শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বোডির দৌরাত্ম্য

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে প্রাতঃভ্রমণে বের হই। যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হবার কারণে মোবাইলটি ট্রাউজারের পকেটেই থাকে। সেদিন ছিল ২৯ আগস্ট, সোমবার। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে যায়। দ্রুত জামা‘আত পাবার জন্য একটু তাড়াহুড়া করি। মোবাইলটি বিছানাতেই রয়ে যায়। নামাজ আদায় করে প্রাতঃভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরি। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি, একাধিক মিসড কল। একের অধিক মিসড কল দেখে আমি কল ব্যাক করি। একটু ব্যস্ত থাকায় দ্রুত কথা সেরে নিতে চাই। কিন্তু অপর পাশ থেকে কলটি কেটে দেয়া হয়। এতে মনের মাঝে বিরক্তি সৃষ্টি হয়। ততক্ষণে ঐ নাম্বারটি থেকে পুনরায় কল আসে। কলটি রিসিভ করে সালাম বিনিময় করি। কণ্ঠটি আমার কাছে একবারেই অপরিচিত। পরিচয় জানতে চাইলে সাগ্রহে তিনি তাঁর পরিচয় প্রদান করেন। তিনি তাঁর পরিচয়ে নাম ও পেশা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি একটি কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। পত্রিকায় লেখার বিষয় নিয়েই আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। ‘মোবাইল নাম্বার কোথায় পেলেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের মাধ্যমে আপনার মোবাইল নাম্বারটি সংগ্রহ করি। আমি আপনার লেখার নিয়মিত একজন পাঠক। আমি একটি জেলা শহরের কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। আমি একটু সময় নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আমি বললাম, জি, ঠিক আছে, বলুন! তিনি আমার সাথে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলেন। বড় আফসোসের সাথে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত আমি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছি। আর প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি প্রায় ২০ বছর। চাকরি আছে আমার আর মাত্র কয়েক বছর! সুদীর্ঘ এ জীবনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পাঠদান করেছি। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির কাছ থেকে ন্যূনতম কোনো সম্মান আমি পাইনি। আপনি যেহেতু একজন নিয়মিত লেখক। তাই আপনাকে এ বিষয়ে একটি কলাম লেখার অনুরোধ করছি। তিনি আমাকে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, আর তারা এখন করছেন কী?’ শিরোনামে লেখার অনুরোধ করেন। বিষয়টি আমার অন্তরে দারুণভাবে রেখাপাত করলো। কারণ, উনি দেশের এমপিওভুক্ত একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে সমাসীন একজন শিক্ষক ও সিনিয়র নাগরিক। তিনি দেশ ও জাতি গঠনে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনও পালন করে চলেছেন। সুতরাং তার কষ্টের অনুভূতিটি আমাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করলো। এছাড়া আমিও ব্যক্তিগতভাবে একটি বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সুতরাং এমপিওভুক্ত বেসরকারি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে আমি কম-বেশি অবহিত আছি। সম্মানিত প্রিন্সিপালের ফোনের সূত্র ধরে আমার আজকের এই কলামের সূত্রপাত। অন্তরের অন্তস্থল থেকে সম্মানিত ঐ শিক্ষককে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আজকের লেখা শুরু করছি।

দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণত দুই রকমের। এক প্রকার হলো, নন এমপিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আর অন্যটি হলো, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমপিও শব্দটি ইংরেজি পরিভাষার একটি সংক্ষিপ্ত টার্ম। টার্মটির পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো, ‘মান্থলি পে অর্ডার’; যার বাংলা অর্থ হলো, মাসিক বেতন আদেশ। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা হয়। দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা ২৮ হাজার। আর এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ৫ লাখ। দেশে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য ১৯৭৭ সালে প্রণীত হয় ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালা। আর ২০০৯ সালে বেসরকারি ডিগ্রি কলেজ ও ফাজিল-কামিল মাদ্রাসার জন্য আলাদাভাবে প্রণীত হয় গভর্নিং বডি বিধিমালা। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ম্যানেজিং কমিটি। আর কলেজ ও ফাজিল-কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য গঠিত হয় গভর্নিং বডি। ১৯৮০ সালে তৎকালীন সরকার বেসরকারি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিভুক্তির কাজ শুরু করে। এমপিওভুক্তির সেই কার্যক্রম অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি এবং গভর্নিং বডির মৌলিক ও প্রথম কাজ হলো, প্রতিষ্ঠানগুলোর লেখাপড়ার মান নিশ্চিত করা। এ কমিটির দ্বিতীয় কাজ হলো, আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা তদারকি করা। মূলত লেখাপড়ার মান নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ধারণা থেকেই ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি বিধিমালা গঠিত হয়েছিল ।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যমান বিধিমালায় কিছু ত্রুটি আছে। এ ত্রুটির সুযোগে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও অনেক নিরক্ষর ব্যক্তি উক্ত ম্যানেজিং কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেয় সাধারণত শিক্ষা বোর্ড। কলেজগুলোর কমিটিকে অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর ফাজিল-কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির অনুমোদন দেয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি বিধিমালাতে জেলা শহরে অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠানে সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলাপ্রশাসকের নাম উল্লেখ আছে। জেলা সদরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে এডিসির নাম উল্লেখ আছে। আর থানাগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে নাম উল্লেখ আছে টিএনও সাহেবের ।

কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান কমিটিগুলো গঠনে নানা রকম রাজনৈতিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রিন্সিপাল মহোদয় কমিটি গঠনে অপেক্ষাকৃত যোগ্য তিন জন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে সেটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যাত হয়। সেখানে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশ নিয়ে অপেক্ষাকৃত অযোগ্য ও এলাকার মাস্তান টাইপের লোককে কমিটিতে জায়গা করে দেয়া হয়। এমপি মহোদয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে চরম রাজনৈতিক ব্যক্তিটি কমিটিতে মনোনীত হন। মনোনীত উক্ত কমিটি কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে খবরদারি ও ধান্ধাবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কারণে-অকারণে সভাপতি সাহেব প্রতিষ্ঠানে এসে বিধিবহির্ভূত নানা আদেশ প্রদান করেন। লেখাপড়ার মান নিশ্চিতের জন্য কমিটি গঠিত হলেও সে বিষয়ে উক্ত কমিটির কোনো মাথা ব্যাথা থাকে না। প্রতিটি দিন ‘এটা করো, ওটা করো’ মর্মে নির্দেশের মাধ্যমে প্রিন্সিপালকে তটস্থ রাখেন। অর্ডিন্যান্সে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এ কমিটি একজন শিক্ষককে নিয়োগ, বিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা রাখে। এ ক্ষমতাবলে যে কোনো কারণ দেখিয়ে একজন শিক্ষককে এ কমিটি ৬ মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে অপসারণ করতে পারে। একজন শিক্ষকের পদোন্নতি নির্ভর করে উক্ত কমিটির সুপারিশের উপর। এক্ষেত্রে কমিটির প্রভাবশালীরা তাদের পছন্দের শিক্ষককে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে যোগ্য ও সিনিয়র শিক্ষকগণ বঞ্চিত থেকে যান। পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতার বিপরীতে স্বজনপ্রীতি, দলীয় অন্ধত্ব ও ঘুষ বাণিজ্য গুরুত্ব পায়। প্রভাষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএ-এর হাতে থাকলেও অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহসুপার এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে উক্ত কমিটির হাতে।

ফোন প্রদানকারী প্রিন্সিপাল মহোদয় বলেন, বিধিতে গভর্নিং বডির সভাপতির যোগ্যতা হিসেবে এমএ পাস রাখা হলেও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। সে কারণে সমাজের সবচেয়ে দুষ্টু ও প্রভাবশালী লোকেরা কমিটিতে স্থান পায়। এসব দুষ্টু লোকেরা সারাক্ষণ শিক্ষকদের অপ্রয়েজনীয়ভাবে দৌড়ের উপর রাখেন। এ লেখকের কাছে কামিল মাদ্রাসার অন্য একজন প্রিন্সিপাল বলেন, প্রতিষ্ঠানের কমিটি একটি চাঁদাবাজ ও মাতুব্বর কমিটি। এ কমিটি সব সময় আমার উপর আদেশের ছড়ি ঘুরাতে থাকে। সারাক্ষণ সভাপতির স্বভাবে খাই খাই ভাব বিরাজমান থাকে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে টাকা তুলে মাদ্রাসার ব্যয় দেখাতে বাধ্য করে। অনিয়মে সম্মত না হলে রাজনৈতিক রং দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে চাকরিচ্যুত করে। কমিটির এহেন নির্যাতনের যাতাকলে নিষ্পেসিত হয়ে আমি বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। প্রতিদিন ওষুধ খেয়ে একটু ঘুমাই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানে গেলে আবার সভাপতির ভয়ানক মেন্টাল টর্চার! প্রতিষ্ঠানে আমার যেতে একটু দেরী হলেও অথর্ব কমিটির লোভী মানুষগুলোর আসতে দেরী হয় না।
এ প্রসঙ্গে ডিগ্রি কলেজের একজন ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু মন্তব্য পেশ করেন। তাঁর মন্তব্যগুলো হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো: ১. কলেজগুলোতে সমাজের সবচেয়ে অসৎ, লোভী ও মূর্খ লোকেরা মনেনীত হয়। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবে তারা কমিটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতেই তারা কমিটিতে আসতে উদগ্রীব থাকেন। ২. এসব লোক স্থানীয় বিভিন্ন গোত্র ও দল থেকে মনোনীত হন। ফলে তাদের দ্বারা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো উপকারতো হয়ই না, বরং প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নোংরা দলাদলির সৃষ্টি হয়। ৩. প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন তাদের অধিকাংশই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করা পোস্ট গ্রাজুয়েট। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার পিএইচডি ডিগ্রিধারীও আছেন। অথচ, কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত লোভি ও অশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ উল্লেখিত পোস্টগ্রাজুয়েটদের মূল্যায়ন করেন না, বরং তাদেরকে নিজেদের কাতারে নামিয়ে আনেন। ৪. মনোনীত ব্যক্তিবর্গ নিজেদেরে প্রভু আর শিক্ষকদের সেবাদাস মনে করেন। ৫. পাঁচ টাকার বিড়ি থেকে শুরু করে তাদের কোনো আবদারেরই যেন শেষ থাকে না। ৬. অকারণে নানা অভিযোগ করে একজন শিক্ষককে তারা সামাজিকভাবে হেয় করেন। আর শিক্ষকগণ সম্মান ও চাকরি হারানোর ভয়ে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেন। ৬. দুর্নীতিবাজ ছাড়া এ পর্যন্ত কোনো ভালো লোককে কমিটিতে পাওয়া যায়নি। এরা কলেজের উন্নয়নের নামে কলেজের টাকা ভাগবাটোয়ারার কাজে সময় ব্যয় করেন। ৭. কলেজের অর্থ তদারকি না করে প্রিন্সিপালের সাথে যোগসাজশে কলেজের টাকা মারার কলা-কৌশল ও ফন্দি-ফিকির তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। ৮. কাকে কীভাবে বেকায়দায় ফেলে টাকা খাওয়া যায়, এ জাতীয় কাজে কমিটি ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। ৯. এমন অনেক সভাপতি আছেন, যিনি বেতন বিলে প্রতিস্বাক্ষরের সময়ও টাকা নিয়ে থাকেন।

এসব কারণে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগে অনিয়ম ও উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এর কোনো প্রতিকার নাই। বিভিন্ন মিডিয়ায় এটি প্রকাশ পেলেও কর্তৃপক্ষ এক অজানা কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। অনিয়ম আর নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। শিক্ষার মান বাড়ার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসন্মুখ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। আর্থিক ও প্রশাসনিক কেলেংকারি বেড়েই চলেছে।

পদাধিকারবলে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব থাকেন প্রিন্সিপাল ও প্রধান শিক্ষক। এ কারণে কোনো অনিয়মের দায়ভারের জন্য প্রিন্সিপাল অথবা প্রধান শিক্ষককে দায়ী করা হয়। ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে প্রিন্সিপাল বা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যৌথভাবে সভাপতি ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর করেন। সভাপতি ইচ্ছেমত এ লেনদেন সম্পন্ন করে থাকেন। বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে এ কমিটি প্রতিষ্ঠানের ফান্ড তছরুপ করে। প্রিন্সিপাল বা প্রধান শিক্ষক কোনো চেক বা ভাউচারে স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তাকে নানাভাবে নাজেহাল করা হয়। এমনকি প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে চাকরিচ্যুত করা হয়। ফলে চাকরি হারানোর ভয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে চুপ করে থাকেন। কখনও কখনও এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ কমিটির সঙ্গে মিলেমিশে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। নানা অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ব্যবহার করেন।

এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী শিক্ষকগণ এসমস্ত অনাকাক্সিক্ষত অত্যাচার থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। তারা জাতি গঠনে কর্তৃপক্ষের সহায়তা ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তাদের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরে পাবার আকুল আবেদন পেশ করেছেন। তাদের প্রশ্ন হলো, সরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষকদের সম্মান সুরক্ষিত থাকলেও তাদের সম্মান কেন ভুলুণ্ঠিত হবে? অথচ, তারা সরকারি স্কুল ও কলেজের ন্যায় একই দেশের একই শহরে সমান শিক্ষা প্রদান করে চলেছেন। তারা যে, সিলেবাস অনুসরণ করছেন, বেসরকারি শিক্ষকগণও একই সিলেবাসে পাঠ দান করছেন। সেখানে শিক্ষকগণের সম্মান অটুট থাকলে তাদের থাকবে না কেন? এমতাবস্থায় তাদের দাবি হলো, এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা হোক। অথবা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কমিটি মনোনয়ন দেয়া হোক! জেলা পর্যায়ে ডিসি এবং এডিসি ও থানা পর্যায়ে টিএনওকে কমিটির সভাপতি নিয়োগের যে বিধান আছে সেটার যথাযথ অনুসরণ করা হোক! এছাড়া সমাজে শিক্ষিত, শিক্ষানুরাগী ও সজ্জন হিসেবে পরিচিত জনকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করা হোক! বলা বাহুল্য, তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রশ্নাতীত।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মোঃ সাইফুল ইসলাম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩২ এএম says : 0
সত্যবাণী সাহসী উচ্চারণ। ধন্যবাদ
Total Reply(0)
jack ali ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:৫৫ পিএম says : 0
Allah sectors criminal's have spread their criminal activities, oppressions, only way out is to rule our country by Qur'an.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন