বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মধ্যরাতের বৃষ্টিতে সিলেট নগরী পানিতে সয়লাব

সিলেটে ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:২৭ পিএম

মধ্যরাতের শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা। গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত ওঠে গেছে পানি। ভারী বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন পাড়ামহল্লার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া খাল ও ছড়াগুলোতে পানি উপচে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সিলেট শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীরও।


নগরী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে, লামাবাজার, মিরেরময়দান, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানা এলাকায় অতিবৃষ্টির ফলে পানিবদ্ধতা দেখা গেছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ সকাল অবধি টানা বৃষ্টির ফলে বাসাবাড়ি ও সড়কে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যে সড়কগুলোর কয়েকটিতে পানিবদ্ধতা রয়েছে এখনো।

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে জমে রয়েছে পানি। এই পানিবদ্ধতায় রোগীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক রয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।

পানিবদ্ধতায় ভুক্তভোগীরা বলেন, রাতের বেলা এমন পানিবদ্ধতায় বিপাকে পড়েন নগরীর তুলনামুলক নিচু এলাকার বসবাসকারীরা। ভোগান্তি কম ছিল না ব্যবসায়ীদেরও। বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসিন্দারা খাটের ওপর তুলে রাখেন। অনেক বাসা ও দোকানের মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে ভিজে।

নগরী ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা রাজীব চৌধুরী আজ সকালে বলেন, মধ্যরাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ
পায়রা এলাকায় রাত থেকেই পানি জমে। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠে। কিছুক্ষণ আগে সে পানি নেমে গেছে। তবে রাতভর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের লালাদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুবল সিংহ বলেন, বৃষ্টিতে লালাদীঘির পাড় সড়ক ডুবে গেছে। এলাকায় নিচু নিচু কিছু ঘরে পানি ভেতরে প্রবেশ করে।

নগরের সুরমা নদী সংলগ্ন এলাকা মেন্দিবাগ, কুশিঘাট, তোপখানা, কালীঘাট, শেখঘাট এলাকায় দেখা গেছে সুরমা নদীর পানি ভরাট অবস্থায় রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ওই এলাকাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি প্রবেশ করবে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি এখনো বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি, তবে বাড়ছে নদীর পানি।

নগরীর একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, প্রধানত চারটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন পানিবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া, ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরীর পানি ঘণ্টা দুয়েক ছিলো। এরপর নেমে গেছে। পানি নামার জন্য এইটুকু সময় দিতে হবে।

রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত অবিশ্বাস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে। তাছাড়া হাওর ও নদী ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে টিলা থেকে বালু নেমেও ড্রেন ও ছড়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামবে কোনদিকে !

নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রেনের পানি নামার মুখগুলো হয়তো আমরা সবসময় তদারকি করতে পারি না। পানি নামার লিংকগুলোও সবসময় তদারকি করা হয় না। এদিকে, পানিবদ্ধতার বিষয়ে মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক জাকির এক বার্তায় বলেছেন, নির্লজ্জ প্রকল্পবাজী ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পানিবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর মানুষ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন