতার নানা দিক বিবেচনা না করেই অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা ঢাকা শহর এখন একটি কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখলে-দূষণে বিষাক্ত-দুর্গন্ধযুক্ত নহরে পরিণত হয়েছে। ঢাকার আভ্যন্তরীণ খাল, জলাভূমিগুলো দখল ও ভরাট হয়ে গেলেও আধুনিক সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করতে না পারায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। একটি অপরিকল্পিত নগরীতে যে সব নাগরিক সমস্যা ও সংকট হতে পারে, ঢাকা শহরে তার সবগুলোই বিদ্যমান রয়েছে। যুগোপযোগী নগর পরিকল্পনা হিসেবে ড্যাপের বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে ঢাকা নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করল।

ড্যাপের নতুন গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর অল্পদিনের মধ্যেই নতুন ভবনের অনুমোদনের আবেদনের যে হিড়িক পড়েছে তা খুবই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা নগরবাসী এখন নিশ্চিত মনে নিজেদের স্বপ্নের আবাসন গড়ে তোলায় উদ্যোগী হয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক বিষয়। ইতোমধ্যেই ড্যাপের মেয়াদকালের অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। নানা কারণে দেশের আবাসন শিল্পে মন্দা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। ড্যাপ বাস্তবায়নের নতুন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে স্থবিরতা কেটে এ খাতের বিনিয়োগে নতুন গতি সঞ্চারিত হতে পারে। এ জন্য প্রথমেই রাজউকের পুরনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করতে হবে। সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ভবন নির্মাণের অনুমোদন এবং নির্ধারিত মান রক্ষায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। সময় ক্ষেপণের কারণে ভবনের নির্মাণ ব্যয় বাড়তে পারে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায়। ইতোমধ্যে রড, বালু, ইট, সিমেন্ট ইত্যাদির দাম বড় রকমে বেড়েছে। আবার বাড়তে পারে। ভবন নির্মাণ ব্যয় বাড়লে আবাসন কোম্পানি ও ফ্ল্যাট মালিকরা বাড়তি আর্থিক খরচের মধ্যে পড়বে। কাজেই অনুমোদন দ্রুত ও সহজ করতে হবে। নির্মাণ সামগ্রী দেশেই উৎপাদিত হয়। যাতে তাদের দাম না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। নতুন বাড়িঘর নির্মাণের অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এর পশ্চাত শিল্পসমূহও তার সুবিধা পাবে এবং দু’ খাতেই বিপুল কর্মসংস্থান হবে, যেটা চলমান অবস্থায় অত্যন্ত আবশ্যক ও জরুরি। সময়ক্ষেপণ, ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি যেন এ সম্ভাবনা নষ্ট না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন