ছাত্রী হলের প্রভোস্ট পদত্যাগের দাবি আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার ঘটনায় আহত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সজল কুন্ডুর ৩ দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার ( ১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরবেলা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন তারা।
প্রেসব্রিফিং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ, সজল কুন্ডু, শাহরিয়ার আবেদিন, নওরিন, হালিমা খানম, সাবরিনা শাহরিন রশিদ এবং রাক্তিম সাদমান অংশ নেন। তারা বলেন, “১৬ই জানুয়ারির হামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সজল কুন্ডুকে অন্তত ৯ম গ্রেডের একটি চাকরি এবং নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়ার স্পষ্ট আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সজল এখনো শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি ( সজল) যে ক্যাফেটেরিয়াটি চালাতেন সেটিও কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার একমাত্র কর্মসংস্থান কেড়ে নেয়ায় এমনিতেই স্প্লিন্টার ও বোমার মারাত্মক ক্ষত নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও হিমশিম খাওয়া সজলের সামনে নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে চরম অর্থ সংকট। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম কিছুদিন সরকারী তত্ত্বাবধানে সজলের নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হলেও গত তিনমাস ধরে তাও বন্ধ। বারবার এ ব্যাপারে অবহিত করার পরও সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তরফ থেকেই আর সজলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সজল একাই উদ্যোগী হয়ে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের নামে করা হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়িত করতে হবে, অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে হবে- এ তিন দফা দাবিতে গত ১১ দিন যাবত ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াচ্ছে। আমরা শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সজলের দাবিগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, “আজ থেকে প্রায় আটমাস আগে এইদিনে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। শরীরে শটগানের ধাতব শ্রাপনেল, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারসহ ভয়াল সেইদিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন বহু শিক্ষার্থী । ১৬ই জানুয়ারির ওই নারকীয় ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে শাবিপ্রবির ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার মূল কুশীলব উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন ও আমরণ অনশনের একপর্যায়ে ঢাকা থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাম আমাদের মাঝে আসেন। তাঁরা বলেছিলেন সরকারের উপরমহলের অনুরোধে তারা আন্দোলনস্থলে এসেছেন এবং আমাদের সমস্ত দাবি মেনে নেয়া হবে এমন নিশ্চয়তা তাদের দেয়া হয়েছে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দীর্ঘ ১৬৩ ঘন্টা যাবত অনশনরত ২৭ জন শিক্ষার্থী অনশন থেকে সরে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের সাথে আলোচনার জন্য সিলেটে আসেন । তাদের সঙ্গে আমাদের ৫টি দাবি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে ৮দফা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এখতিয়ারভুক্ত দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তাঁর এখতিয়ারভুক্ত নয় এমন দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিন্তুু বর্তমানে আটমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের দাবিগুলোর অধিকাংশই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের প্রথম এবং প্রধান দাবি ছিল ‘দ্রুততম সময়ে জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করে একজন গবেষণামনা, শিক্ষাবীদ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক’। মন্ত্রী এই বিষয়ে বলেছিলেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এতদিন পরেও আমরা দেখছি শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলার মূল হোতা ফরিদ উদ্দিন আহমদ শাবিপ্রবির উপাচার্য পদে বহাল আছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার কথা ছিল, কিন্তু এতসময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলাগুলো তোলা হয়নি।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন