হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর গত ২৫ জুলাই বলেছেন, ১৯৪৭ সালের ভারতভাগ খুবই বেদনাদায়ক ছিল, যার যন্ত্রণা আজ পর্যন্ত অনুভব করা হচ্ছে। ১৯৯১ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের মাধ্যমে যদি পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হতে পারে, তাহলে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কেন নয়? এ ধরনের কথাবার্তা প্রায়ই বলেন ভারতের হিন্দু মৌলবাদীরা তথা বিজেপি ও তার ঘরানার লোকরা। তাদের লক্ষ্য, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানো এবং পার্শ্ববর্তী সব দেশকে নিয়ে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা। ইতোমধ্যেই অনুরূপ ঘোষণা দিয়েছে শঙ্করাচার্য পরিষদ। সংগঠনের এক দল সাধুসন্ত ও বিশিষ্টজনরা ‘হিন্দুরাষ্ট্রের’ রূপরেখা তৈরি করছেন, যার রাজধানী হবে কাশী। ৩০ জনের একটি দল নতুন ‘সংবিধান’ এর খসড়াও প্রণয়ন করেছেন, যা চূড়ান্ত করে ২০২৩ সালে মাঘ-মেলা উপলক্ষে প্রকাশ করা হবে। সে ‘সংবিধান’ অনুযায়ী, ভারতে ভোটাধিকার থাকবে শুধু হিন্দুদের। শঙ্করাচার্য পরিষদের সভাপতি স্বামী আনন্দস্বরূপ বলেছেন, ‘আগামীতে একদিন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার একসাথে এসে যাবে। সেই অখণ্ড ভারতে থাকবে ৫৪৩ সাংসদ বিশিষ্ট ‘ধর্ম সংসদ’। দেশ চলবে ‘বর্ণাশ্রম’ ব্যবস্থা মেনে। বিচারব্যবস্থা চলবে ‘ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের নিয়মে’। শিক্ষায় ফিরবে প্রাচীন গুরুকুল পদ্ধতি। এ ব্যাপারে আরো কিছু তথ্য হচ্ছে: গত আগস্টে ভারতের কয়েকজন শিক্ষাবিদ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যৌথভাবে খোলা চিঠি লিখে দাবি জানান, ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ‘ইসলামিক স্টাডিজ’র নামে কার্যত জিহাদি কার্যক্রমের পাঠ দেয়া হচ্ছে। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এর পরই আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে ইসলামিক লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে কর্তৃপক্ষ যুক্ত করেছেন হিন্দু ধর্মের অধ্যায়। ভারতের মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নওয়াব মালিক ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, বিজেপি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে একত্র করে একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো পদক্ষেপ নিলে তার দল সেটা মেনে নেবে। এর কয়েকদিন আগে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফাদনাভিস বলেন, এমন সময় আসবে যখন পাকিস্তানের করাচী ভারতের অংশ হবে। গত এপ্রিলে আরএসএস’র সংঘ চালক মোহন ভাগবত বলেন, আর মাত্র ১৫ বছর। তার পরই তৈরি হবে অখণ্ড ভারত। আর যারা এর মাঝে আসবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। এর প্রত্যত্তুরে শিব সেনা’র নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘সবাই আপনাদের সাথে আছে। কিন্তু ১৫ বছর নয়, ১৫ দিনে অখণ্ড ভারত বানান। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেন, ‘শুধু ভারতেই নয়, প্রতিবেশী একাধিক দেশে বিজেপির সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানেও আমাদের জয়ী হতে হবে।’
এ পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে ভারতে। তাতে কখনো কখনো প্রশাসনের হিন্দু লোকরাও সংশ্লিষ্ট থেকেছে! সে দাঙ্গায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। মুসলমানরা বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। জাতি বিদ্বেষী কর্ম ব্যাপক বেড়েছে বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে। তাতে সর্বাধিক নির্যাতিত হয়েছে মুসলমানরা। তারা প্রতিনিয়তই নানা নির্যাতন, হয়রানি, হত্যা, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরের শিকার হচ্ছে। উপরন্তু বহু রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গরুর গোশত আছে সন্দেহে অনেক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে গো রক্ষকরা। তবুও তাদের কোনো শাস্তি হয়নি। ব্যতিক্রম হিসেবে যাদের শাস্তি হয়েছে, তাদেরও সাজা মওকুফ করা হয়েছে। যেমন: বিলকিস বানুরদের কথা বলা যায়। ভারতের গুজরাটে অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের ৭ জনকে হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঐ ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণ বলে। বিচারপতি সাচার কমিশনের রিপোর্ট মতে, ভারতের ১.৩৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ১৪% মুসলমান। কিন্তু তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে সুবিধা বঞ্চিত। আনুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত মুসলিম নারীর সংখ্যা ৮%, যা জাতীয় গড়ে ২১%। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, চাকরিতে মুসলিম মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল ১৫%, যেখানে হিন্দু মহিলাদের জন্য এটি ২৭%। বিশিষ্ট একাডেমিক ও অ্যাক্টিভিস্ট অপূর্বানন্দ বলেন, পক্ষপাত সর্বদাই ছিল কিন্তু বিজেপি ও আরএসএস’র আধিপত্যের কারণে লোকেরা এখন সমস্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে মুসলমানদের বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের বিশিষ্ট লেখক ও মেইলি গেজেট পত্রিকার প্রধান সম্পাদক জফরুল ইসলাম খান বলেন, বিজেপির ভিত্তিগুলোর অন্যতম চরম ইসলাম বিদ্বেষ। ভারতের ১০৮ জন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইএফএস ও আইআরএস কর্মকর্তা ভারতজুড়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরির প্রচেষ্টা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন গত ২৬ এপ্রিল। ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ মতে, ভারতের মোদী সরকার ‘হিন্দুত্ববাদী’ সরকার। এ সরকারের আমলে দেশটির ধর্মীয় স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্য হারে খর্ব হয়েছে। তাই এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশেষ উদ্বেগ রয়েছে’, এমন দেশগুলোর তালিকায় ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। ‘হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র’ গড়ার লক্ষ্যে মোদি সরকার ২০২১ সালে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক হামলা হয়েছে। আসামের বিধানসভায় রাজ্যের সব মাদ্রাসা বন্ধ করার বিল পাস হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। ক্ষমতাসীন বিজেপি এটি করেছে। এর অধীনে এই রাজ্যের কমপক্ষে ৭০০ মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হবে আগামী এপ্রিলের মধ্যে। গত মে মাসে এক নিউজ চ্যানেলে বিতর্ক সভায় বিজেপির রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে অবমাননাকর কিছু মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম জাহান চরম ক্ষিপ্ত হয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। তবুও এই অপকর্ম বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি বিজেপির এক এমপি এই একই কর্ম করেছেন। ভারতে চলমান মুসলিম বিদ্বেষের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ইলহান ওমর গত ৬ এপ্রিল। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি গত ২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দ্বারা প্রভাবিত একটি দলের কেন্দ্রীয় সরকার এবং কিছু রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করছে। সর্বোপরি মুসলিম শাসনামলের সময়ের মুসলিম নামকরণকৃত সব স্থানের ও স্থাপনার নাম বাদ দিয়ে হিন্দুদের নামে নামকরণ করা হচ্ছে। এছাড়া, ভারতে নতুন নাগরিকপূঞ্জি করা হয়েছে। সে মতে, মুসলমানদের নাগরিকত্ব চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২১ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, ‘হিন্দুধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিকদের দুই-তৃতীয়াংশই মনে করেন, সত্যিকার ভারতীয় হতে হলে হিন্দু ধর্মের অনুসরণ করা জরুরি।অর্থাৎ ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উত্থান হয়েছে এবং তাদের শক্তি ও জাতি বিদ্বেষী কর্ম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আর সেক্যুলারপন্থীরা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। তাই ভারতীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে অনেক দিন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গত ১৮ আগস্ট বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে যা যা করা দরকার, তা করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছি ভারতে গিয়ে’। তার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হয়েছে দেশব্যাপী। আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ আ’লীগ করে না, করেনি। যিনি এ কথা বলেছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। ড. মোমেনও পরবর্তীতে বলেছেন, তাঁকে নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তিনি তাঁর ধারেকাছেও নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিমত, ড. মোমেনের বক্তব্যে আ’লীগের আকাক্সক্ষাই প্রতিফলিত হয়েছে। কারণ, দেশ-বিদেশের সকলেই জানে, আ’লীগ ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ও ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসেছে ও টিকে আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের আউটলুক সাময়িকীর শিরোনাম ছিল ‘হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চূড়ান্ত করছে ভারত সরকার’। ভারতের থিংক ট্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্রীধরা দত্ত গত ২০ আগস্ট বিবিসিতে বলেছেন, ‘আ’লীগ সরকারের কাছ থেকে ভারত যে সুবিধা পেয়েছে তা ধরে রাখার জন্য দলটিকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করতেই পারে ভারত’। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিবিসিতে ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগামী বছর বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। তার আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আসাম ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীগণও অনেক দিন থেকে আ’লীগ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও বলেছেন, আ’লীগ ভারতের টেস্টেড এন্ড ট্রাস্টেড বন্ধু। কংগ্রেসসহ সমগ্র ভারতবাসীরও মনোভাব একই। হওয়ারও কথা। কারণ, ভারত যা চেয়েছে তার সবই পেয়েছে। এমনকি যা চায়নি তাও পেয়েছে আ’লীগ সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পেয়েছে ভারতের কাছ থেকে? দাদাগিরি ছাড়া তেমন কিছুই পায়নি! কারণ, আধিপত্যবাদী ভারতের নীতি হচ্ছে, শুধু নেবে দেবে না কিছুই। এমনকি এ দেশের বহুল আকাক্সিক্ষত তিস্তা চুক্তিও হয়নি, মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বহুদিন থেকে। সর্বোপরি এর কোনো সুরাহা হয়নি গত ৬ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে হাসিনা-মোদি বৈঠকেও। এ ব্যাপারে সেদিন জার্মান বেতারে প্রকাশ, ‘দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক হলো। বৈঠকের পর তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা হলো। মোদি ও হাসিনা তাদের কথা বললেন। কিন্তু তিস্তা চুক্তি হলো না, সীমান্তহত্যা নিয়ে একটি কথাও কেউ বললেন না, রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার ব্যাপারে কোনো কথাও হলো না। এমনকি সাতটি সমঝোতা হলেও বিশাল বড় কোনো ঘোষণা হলো না। সাধারণত, একজন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের পর প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার শীর্ষ বৈঠকের পর প্রাপ্তির তালিকা খুঁজতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন সাংবাদিকরা’। বিবিসিতে প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও তিস্তা কিংবা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যুতে জটিলতা রয়েই গেল’। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের আকাক্সক্ষা, দাদাগিরি নয়, সম মর্যাদা ও সম দেওয়া-নেওয়ার বন্ধুত্ব। এই একই অবস্থা ভারতের পার্শ্ববর্তী অন্য সব দেশেরও। তারাও দাদাগিরি ছাড়া কিছুই পায়নি। তাই তারা ভারতের কাছ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চীনমুখী হয়েছে। ভারতের কারণে কল্যাণকর সংস্থা-সার্কও অকার্যকর হয়ে রয়েছে বহুদিন থেকে।
কাশ্মীর একটি মুসলিম অধ্যুষিত ভারত বর্ষের বাইরের দেশ ছিল। হরি সিংহ ছিলেন তার রাজা। তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতার পর ভারতের সাহায্য চাইলে সাথে সাথে ভারত সেনা অভিযান চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়। তার পর থেকে ভারতীয় দখলদারিত্ব থেকে আজাদীর জন্য লড়াই করছে কাশ্মীরীরা। তাতে এ পর্যন্ত বহু রক্ত ঝরেছে। তবুও তারা স্বাধীনতা পায়নি। বরং অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের যে অধিকারটুকু ছিল তাও খতম হয়েছে গত বছর। সেখানে দীর্ঘকাল যাবত চলছে সেনা অভিযান ও জাতি নিধন এবং কট্টর হিন্দুদের পুনর্বাসন। অথচ কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ১৯৪৮ সালে। সেটা হচ্ছে, গণভোট, যা ভারত আজও বাস্তবায়ন করেনি। উপরন্তু কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্ক চরম খারাপ হয়েছে ভারতের। এমনকি পাকিস্তানের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে কয়েকবার। সার্বক্ষণিক যুদ্ধাভাব বিরাজ করছে স্বাধীনতাত্তোর থেকেই। চীনের সাথেও তাই। চীন ও পাকিস্তান সামরিক দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী। তাই ভারত কিছু করার সাহস পাচ্ছে না। নতুবা অন্য কিছু করে ফেলতো এতদিনে! তাই বিজেপি ও তার ঘরানার লোকদের আকাক্সক্ষার ব্যাপারে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের সকলের সাবধান হওয়া আবশ্যক। নতুবা কয়েক হাজার মা-বোনের ইজ্জত ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। আর সেটি হলে কাশ্মীরের মতো পরিণতি হতে পারে!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
sardarsiraj1955@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন