শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

দেশ যেন এখন ‘পুলিশী রাষ্ট্র’: রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:২৩ পিএম

রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, বাংলাদেশ আজকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখানে গণতন্ত্র নিহত, মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত। এমতাবস্থায় জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে আমাদের সত্যিকারের বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। যেই সরকার গণবিরোধী সেই সরকারকে টেনে নামাতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন থাকবে ততদিন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লেশ মাত্র থাকবেনা বলে তারা মন্তব্য করেন।

শনিবার (১৭ শনিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমবেত উদ্যোগে “রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়” শীর্ষক রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, একাত্তর হলো আমাদের সবচেয় গর্বের উপাখ্যান। কিন্তু বাংলাদেশ যে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে তা বুঝা মুশকিল। কেননা বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আজ ভুলে যাওয়া হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল মুক্তিযোদ্ধাদেরেক ভুলে যেতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সাধারণ শ্রমিক, ছাত্র ও কিছু বিভিন্ন পেশার লোকের দ্বারা। কিন্তু আজকে নতুন প্রজন্মকে শেখানো হচ্ছে কেবল একজনের ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধ হয়েছিলো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক এ কথা কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি মওলানা ভাসানী ছাড়া। আমাদের রাজনীতিবিদেরা পরশ্রীকাতর। তিনি আরো বলেন, মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে সাথে অধিকাংশ ক্যান্টনমেন্টে বিদ্রোহ শুরু হয়। যোগ দিতে শুরু করেন হাজার হাজার তরুণ। সুতরাং দেশকে স্বাধীন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া হয়না। ৭১ এর যুদ্ধ ছিলো গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য। কিন্তু আজকে সেই আদর্শ বিলীন হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদেরা শুধু দলের লোক চেনেন আর পকেট ভরতে ব্যস্ত।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন নেই। আছে শুধু লুটপাট। সুইস ব্যাংকে বাড়ছে বাংলদেশিদের টাকা। অথচ সুপ্রিম কোর্ট চাইলেই এসব টাকার মালিকের তালিকা নিতে পারেন। কিন্তু সরকার সেভাবে চায়নি।

তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষ অধিকার হারা। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হেয় করা হয়েছে। বর্তমানে নাকি আড়াইলাখ মুক্তিযোদ্ধা; তারা কোথা থেকে আসলো? ৮ জন সচিবও নাকি মুক্তিযোদ্ধা? আসলে তারা ভুয়া। তারা আর রণাঙ্গণের যোদ্ধারা এক হতে পারেনা। এটা আমাদের জন্য অপমানজনক। আসলে মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সমাজের আইকন হতে না পারে সেজন্য এটা করা হয়েছে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য পাল্টে ফেলেছে। শেখ হাসিনা যতদিন থাকবে ততদিন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লেশ মাত্র থাকবেনা। আজকে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র নিহত, মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত। এমতাবস্থায় জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে আমাদের সত্যিকারের বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু সিদ্ধান্ত তা হতে হবে ঢাকায়। অন্য কোনো দেশের রাজধানীতে নয়। আমরা আর কোনো গৃহপালিত বিরোধীদল চাইনা। আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে ২৫টি আসন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে সরকার গঠিত হবে। এজন্য এখন থেকেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, দেশে বর্তমান যে দুর্নীতি ও কুশাসন চলছে এভাবে চলতে থাকলে দেশের স্বার্বভৌমত্ব থাকবে কি না সন্দেহ! আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ। যেখানে থাকবে গণতন্ত্র। আসলে এই সরকারের কোনো লজ্জা শরম নেই। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যত গুলি আছে করুক।

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। প্রতিবেশি ভারত সীমান্তে আমাদের মানুষকে হত্যা করছে। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার লোককে তারা হত্যা করেছে। আমরা তা নীরবে সয়ে যাচ্ছি! কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করতে পারছিনা। অথচ বিশ্বের কোনো দেশের সীমান্তে এভাবে মানুষ হত্যা করা হয়না। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালে আমার দেশের নাগরিককে নির্মমভাবে সীমান্তে গুলি করে মারলো কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটা প্রতিবাদও করেননি। এজন্যই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম? মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আবারো জেগে ওঠে লড়াইয়ে নামতে হবে। তা না হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে রোখা যাবে না। আগামী নির্বাচনের আগেই জাতীয় সরকার গঠন এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্থান দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অন্য বক্তারা বলেন, দেশে গত ১৪ বছর ধরে দেশে চলছে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাজ করে চলেছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদা, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাবেক উপমন্ত্রী সিরাজুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব এসএম সানাউল্লাহ, সাবেক এমপি আব্দুল বারী, জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আরোগ্য কামনা ও মুক্তির দাবিতে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকেও মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন