রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়া ঘাট এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে করে ওই অঞ্চলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাথে গোয়ালন্দের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। এখানে খেয়া নৌকাই তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। এদিকে, উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ইনঞ্জিনিয়ারের গাফিলতি কারণে দীর্ঘ দিন সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। মান্নান গাছীর খেয়াঘাট দিয়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন। খেয়াঘাটের দুই পাশের একাধিক হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া এসব অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুর শহরে যাতায়াত করে থাকেন। দ্রুত ও স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ এ ঘাট ব্যবহার করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এলাকাবাসী এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেসার্স লী কনষ্ট্রাকশন-মান (জেভি) ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকার কাজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাজটির উদ্বোধন করা হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই তারিখে। কিন্তু অদ্যাবধি ব্রীজটির নির্মাণ কাজ বহুলাংশে বাকি রয়েছে। কাজটি বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, আনন্দবাজার এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদরাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাইস্কুলে এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য প্রতিদিন নানা ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
উজানচর ইউনিয়নের সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া গ্রামের মোতালেব শেখ, আ. রব খান, আবুল হাসেম মন্ডলসহ কয়েকজন ইনকিলাবকে জানান, দুটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় কৃষি পণ্য ও রোগী পরিবহন এবং সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অনেক পথ ঘুরতে হয়। এতে করে তাদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারি কোন পণ্য নেওয়া সম্ভব না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরী রোগি হাসাপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে অবর্ননীয় কষ্ট পোহাতে হয়। উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খাঁ বলেন, কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ঠিকাদারকে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ আগষ্ট একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হয়েছে। এদিকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে থাকা এবং যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৩০ আগষ্ট গোয়ালন্দ উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন