প্রখ্যাত বলিউড স্টার আমির খানের সর্বশেষ চলচ্চিত্র লাল সিং চাড্ডা বর্জনের ডাক দিয়েছে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা। আমিরের ছবির সাফল্য রুখতে তারা নিরলসভাবে মিছিল ও সমাবেশের পাশাপাশি ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট, ভিডিও এবং বার্তা দিয়ে সয়লাব করে ফেলেছে সামাজিক ও গণমাধ্যম। এর ফলে ভারতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উদ্গীরিত হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষ। এগুলোর বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের সাথে যুক্ত। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ভারতের সর্বাধিক দেখা সংবাদ চ্যানেলগুলোর মধ্যে বিজেপি ঘনিষ্ঠ অন্তত তিনটি চ্যানেল আমির খান এবং তার চলচ্চিত্রের নেতিবাচক প্রচারের জন্য তাদের প্রাইম-টাইম অনুষ্ঠানগুলোকে উৎসর্গ করেছে।
ভারতের ইংরেজি নিউজ চ্যানেলের বাজারে ৩০ শতাংশ মালিকানায় থাকা টাইমস নাউ ‘কেন বলিউড হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত করে’ প্রসঙ্গে আমিরের কঠোর সমালোচনাও করেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, আমির একজন মুসলিম এবং হিন্দুবিরোধী। তারা তার ২০১৪ সালের ছবি পিকে-কে উদ্ধৃত করেছে, যেখানে তিনি একজন এলিয়েন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যিনি ভারতে আসেন এবং ধর্মের নামে ধর্মপ্রাণদের কীভাবে শোষণ করা হয় তা দেখে বিভ্রান্ত হন। অন্যরা খানের পুরানো বক্তৃতার ক্লিপগুলোর উদ্ধৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে একটি ২০১৫ সালের নভেম্বরের, যখন তিনি জনতার ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, মুসলমানদের নিপীড়ন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং বিজেপি সরকারের প্রতিক্রিয়ার অভাবের কারণে ‘নিরাপত্তা, ভয় এবং হতাশা’র ক্রমবর্ধমান অনুভূতির কথা বলেছিলেন।
মুম্বাইতে প্রতিশোধের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বহুল সম্মানিত চলচ্চিত্র লেখক ও পরিচালক জানিয়েছেন যে, তিনি অন্যান্য অভিনেতা, পরিচালক এবং সম্পৃক্তদের সাথে আলোচনা করেছেন যে, কীভাবে এ ধরনের ঘৃণামূলক প্রচারণাগুলোকে প্রতিহত করা যায়। তিনি বলেছেন, এটি চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে পরিষ্কারভাবে একটি সংগঠিত দ্বিমুখী ঘৃণামূলক প্রচারণা। এর প্রথম উদ্দেশ্য বলিউডে মুসলিম আধিপত্যের বিলুপ্তি এবং দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ধর্মনিরপেক্ষতার শেষ ঘাঁটি বলিউডে নিরঙ্কুশ হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন যে, বলিউড ছাড়া আর কোথাও ভারতে মুসলিমদের এত বড় আধিপত্য নেই এবং বিজেপি এতে খুশি নয়।
পরিচালক আরো বলেন, বিজেপি বলিউডকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দ্য কাশ্মীর ফাইলসের মতো সমালোচিত মুসলিমবিরোধী চলচ্চিত্র প্রচারের মাধ্যমে তার শক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। ছবিটিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমর্থন করেছেন এবং বেশ কয়েকটি বিজেপিশাসিত রাজ্য এর শুল্ক মওকুফ করেছে। এমনকি, কেউ কেউ তাদের কর্মীদের চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য বেতনভুক্ত ছুটির প্রস্তাবও দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এই ঘৃণামূলক প্রচারণাকে প্রতিরোধ না করি, তবে এটি অবশ্যই আরো খারাপ হতে চলেছে, কারণ এমন একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শাহরুখ খানের অভিনীত পাঠান চলচ্চিত্রটি বর্জনের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে একটি অনলাইন প্রচারণা চলছে, এমনকি যদিও এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারীর আগে মুক্তির পাবে না।’
ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সাঈদ আখতার মির্জা বলেছেন, মুসলিম তারকা অভিনীত চলচ্চিত্রগুলিকে বর্জন বক্স অফিসে খারাপ ফলাফল এনে দিচ্ছে। কিছুই সরকারী বলে প্রমাণিত হচ্ছে না, এটা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করা যায় কারণ এর কোনো উৎস নেই বলে প্রতীয়মান হয়, কিন্তু এটা অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক এবং এর অনুমোদন রয়েছে (কিছু বিজেপি সদস্যের)। এর অসল ফলাফল হল, একটি চলচ্চিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিজেপি অস্থি-মজ্জায় মুসলিমবিরোধী। আমিরের ছবি বর্জনকারীদের দেওয়া অন্যান্য ব্যাখ্যাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো হ’ল চোখে ধুলো দেয়া, অজুহাত, আসল সমস্যা তার নাম আমির খান।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন