কোলষ্টেরল একটি রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের শরীরের প্রয়োজন হয় কোষের আয়রণ তৈরী করার জন্য এবং এছাড়াও ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন ও ভিটামিন-ডি তৈরী করার জন্য। লিভার শরীরের শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ কোলষ্টেরল তৈরী করে থাকে, বাকী কোলষ্টেরল আমরা যেসব খাবার খাই সেখান থেকে উৎপন্ন হয় যেমনঃ মাংস, ডিম, মাছ এবং দুগ্ধজাত পণ্য। রক্তের কোলষ্টেরলের রেগুলেশন হয় লিভার দ্বারা। খাবার গ্রহণ করার পর খাবারে বিদ্যমান কোলষ্টেরল ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়ে থাকে এবং মেটাবোলাইজড হয়ে লিভারে জমা হয়। শরীরের প্রয়োজন হলে লিভার তা নিঃসরণ কওে রক্তে দেয়। যখন অতিরিক্ত কোলষ্টেরল শরীরে বিদ্যমান থাকে তখন তা রক্তের ধমনীতে জমা হয়ে প্ল্যাক তৈরী করে এবং রক্তনালীকে সংকীর্ণ করে দেয়। কোলষ্টেরল রক্তে মুক্তভাবে চলাচল করে না। কোলষ্টেরল রক্তে সংযুক্ত থাকে বা বাহিত হয় লাইপোপ্রোটিন দ্বারা। লাইপো বলতে বুঝায় ফ্যাট। তিন ধরনের লাইপোপ্রোটিন আছে। লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এল.ডি.এল) এ থাকে উচ্চ অনুপাতে কোলষ্টেরল যা খারাপ কোলষ্টেরল হিসাবে পরিচিত। লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন এর পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হতে পারে।
আর্টারি বা ধমনী যখন সংকীর্ণ হয় তখন তাকে এথেরোস্কেলেরোসিস বলা হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহ বা চলাচলের গতি কমে যায়। এভাবে রক্ত জমাট বাধলে হার্ট এ্যাটাক অথবা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন হতে পারে। হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচ.ডি.এল) তৈরী হয় প্রোটিনের উচ্চ মাত্রা এবং কোলষ্টেরলের কম মাত্রার মাধ্যমে। এটি ভালো কোলষ্টেরল নামে পরিচিত। ভেরি লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (ভি.এল.ডি.এল) এ এল.ডি.এল থেকেও কম প্রোটিন থাকে যা প্ল্যাক গঠনে সহায়তা করে থাকে। ট্রাইগ্লিসারাইড এক ধরনের ফ্যাট কোলষ্টেরল সমৃদ্ধ প্ল্যাক তৈরী করতে পারে যদি এল.ডি.এল কোলষ্টেরল বেশী থাকে আর এইচ.ডি.এল কোলষ্টেরল কম থাকে। টোটাল কোলষ্টেরল বলতে বুঝায় এইচ.ডি.এল কোলষ্টেরল, এল.ডি.এল কোলষ্টেরল এবং ২০% ট্রাইগ্লিসারাইডের যোগফল যা রক্ত পরীক্ষায় নির্ধারণ করা হয়। যদি টোটাল কোলষ্টেরল বেশী থাকে তাহলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
খাবারের মধ্যে কোলষ্টেরল আসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে যা পাওয়া যায় মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য থেকে। কিছু ভেজিটেবল অয়েল যা তৈরী হয় নারকেল, পাম এবং কোকোয়া থেকে সেগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশী মাত্রায় থাকে। লিপিড প্রোফাইল করার আগে, রোগীর ১২ ঘন্টা কিছু না খেয়ে থাকা উচিত। দিনে একবার এলকোহল স্বল্প মাত্রায় সেবন করলে এইচ.ডি.এল কোলষ্টেরল বাড়তে পারে কিন্তু অতিরিক্ত এলকোহল লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং এল.ডি.এল কে বাড়াতে পারে। এইচ.ডি.এল কোলষ্টেরলকে ভালো কোলষ্টেরল বলা হয়। কারণ এটি খারাপ কোলষ্টেরলকে শোষণ করে এবং এটিকে লিভারে বহন করে নিয়ে যায়, যার মাধ্যমে এটি শরীর থেকে অপসারিত হয়ে থাকে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমে যায়। উচ্চ মাত্রায় টাইগ্লিসারাইড কম এইচ.ডি.এল কোলষ্টেরল বা বেশী এল.ডি.এল কোলষ্টেরলের সাথে সংযুক্ত হয়ে হার্ট এ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকি বৃদ্ধি করে। শুধু ট্রাইগ্লিসারাইড বেশী থাকলেও আপনার হৃদরোগ হতে পারে। অতএব, কোলষ্টেরলের পাশাপাশি রক্তে আপনার ট্রাইগ্লিাসারাইডের পরিমাণ অবশ্যই মনিটর করতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন