বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পুলিশের বর্বরোচিত আচরণ

| প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত র‌্যালিতে নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও গুলি চালিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে বাঁধা দেয়ায় নেতাকর্মীরা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। এতে শাওন নামের এক যুবদলকর্মী মারা যায়। অর্ধশতাধিক নেতাককর্মী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। গত একযুগ ধরে দেশের প্রধান বিরোধিদলের সভা-সমাবেশের অধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীরা বিএনপিসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সভাসমাবেশ ভুন্ডুল করতে পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করছে অথবা পুলিশ অনুমোদন না দিয়ে বিরোধিদলের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। নানা অজুহাতে, কারণে-অকারণে হামলা, মামলা, ধরপাকড় বা গুলি চলছে। এমনিতেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যের বিতর্কিত ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর মানুষের আস্থা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বিরোধিদলের উপর পুলিশী বর্বরতা, গুম-খুন, হামলা-মামলার ঘটনার মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে। কোনো সভ্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশের এ ভ’মিকা গ্রহণযোগ্য নয়। যে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নাগরিকদের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করার কথা, সে পুলিশই যদি সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের মত একপেশে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ কীভাবে সম্ভব হতে পারে?

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত ১১ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র ৩৫টি কর্মসূচীতে পুলিশ ও সরকারিদলের হামলার শিকার হয়ে সহশ্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধিদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাঁধা না দেয়ার কথা বলেছেন। এমনকি গণভবন ঘেরাও করতে গেলেও বিরোধিদলের নেতাদের চা দিয়ে আপ্যায়নের কথা বলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র রাজধানীতে বিরোধিদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আক্রান্ত না হলেও সারাদেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বিরোধিদলকে কর্মসূচি পালনে পুলিশ ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেয়ার পর থেকে বিএনপি’র উপর হামলা প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে বিএনপি’র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিএনপি’র ১ সেপ্টেম্বরের র‌্যালি কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি সাধারণত উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়ে থাকে। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু নারায়নগঞ্জের পুলিশ তাদের দলবাজ ভ’মিকার পরাকাষ্ঠা দেখাল। এর মাত্র ৫দিন আগে নারায়নগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি ছাড়াই শহরের প্রধান সড়কে সবাবেশ করে পুরো শহরে যান চলাচল ও স্বাভাবিক কর্মকান্ড অচল করে দিয়েছিলেন। পুলিশ সেখানে বাঁধা না দিলেও বিএনপি’র সমাবেশে বাঁধা দিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে, তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়ে বর্বরতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা, মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকান্ড শুধু দেশের নাগরিক সমাজেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি আমাদের জন্য লজ্জা ও অবমাননাকর। বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আগামী নির্বাচনকে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তরফ থেকে আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশে সব রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। পুলিশ সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। সরকার বা বিরোধিদলের পক্ষ বা বিপক্ষে কাজ করার এখতিয়ার পুলিশের নেই। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ পুলিশ বাহিনীর মটো হলেও পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের বেপরোয়া দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতা এই বাহিনীকে ভাব-মর্যাদা ও আস্থার সংকটে ঠেলে দিয়েছে। আভ্যন্তরীণ বিভাগীয় ব্যবস্থায় প্রতিবছর হাজার হাজার পুলিশের শাস্তি হলেও আদতে অপরাধ প্রবণতা কমেনি। গত বৃহষ্পতিবার প্রকাশিত টিআইবি রিপোর্টে দেশের সেবাখাতে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার নাম উঠে এসেছে। গুরুতর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের লঘুদন্ডের কারণে তারা বেপরোয়া। বিরোধিদলের শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনাগুলোকে অবশ্যই তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। মানবাধিকার ও সাংবিধানিক-রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণে দেশের পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষ ভ’মিকা পালন নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ বাহিনীতে চাকরি নিয়ে দলবাজ-দলদাসের ভূমিকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
পাকিস্তানিরা তো এর থেকেও ভালো ছিল আমরা কেন স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম এই পুলিশ রা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় ওদের পরিবার চলে ওদের কাপড়-চোপড় অস্ত্র-গুলি আমাদের সব ট্যাক্সের টাকা এই পুলিশ রা মানুষ হত্যা করছে এরা আল্লাহকে ভুলে গেছে মানুষ হত্যা মহাপাপ এরা চিরজীবনের জন্য জাহান্নামে যাবে এবং আমাদের সরকার ও চিরজীবনের জন্য জাহান্নামে যাবে সরকারের আদেশে এরা এসব জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সরকারের প্রধান ও আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন