অবশেষে টাঙ্গাইলের দারুল উলুম কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের পদ থেকে হিন্দু শিক্ষক গোপাল চন্দ্র বসাককে সরিয়ে এর আগে দায়িত্বে থাকা মাওলানা সোহরাব হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাদরাসাটিতে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রমও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই বোধোদয়ের জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই। কেননা, মাদরাসা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদটি কোনো গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ নয়। এ পদের সাথে ঈমান জড়িত। আরবী ভাষা জানা, কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও পন্ডিত হওয়া জরুরি। সেই সাথে কোরআন-সুন্নাহর ওপর পরিপূর্ণ আমল থাকাও প্রয়োজন। মাদরাসা শিক্ষা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র ও অন্যতম শ্রদ্ধাস্থল। এমতাবস্থায় একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্ত করার মানে হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা ও কোরআন-সুন্নাহর প্রতি অবজ্ঞা দেখানো। স্বাভাবিকভাবে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে এটা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। সেই ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতেই মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনসহ দেশের বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে। ইসলামী পন্ডিত ও আলেম-ওলামা তীব্র প্রতিবাদ করেন। এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে উপরের নির্দেশে শুক্রবার সকালে গভর্নিং বডির সভায় ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
উপমহাদেশে ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখলের পর মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত কোলকাতা আলিয়া মাদরাসায় পরপর ২৬ জন অমুসলিমকে প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে মাদরাসা শিক্ষা তার পূর্ব স্বকীয়তা হারায়। এদিকে মুসলমানরা রাজার জাতি থেকে ভিখারির জাতিতে পরিণত হয়। আর ইংরেজরা তাদের ক্ষমতা ২০০ বছর দীর্ঘায়িত করে শাসন, শোষণ ও লুটপাট চালাতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন মুসলিম দেশ এবং শাসকরাও মুসলমান। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা মাদরাসায় হিন্দু প্রিন্সিপাল কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এ কারণেই এত ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ।
যা হোক, শেষ পর্যন্ত যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গভীরতা অনুভব করে দ্রুত যৌক্তিক প্রতিকার করেছে, এটাই আশা ও স্বস্তির ব্যাপার। মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তো আছেই। এই সঙ্গে দায়িত্বশীলদের নির্বুদ্ধিতা ও অপরিণামদর্শিতাও রয়েছে। এ কারণে যা অবাস্তব, অপ্রত্যাশিত, অযৌক্তিক, অনেক সময় তেমন ঘটনাও ঘটে যায়। মানুষ এতে অখুশি ও অসন্তুষ্ট হয়। সরকার বিপদে পতিত হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের সব সময় সচেতন থাকা উচিত। বিচার-বিবেচনা ও হেকমতের সঙ্গে কাজ করা উচিত। তা হলে অকাম্য পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। এ কথা অতি সাধারণ মানুষও বোঝে, মাদরাসায় ভিন্ন ধর্মের কোনো শিক্ষককে প্রিন্সিপাল করা সঙ্গত ও উচিত নয়। এই অনুচিত কর্মটি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। অন্যরাও এ থেকে শিক্ষা নেবে বলে আমরা আশা করি।
আমাদের দেশে যথাসময়ে বা দ্রুততম সময়ে প্রায়ই কোনো কাজ হয় না। অহেতুক বিলম্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ক্ষেপণের কারণে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে শুরু করে নানা অঘটনও ঘটে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বলতে গেলে সময় নেয়নি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। এ জন্য সরকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এ রকমক প্রশ্নবিদ্ধ ও অপ্রীতিজনক ঘটনা আর না ঘটুক, এটাই আমরা একান্তভাবে কামনা করি।
লেখক: সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন