প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের অন্তত ১০টি স্পটে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বেশি ঘটছে ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এই অপরাধে সক্রিয় অন্তত ৫০টি চক্র। প্রতি মাসেই এসব পয়েন্টে ১০ থেকে ১৫টি পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই ও ডাকাতির কবলে পড়ছে বলে অভিযোগ পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের। বলা হয়েছে, ডাকাতির পর কোটি কোটি টাকার পণ্য চলে যাচ্ছে আরেকটি শক্তিশালী চক্রের হাতেÑ যা পরবর্তী সময়ে ওই চক্রের সদস্যরা বিদেশেও রফতানি করছে। এতে এক দিকে অর্থনৈতিকভাবে লোকসানে পড়ছে পণ্য পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীরা, অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বাণিজ্যিক সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই চক্রে পরিবহন চালক, প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই জড়িত। মালিক সমিতির সন্দেহ পেশাদার চালকদের মধ্যে একটি বড় অংশ এ ধরনের ডাকাতির সাথে জড়িত। কারণ বেশি টাকায় শিল্প পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলোই প্রতিনিয়ত ডাকাতির কবলে পড়ছে। তাছাড়া চালকদের বর্ণনা অনুযায়ী, দু’টি ট্রাক রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি করে পণ্যবাহী ট্রাকের চালককে নামিয়ে ডাকাত চক্রের সাথে থাকা পেশাদার চালকরা ট্রাকটি নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়নের একজন নেতা মনে করেন, শিল্পপণ্য পরিবহনে ডাকাতির সাথে শক্তিশালী অর্ধ শতাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের সাথে পরিবহন চালকরাও জড়িত। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজির কাছে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো রেকর্ড ছাড়া তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে অতীতেও বহু লেখালেখি হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি হয়েছে। পরিবহনে ডাকাতির সাথে একদল তথাকথিত পেশাদার চালকদের জড়িত থাকার অভিযোগও নতুন কিছু নয়। কেবলমাত্র পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত চালকরাই ডাকাতির সাথে যুক্ত, ব্যাপারটি তেমনও নয়; বরং গণপরিবহনের একশ্রেণীর চালকের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ রয়েছে। ইতঃপূর্বে রাজধানীতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ ধরনের চালকরূপী ডাকাত পাকড়াও করেছিলেন। এর পর থেকে রাজধানীতে এ ধরনের উপদ্রব কিছুটা কমেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, মহাসড়কে এসব ডাকাতের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা বাহুল্য, সংঘবদ্ধ ডাকাতদের কোনো না কোনো প্রশ্রয়ের জায়গা রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা যা-ই বলুন না কেন, এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতার বিষয়টি এড়ানো যাবে না। মহাসড়কে ডাকাতির বিষয়টি যে পরিকল্পিত তাতে সন্দেহ নেই। এর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য জড়িত থাকা অস্বাভাবিক নয়। মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরনো। পরিবহন মালিকরা এর প্রতিবাদে ধর্মঘটও করেছেন। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বাদেও দেশে যেসব নিষিদ্ধ মাদক প্রবেশ করছে সেসব ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে মহাসড়কে দস্যুতার সাথে জড়িতদের নাম-ঠিকানা প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, এদের তালিকা র্যাব-পুলিশের কাছে দেয়ার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেই মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যা-ই বলা হোক, দেশে সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভাল নয়। ব্যবসায়ীরা বারবার আস্থার সঙ্কটের কথা বলে আসছেন। কেন ব্যবসায়ীরা আস্থা পাচ্ছেন না বোধকরি তার একটা বড় কারণ মহাসড়কে দস্যুতা। যেসব পয়েন্টে ডাকাতি হয় তার সবগুলোই হচ্ছে শিল্পাঞ্চল ও বন্দরকেন্দ্রিক। অন্যদিকে, মহাসড়কে বেশি ডাকাতি হয় পোশাকবাহী ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে। ফলে এটা সহজেই বোধগম্য যে, ডাকাতরা তা ভালোভাবে অবগত। এমতাবস্থায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিভাবে? অবসান জরুরি এবং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা যতœবান ও দায়িত্বশীল হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন