মানুষের জীবনে ঘুম বয়ে আনে প্রশান্তি। ঘুম মানুষের জন্য অপরিহার্য। তবে প্রতিটি মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের মাত্রার পরিবর্তন ঘটে। তাই জীবনের কোন পর্যায়ে কতটুকু ঘুম প্রয়োজন তা জানা দরকার।
শৈশবকাল : নবজাত শিশু দৈনিক ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। প্রতিদিন নবজাত শিশু আট থেকে দশবার ঘুমাতে পারে। এ সময় বেশিরভাগ র্যাম স্লিপ হয়। যখন শিশুর বয়স এক মাস হয় তখন তাদের ঘুমের সময়কাল বাড়তে থাকে। ছয় মাস বয়স থেকে বেশিরভাগ শিশু রাতে গভীর ঘুম দেয় এবং দিনের বেলায় কিছুক্ষণের জন্য ঘুমায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের দিনের ঘুমের সময় কমতে থাকে। প্রায় ছয় বছর বয়সের দিকে পুরো দিন জেগে থাকে এবং রাতের বেলায় কমপক্ষে দশ ঘন্টা ঘুমায়। সাত বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত বাচ্চারা রাতে গভীর ঘুম দেয়। এ সময়টায় রাতে মেলাটনিন বেশি নিঃসরণ হয়। এ সময়ে বাচ্চার দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকাল : এ সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এ সময়ে দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। একজন শিশু বা কিশোর পূর্ণাঙ্গ বয়সের দিকে যেতে থাকে। তারা ছোটবেলার চেয়ে এক-দেড় ঘন্টা বেশি রাতে ঘুমাতে পারে এবং সেই সঙ্গে তাদের দিনের বেলায় ঘুম-ঘুম ভাব থাকতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল মা-বাবার উচিত সন্তানকে বাড়তি সময় দেওয়া এবং তাদের সমস্যাগুলো তাদের মতো করে বোঝা।
প্রাপ্ত বয়স্ক : এ বয়স থেকে প্রতিটি মানুষের গভীর ঘুমের সময়কাল আধঘন্টা করে কমতে থাকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত। তারপর থেকে গভীর ঘুমের সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
মধ্যবয়সী : রাত জাগা অনেক বেড়ে যায় এবং ঘন ঘন ঘুম ভাঙতে থাকে। বেশিরভাগ সময় তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমানোর পর ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় স্থূলকায় মানুষের ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যা হয়ে থাকে যাকে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম’ বলে। মেনোপজাল মহিলাদের হট ফ্লাশ’হতে পারে। তাছাড়া হরমোনজনিত কারণেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
প্রবীণ : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণরা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। গভীর ঘুম তাদের আগের চেয়ে কমে শতকরা পাঁচ ভাগে নেমে আসে। ঘুম আসতে অনেক সময় লাগে এবং বার বার ঘুম ভেঙে যায়। যার জন্য দিনের বেলায় ঘুম-ঘুম লাগে। এ সময়টায় বিভিন্ন কারণে ইনসমনিয়া হয়ে থাকে।
তাতে কি, বাড়ুক দৈহিক বয়স, নিজেকে ইয়ং ভাবতে কোনো অসুবিধা নেই। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনসমনিয়া? কোনো চিন্তা নেই। এখন ইনসমনিয়ার ভালো চিকিৎসা আছে। এ ধরনের কোনো সমস্যা বোধ করলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে শান্তিতে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন