শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন কবে হবে?

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সংকট বেড়েই চলেছে। শরণার্থীদেরও মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। তবুও তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন হচ্ছে না। প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে কয়েক মাসে প্রায় ৭.৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তারও অনেক আগে থেকেই প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এ দেশে। সব মিলে বর্তমানে নিবন্ধিত ১২.৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে। এর মধ্যে ৫ লাখ শিশু। এছাড়া, প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। বিবাহও হচ্ছে ব্যাপক। তাদের অনেককে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। সব শরণার্থীর স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে প্রথম থেকেই। জাতিসংঘও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। শরণার্থীরাও স্বদেশে যেতে ইচ্ছুক। মিয়ানমার তাদেরকে ফেরত নিতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করেছে ২০১৮ সালে। তবুও এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যেতে পারেনি দেশে। কবে ফিরতে পারবে, তাও নিশ্চিত নয়। অনেকের আশঙ্কা, রোহিঙ্গা সংকট ফিলিস্তিনদের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হতে পারে। উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, স্যানিটেশন, আবাসন, নিরাপত্তা, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, দুর্যোগ মোকাবেলা ইত্যাদিতে সহায়তা করে ২৪টি দেশ ও প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের মানুষ ব্যক্তিগতভাবেও সহায়তা করে। এসব সহায়তা পরিচালিত হয় ইউএনএইচসিআর’র মাধ্যমে। উপরন্তু এ সংস্থার অর্থে ক্যাম্পগুলোতে ৯২টি দেশি-বিদেশি এনজিও ২৫ ধরনের সেবার কাজ করছে। প্রতিশ্রুত সহায়তার গড়ে ৭০ ভাগের বেশি পাওয়া যায় না। তদুপরি ২০২০ সাল থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তা কমছে বৈশ্বিক মহামন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে অর্থ ব্যয় করে। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আলাদা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে, যার পরিমাণ ২,৩১২ কোটি টাকা।
গত শতকের ষাটের দশক থেকেই মিয়ানমারের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর ন্যায় রাখাইনের রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক নিপীড়ন চলছে। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হলে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ভয়ে প্রায় ২.৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। অতঃপর দুই দেশের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে তখন রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে গিয়েছিল। শর্ত ছিল, রাখাইনে ফিরে গেলে সব অধিকারই ফিরে পাবে তারা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি! ভয়াবহ নির্যাতন,বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও নারী-শিশুসহ বহু মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করা হয়েছে। উপরন্তু ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব ও ২০১৫ সালে ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের। ২০১৭ সালেও ব্যাপক ধ্বংস, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্ম করা হয়েছে। এসবের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায় বহুবার। অনেক আন্তর্জাতিক তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে বিষয়টি। এই জাতিবিনাশী কর্মে রাজ্যটি প্রায় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবিতদের অধিকাংশই প্রাণভয়ে পালিয়েছে বিভিন্ন দেশে। প্রায় ৬ লাখ রয়ে গেছে এখনো। তারাও প্রায় বন্দিদশায় ও অত্যন্ত মানবেতরভাবে রয়েছে!
এদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশের এবং সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি গত ৪ সেপ্টেম্বর এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিই। কিন্তু তারা কতদিন এখানে থাকবে? রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেখানে কেউ মাদক কারবারি, কেউ সশস্ত্র সংঘাত, কেউ নারী পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। তাই তারা যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল’। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন ব্যাপক হারে এ দেশে প্রবেশ করেছিল, তখন তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউম্যানটি উপাধিও দেওয়া হয়েছিল আ’লীগ থেকে এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং একজন রোহিঙ্গাকেও দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সীমান্ত জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
ভারতেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল প্রাণ বাঁচাতে। সে দেশের সরকার পরবর্তীতে তাদের অনেককে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাদেরও অধিকাংশই এসেছে বাংলাদেশে। যারা ভারতে রয়ে গেছে, তারা চরম কষ্টে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। ভারত সরকার তাদের ন্যূনতম সুবিধা দিতেও আগ্রহী নয়। তবে, ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যাওয়া চিনাদের গ্রহণ ও আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সাদরে। কারণ, মিজো ও চিনারা একই এথনিসিটির। পাহাড়ি নদী-টিয়াউ এর কারণে তারা বিভক্ত হয়েছে। এক ভাগ পড়েছে ভারতের মিজোরামে অন্যভাগ পড়েছে মিয়ানমারের চিন স্টেটে। ব্রিটিশ শাসনামলে কোনো বিভক্তি ছিল না। তাই একত্রেই মিলে-মিশে ছিল তারা। ফলে তাদের মধ্যে রয়েছে আত্মিক বন্ধন। তাই বিপদের দিনে আশ্রয় দিয়েছে। রাজ্য সরকারের হিসেবে তাদের সংখ্যা ৩১ হাজার। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। ভারত সরকার তাদেরকে শরণার্থী বলে স্বীকৃতি দেয়নি। রাজ্য সরকার, স্থানীয় মানুষ, বিভিন্ন এনজিও এবং চার্চ সক্রিয়ভাবে তাদের সার্বিক সহায়তা করছে। তাই আশ্রয় শিবিরগুলো চলছে ভালভাবে।
জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে নিন্দা, প্রতিবাদ, প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছে বহুবার। উপরন্তু তাদের খাওয়া, পরা ও চিকিৎসাব্যয় নির্বাহ করছে। এছাড়া, গাম্বিয়া রাখাইনে গণহত্যার বিচারের জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে ২০১৯ সালে ওআইসির পক্ষ থেকে। তাতে আপত্তি জানিয়েছিল মিয়ানমার। আইসিজে সে আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে গত ২২ জুলাই। ফলে গাম্বিয়ার মামলার শুনানি চলতে আর কোনো বাধা নেই। সর্বোপরি জাতিসংঘে ওআইসি ও ইইউ উপস্থাপিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে গত ১৮ নভেম্বর। অপরদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশ মিয়ানমারের কিছু সেনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আশিয়ানও মিয়ানমারকে সাসপেন্ড করেছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দিতে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এসবকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না মিয়ানমার। বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের পাশাপাশি চীন ও ভারতের মাধ্যমে ব্যাপক চেষ্টার সুফলও মিলছে না। অবশ্য, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল বিবৃতি, নিন্দা ইত্যাদির মধ্যেই সীমিত থেকেছে। আর চীন ও ভারতের কর্মকাণ্ড চলছে নামকাওয়াস্তে। অর্থাৎ দু’পক্ষকেই কথামালায় খুশি করছে। কারণ, তারা প্রায় একচেটিয়াভাবে সামরিক ও বেসামরিক বাণিজ্য করছে মিয়ানমারের সাথে (একই অবস্থা বাংলাদেশের সাথেও)। চীন রাখাইন রাজ্যে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলছে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। ভারতেরও বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ানমারের কালাদান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। উপরন্তু সেখান দিয়ে থাইল্যান্ডে যাওয়ার বিশাল রাস্তা নির্মাণ করছে। দেশ দু’টির বিশাল সামরিক বাণিজ্য তো রয়েছেই। এই দু’টি শক্তিশালী ও প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্কের কারণেই মিয়ানমার বৈশ্বিক শক্তিকে পাত্তা দিচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশটির নতুন করে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে রাশিয়ার সাথে। সম্প্রতি রাশিয়ার ইস্টার্ন ইকোনোমিক সন্মেলনে যোগদান করেন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের শীর্ষ জেনারেল হ্লাইং। তখন তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা চুক্তি হয়েছে। এর আগে কম্বোডিয়ায় আশিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যাওয়ার আগে গত ৩ আগস্ট রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ মিয়ানমার সফর করেন এবং দেশটির শীর্ষ জেনারেলদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তখন তিনি মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে দেশে ‘স্থিতিশীলতা’ আনা এবং আগামী বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাশিয়ার সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন। ফলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। সম্প্রতি জেনারেল হ্লাইং রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া’কে বলেছেন, মিয়ানমারে সংকট বা লড়াই নিয়ন্ত্রণে আছে। ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন দেয়ার জন্য সব কিছু করবে। নির্বাচন হবে বিদেশিদের হস্তক্ষেপমুক্ত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল হ্লাইং।
ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই মিয়ানমারের সামরিক সরকার সাবেক সরকারের শীর্ষ নেত্রী ও নোবেল বিজয়ী সুচিসহ শীর্ষ বেশিরভাগ নেতাকে গ্রেফতার ও প্রহসনের বিচারে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। ফাঁসিও দিয়েছে অনেককে। গ্রেফতারও করেছে বহু নেতা-কর্মীকে। তাই দেশটির সব রাজনৈতিক দল মিলে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে সামরিক জান্তা বিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করেছে। তাতে ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর সশস্ত্র গ্রুপগুলোও সম্পৃক্ত হয়েছে। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের মাত্র ১৭% এলাকা স্থিতিশীল নিয়ন্ত্রণ আছে সেনাবাহিনীর হাতে। বাকিটা বিরোধীদের হাতে, না হয় তার দখল নিয়ে লড়াই চলছে। এই পরিস্থিতিতে এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। দ্বিতীয়ত: রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেতে চায় নিজ ভিটে-মাটিতে। ফিরে পেতে চায় নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার এবং নিশ্চয়তা চায় পূর্ণ নিরাপত্তার। কিন্তু জান্তা সরকার এসব দিতে নারাজ। তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে ক্যাম্পে রাখতে চায়। যাতে নারাজ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সদ্য বিদায়ী হাইকমিশনার মিশেলও ঢাকায় গত ১৭ আগস্ট বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত রাখাইনের পরিস্থিতি অনুকূল হবে না ততদিন রোহিঙ্গাদের পাঠানো ঠিক হবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেসও গত ২৫ আগস্ট বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিগগিরই নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। জাতিসংঘ গঠিত মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত কাঠামোর প্রধান কৌমজিয়ান গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে বলেছেন, রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের জনগণের ওপর সংঘটিত ৬৭টি তথ্য-প্রমাণের প্যাকেজ আইসিজে, আইসিসি ও অন্যান্য বিচারিক কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। গত বছর থেকে মিয়ানমারে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ আরো জোরালো হয়েছে। অন্যদিকে, সেনা শাসনের অবসান হয়ে গণতান্ত্রিক চালু হবে কবে তা অনিশ্চিত। অন্যদিকে গণতন্ত্র চালু হলেও রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত নিরসন হবে না। কারণ, এটি সৃষ্টিই হয়েছে গণতান্ত্রিক তথা গত সুচি সরকারের সময়েই। অবশ্য, জাতীয় ঐক্য সরকার ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তারা কবে ক্ষমতায় আসবে, এলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি-না তা অনিশ্চি। কারণ, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মধ্যে উগ্রবাদীদের উত্থান হয়েছে। তারা চরম সংখ্যালঘু বিরোধী। সর্বোপরি প্রত্যাবাসন শুরু হলেও তা শেষ হতে দির্ঘদিন লাগবে। কারণ, ২০১৮ সালের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার-বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা। সে মতে ১২.৫ লাখ শরণার্থীকে ফিরতে বহু বছর লাগবে।
এই অবস্থায় প্রতীয়মান হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘস্থায়ী হবে। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গত ২৫ আগস্ট বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে। কিন্তু কবে থেকে ও কতজনকে নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। তাছাড়া কিসের ভিত্তিতে নেওয়া হবে, কাদের নেওয়া হবে তার কোনো গাইড লাইনও নেই। তবে যাদেরকেই নেওয়া হবে তাদের ও বাংলাদেশের কল্যাণ হবে। আরো কল্যাণ হবে আরো কিছু দেশ রোহিঙ্গাদের নিলে। যা’হোক, সব রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রব্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশকে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতেই হবে। এছাড়া, বিশ্ব সম্প্রদায়েরও উচিৎ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা পালন করা ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা। স্মরণীয় যে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইন্দো-প্যাসিফিকের ২৪টি দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ক্যাম্পের বাস্তব চিত্র স্বচক্ষে দেখেন। তখন রোহিঙ্গা নেতারা তাদের বলেছেন, আমরা তৃতীয় কোনো দেশে নয়, আমাদের দেশেই ফিরতে চাই। সে জন্য আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করা হোক। যার অন্যতম হচ্ছে, রাখাইনে জাতিসংঘের প্রয়োজনীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা। নতুবা সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রত্যাবাসনও শুরু হবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
যতদিন বাংলাদেশে আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন করা না হবে ততদিন রোহিঙ্গা সমস্যা থাকবে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করলে কাফেররা আমাদেরকে ভয় করবে আল্লাহ ওদের মনের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিবে আমরা মায়ানমারের সাথে যুদ্ধ করে বার্মাকে দখল করে ফেলব এবং কোরআন দিয়ে মায়ানমার শাসন করব তাহলে মায়ানমারে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে যুদ্ধ সব বন্ধ হয়ে যাবে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন