ঢেউয়ের কলতান, হেইয়োরে হেইয়ো আর সারিবদ্ধ বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী। দু’পাড়ের হাজারো দর্শকের করতালিতে উৎসব মুখর পরিবেশ। ভাদ্রের প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উপভোগ করেন তিতাস পাড়ের প্রায় অর্ধ-লাখের মত মানুষ। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে করোনার প্রাদুর্ভাস কমে আসার ২ বছর পর এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ‘নৌকা বাইচ’ প্রতিযোগিতা। গত রোববার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির জন্য বিগত দুই বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলাকালে তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর সুকুমার বিনোদন পিপাসু দর্শকদের প্রাণভরা উচ্ছাস যেন একাকার হয়ে উঠে। তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার শিমরাইল কান্দিগাঁও গ্রাম পয়েন্ট থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে পৌর এলাকার মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পর্যন্ত (প্রায় দেড় কিলোমিটার) গিয়ে প্রতিযোগিতা শেষ হয়।
নৌকা বাইচে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের ৬টি এবং কিশোরগঞ্জের ১টি নৌকা রয়েছে। প্রথম চারটি ধাপে ১৩টি নৌকা প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। প্রত্যেকটি ধাপ থেকে একটি করে বিজয়ীসহ চারটি নৌকা চুড়ান্ত প্রতিযোীগতায় অংশ নেয়। গতকাল বিকেলে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
বাহারি রঙের পোশাক পরিহিত প্রতিযোগি নৌকা বাইচের মাঝিদল তাদের সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। দু’পাড়ের দর্শনার্থীরাও স্বতঃস্ফুর্ত আবেগে সুর মেলায় মাঝিদের সাথে-‘মারো টান, হেইয়ারে হেইয়াহো’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারি নৌকাকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয়দের ৬০ হাজার ও তৃতীয় অধিকারি নৌকাকে ৩০ হাজার টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া বাকি অংশগ্রহনকারি প্রত্যেক দলকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন