অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, কোটি টাকার খাস জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করে বিক্রি, চাকুরী দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায়, ভ্রাম্যমান আদালতের উপর হামলা, ট্রাফিক পুলিশের উপর চড়াওসহ একাধিক অপকর্মের সাথে যুক্ত কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়া এবার ছাড় পেলেন না। এক নারীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করার সময় স্থানীয় জনতা তাকে ধাওয়া করে। এসময় ডোবার পানিতে লাফ দিয়েও বাঁচতে পারেন নি। পুকুর থেকে তুলে নিয়ে তাকে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় জনতা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকায়। তবে জনতা তাকে পুলিশে দিলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করে মাঝপথে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহা আলম জানান, বগুড়ার এক নারী উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামালের কাছে ১৫লাখ টাকা পান বলে দাবি করেন। এ নিয়ে সায়দাবাদ বাজারের আব্দুর রশীদের দোকানে একটি বৈঠক বসে। বৈঠক চলাকালীন সময়ে হঠাৎ ওই নেতা পালানোর চেষ্টা করলে ওই নারী সুরুজ্জামালের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় সুরুজ্জামাল ওই নারীর মাথায় ঘুষি ও ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করেন। নারীর ওপর নির্যাতনের এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনতা ওই নেতাকে ধাওয়া করলে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। এ সময় পানি থেকে তুলে এনে গণধোলাই দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরে ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল বিক্ষুদ্ধ জনতার হাত থেকে ওই নেতাকে ছাড়িয়ে নেন।
যাদুরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহা কামাল বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সুরুজ্জামাল পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাঁকে আমরা উদ্ধার করি। এ সময় তাঁর পড়নের পাঞ্জাবী ও লুঙ্গি ছেঁড়া ছিল। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পাই এক নারীকে ধাক্কা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ধাওয়া দিলে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে ওই নারীসহ সুরুজ্জামালকে থানায় পাঠানো হয়।
নির্যাতিত নারী লাভলী বেগম বলেন, সুরুজ্জামাল মিয়ার সাথে আমার ঢাকায় পরিচয় হয়। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বড়ভাই বলে পরিচয় দেন। তাকে ২০১৯সালে আমার বদলি এবং আমার মামাতো ভাইয়ের চাকুরির জন্য ১৫লাখ টাকা দেই। কিন্তু তিনি সেই টাকা না দিয়ে আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছেন। এপর্যন্ত তার কাছে আমি ৭/৮বার এসেছি টাকা ফেরত নেবার জন্য। কিন্তু তিনি শুধু তালবাহনা করেন টাকা না দিয়ে। শুক্রবার রাতে তাকে সায়দাবাদ বাজারে দেখা পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমার গায়ে হাত তোলেন। এসময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া করেন। তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে বাজার পাশে একটি ডোবার পানিতে ঝাঁপ দেন।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়াকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তছির কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন এই বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ স্যারের সাথে কথা বললে তিনি সব বলবেন।
এই বিষয়ে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপকুমার সরকার বলেন, এমন ঘটনা শুনেছি। তবে এই বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ না করেন নি।
উল্লেখ্য,আদালতের আদেশ ও মুচলেকার তোয়াক্কা না করে ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা,কর্তিমারী বাজারে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখল, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়া, ট্রাফিক পুলিশের উপড় চড়াও হওয়াসহ চাকুরী খাওয়ার হুমকি, অসহায় পরিবারের ওপর নির্যাতনসহ জোর করে দুইটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে ভূড়িভোজ,পল্লী বিদ্যুতের বিল না দিতে এলাকায় মাইকিং করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে। সুরুজ্জামাল মিয়া নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের কথিত বড় ভাই পরিচয়ে নানা অপকর্ম করলেও ভয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন