সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত
উস্কানীমুলক কর্মকান্ডে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পাত্তা দিচ্ছেনা বাংলাদেশ শান্ত প্রতিবাদ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোদের সাথে গুলাগুলি ও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গত দুই মাস ধরে বিদ্রোহ দমনে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ সীমান্তের আরাকান রাজ্যে সেনা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিদ্রোহীদের গেরিলা হামলা মোকাবিলায় পাল্টা সেনা অভিযানে মুহুমুহু গুলি বর্ষণ, যুদ্ধ বিমান থেকে মটার শেল ও বোমা নিক্ষেপের বিকট শব্দে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে মানবতা বিরোধী স্থল মাইন বসিয়ে এবং বাংলাদেশ অব্যন্তরে মটার শেল নিক্ষেপ করে ভিতীকর পরিস্তিতি সৃষ্ট করেছে। এমনকি মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান বাংলাদেশ আকাশ সীমা অতিক্রম করার ঘটনাও ঘটেছে। প্রর্যবেক্ষকদের মতে মিয়ানমারের এসব তৎপরতা বন্ধু শোলভ নয় বরং উস্কানীমুলক।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মটার শেলে নিহত হয়েছে ইকবাল নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। এতে আহত হয়েছেন আরো ৬ জন। একইদিন দুপুরে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত ঘেষা হেডম্যান পাড়ার অংকে থোয়াইং'র ছেলে অন্যথোয়াইং তংচংগ্যা (২৪) স্থল মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়। সীমান্তের ৩৫ নং পিলারের কাছে একাধিক স্থল মাইন বিস্ফোরণে সে আহত হয়। এতে তার একটি পা উড়ে যায়। সীমান্তে বারবার এধরণের ঘটনা সারা দেশের মানুষ ও বিশ্লেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গত সপ্তাহে ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বিস্ফোরিত হয়েছে। ভূখণ্ডের ১২০ মিটারের ভেতরে পড়ে বিস্ফোরিত হলেও ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি কেউ।
বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের পরও মিয়ানমারের সীমান্ত আইন ও আকাশ সীমা লঙ্ঘন উস্কানীমুলক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২২ সালেই মিয়ানমারের পক্ষে প্রথম সীমান্ত আইন ও আকাশ সীমা লঙ্ঘণ শুধু নয়। ইতিপুর্বে এমন ঘটনা অনিয়মিত ঘটেছে। তবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর মিয়ানমার সরকার এভাবে সীমান্ত আইন ও আকাশ সীমা লঙ্ঘণ করে আসছে৷ বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানালেও তারা তা কোনভাবেই গায়ে মাখছে না।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিবেচনায় নিয়ে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রটি পার্শ্ববর্তী কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে (যা কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত) স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন ২০ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ রিয়াসত আজিম জানিয়েছেন, সীমান্ত উত্তেজনার কারণে গত ১৫ দিন যাবৎ সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কটির নির্মাণ কাজ ফের চালু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, সব সীমান্তেই আমরা সতর্ক থাকি। তবে মিয়ানমার সীমান্তে বেশি সতর্ক থাকি। কারণ আমরা একটা বিষয়ে খুব সোচ্চার এ ঘটনার জের ধরে নতুন করে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ যেন করতে না পারে। গোলা ছোড়ায় সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি নিয়ে তিনি বলেন, সাবধানে না চললে ঝুঁকি থেকেই যায়।
২৮শে আগস্ট তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল পড়ার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, আমাদের সীমান্তে এসেছে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে। হয়ত হঠাৎ করে চলে এসেছে। এ নিয়ে আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেসও করেছি। তারা বলেছে, আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য তারা সতর্ক থাকবে।
ওই সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অবিস্ফোরিত মর্টারশেলটি বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়ার ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া তিনি বলেছিলেন, মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছে। তাকে একটা মৌখিক নোটের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার ব্যাপারেও আমরা নিন্দা প্রকাশ করেছি।
গত প্রায় দু'মাস পুর্ব থেকে মিয়ানমার সরকার সীমান্ত এলাকার আরাকান রাজ্যে তাদের বিদ্রোহী দমনে বোমা, মাইন, শেল ও বন্দুকের গুলি এবং বিমান ও কপ্টার থেকে মুহুর্মুহু গোলা ফেলার শব্দে বাংলাদেশ সীমান্তে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছে! সীমান্তের মানুষ ভয়ে, আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে।
ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকা থেকে কিছু বাংলাদেশী তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঘর বাড়ি ছেড়ে দূরে আত্নীয় স্বজনদের বাসা বাড়িতে আশ্রয় গ্রহন করেছেন। অন্যদিকে নো ম্যান্স ল্যান্ডে আটকে পড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রবেশের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত শনিবার পর্যন্ত টানা ২৩ দিন রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছিল। এ সময় আরকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করে আসছিল মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানালে ও কোন কিছুর তোয়াক্কা করেছে না মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিয়টি উস্কানীমুলক বলেই পর্যবেক্ষদের ধারণা। এতে এপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বভাতই
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন