নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের দাবি- নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। তবে পরিবারের পক্ষে কেউই বাদী হয়ে মামলা করেননি বলে দাবি করেছেন নিহত শাওনের মেজো ভাই ফরহাদ প্রধান।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) আমীর খসরু জানান, বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।মামলার বাদী মিলন প্রধানের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি জানান, তার ভাইকে যারা হত্যা করেছেন, তিনি তাদের বিচার চান। তবে নিহত শাওনের আরেক ভাই ফরহাদ প্রধান জানান, তিনি কিংবা তার ভাই মিলনসহ পরিবারের কোনো সদস্য থানায় যাননি। যেহেতু থানায় যাওয়া হয়নি, সেহেতু মামলার প্রশ্নই আসে না।তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের লাশ দেওয়া হয়েছে রাত ১টায়, জানাজা শেষে রাত ২টায় লাশ দাফন করে বাসায় ফিরি। আমার মা ঘটনার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। আমরা কোনো মামলা-মোকদ্দমায় যাইনি।
নিহত শাওনের বেয়াই (বড় বোনের দেবর) মোহাম্মদ জুয়েল (৪৭) বলেন, গতকাল রাত ১২টায় পুলিশ পাহারায় হাসপাতাল থেকে লাশ বের হয়। পরে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে লাশ নিয়ে ৮ জন ডিবি পুলিশ ও ৪ জন পুলিশ সদস্য বাড়িতে এসে ১৫ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করে জানাজার জন্য নিয়ে যেতে হবে বলে নির্দেশ দেন। পরে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা উত্তেজিত হলে তারা সময় বাড়িয়ে দেন। তারা জানাজার সময় দেন রাত ১টায়। আমরা সময় বাড়িয়ে রাত দেড়টায় জানাজার সময় ঠিক করি। পরে রাত পৌনে ২টায় দাফন শেষে দোয়া করা হয়।
তিনি বলেন, রাত ২টার দিকে সকল আত্মীয়কে বিদায় জানিয়ে আমরা বাসায় আসি। এর ভেতরে আমরা মামলা করলাম কখন? তিনি অঅরও বলেন, এখন বিষয় হলো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম দেখলাম, যুবদল কর্মী শাওন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা, এজহারে বিএনপিকে দোষারোপ। দেশের সুনামধন্য একটি জাতীয় দৈনিকে মতামত না নিয়ে কীভাবে এমন সংবাদ প্রকাশ করা হয়, আমি বুঝি না। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু গণমাধ্যমকে বলেন, লাশ দাফনের আগেই নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে। মামলার এজাহারের কপি চাইলে ওসি বলেন, মামলার কপি আদালত থেকে তুলে নেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের রেলগেট এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান (২০) নিহত হন। রাত সোয়া ১টার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় নবীনগর কবরস্থানে শাওনের লাশ দাফন করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপস্থিতিতে নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান ও মামা মোতাহার হোসেনের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে পুলিশ ও ডিবির পাহারায় শাওনের লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। লাশ হস্তান্তরের পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি করে শাওনের লাশ দাফন করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন