অসময়ের তীব্র নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন কাওয়াজানি এলাকার পদ্মা পাড়েরর মানুষ। গত বর্ষার ভয়বহ নদী ভাঙনের ক্ষত কাটতে না কাটতেই আবার শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমের এই ভাঙনে গত এক সপ্তাহে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ২০ বিঘা ফসলী জমি। জমিতে নতুন করে ফসল আবাদ করলে সে সকল ফসলসহ জমি নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে এখন পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একের পর এক নদী তীরের মাটির চাপ ভেঙে ফসলী জমি বিলীন হচ্ছে পদ্মায়। নদী তীরের জমিতে থাকা ধান ঘাস ধুনছে অন্যান্য ফসলী জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা জমিতে কালো বেগুনের চারা টমেটোর চারা মরিচের চারা লাউ চাল কুমড়ার চারা রোপ করেছে। নদীর পাড় ঘেষে আবার কিছু জমি চাষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। যখন দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস আসে তখন পানির ধাক্কায় নদীর পাড় বেশি ভাঙ্গতে থাকে। এদিকে নদীতে একটু পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে চর অঞ্চলের নিচু ফসলী জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন কাওয়াজানি গ্রামের কৃষক জালাল বিশ্বাস বলেন, আজ এক সপ্তাহ মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেলো প্রায় ১০ বিঘা ফসলি জমি। জমিতে ধান ছিলো ধুনচা ছিলো আবার গবাদি পশুর জন্য ঘাস লাগানো ছিলো। কিছুু জমি চাষ করা হয়েছে আবার কিছু জমিতে কালো বেগুন ও টমেটো চারা রোপন করা হয়েছিলো সবকিছ্ইু নদীগর্ভে চলে গেছে। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে বসতবাড়ি আর রক্ষা পাবে না। এভাবে আর দু’এক সপ্তাহ নদী ভাঙলেই কাওয়াজানি গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
আরেক কৃষক লোকমান সরদারে সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমার বাবা ও চাচাদের অনেক জমি ছিলো। নদীতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সব জমি প্রায়ই নদীতে চলে গেছে। কিছু জমি নদীর পাড় দিয়ে আছে সেই জমিগুলো কোনো রকম আবাদ করে সংসার চালাই। আজ এক সপ্তাহ ধরে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে আমার দু’বিঘা ফসলী জমি নদীতে চলে গেলো। এভাবে যদি নদী ভাঙ্গতে থাকে তাহলে আমার সবটুকু জমি নদীতে চলে যাবে তখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করে খাবো। এক বছর আগের নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে মনে চাপা কষ্ট আর বুকভরা বেদনা নিয়ে এখানে এসে কোনো রকম ঘরবাড়ি করে বসবাস করছিলাম এখন আর থাকা সম্ভব হবে না। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে বসত বাড়ি আর রক্ষা পাবে না।
এ সময় দৌলতদিয়ার বাসিন্দা খলিল মল্লিক বলেন, শুধু ফসলী জমি নয়। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে পুরো গ্রামসহ ফেরি ও লঞ্চঘাট। ভাঙন ঝুঁকি দৌলতদিয়া ও দেবোগ্রামের পাঁচটি বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ হাজার হাজার বসত বাড়ি। অসময়ে এমন ভাঙন আমরা এর আগে কখনও দেখিনি বলেও জানান তিনি।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা নদী শাসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগতি করেছি। এবার নদী শাসনের জন্য দৌলতদিয়া ফেরিঘাট আধুনিকরন কাজ হবে। দৌলতদিয়া থেকে হয়ত বা দেবগ্রাম মুন্সী বাজার পর্যন্ত নদী শাসনের কাজ হবে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অংকুর বলেন, হঠাৎ ভাঙনের কথা শুনেছি। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকায় সরকারিভাবে বিআইডব্লিটিএ কাজ করবে। ডাউনে ৭নং ফেরি ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পর্যন্ত নদী শাসনের কাজ হবে। আপে আড়াই কিলোমিটার মোট সাড়ে চার কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন