শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

জোয়ারের পানিতে ভাসছে গুচ্ছগ্রাম

মোস্তফা শফিকুল ইসলাম কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা খুলনার কয়রা উপজেলার শেওড়া গ্রামস্থ কপোতাক্ষ নদের চরে প্রায় দু’কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বর্ষাকালের শুরু থেকেই টানা তিন মাস নদীর জোয়ারের পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে আঙ্গিনার বালু ও কাঁচা ঘরের ভিটের মাটি। এছাড়া সেখানে যাতায়াতে সু-ব্যবস্থা নেই, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের। নাগরিক সুবিধা না থাকায় ইতোমধ্যে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ উপকারভোগী ও অসহায় গরিব মানুষেরা।
প্রকল্পটির কাজ নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও নদীর চরে অপরিকল্পিতভাবে গুচ্ছগ্রামটি গড়ে তোলায় সরকারের ভাল একটি উদ্যোগে সফলতা আসেনি বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
গতকাল রোববার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের চরে গড়ে তোলা ৬০টি জরাজীর্ণ বাসগৃহ ও সুন্দর একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। চারটি অগভীর নলকূপের সবগুলোই নষ্ট। বৈদ্যুতিক পিলার ও তার থাকলেও নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে নদীর পানি রক্ষার তিন পাশের বাঁধ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিম পাশের বেশ বড় দুটি ভাঙন দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায় গুচ্ছগ্রামের তিনটি পুকুর, চলাচলের রাস্তা ও আঙ্গিনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উল্লেখযোগ্য কোনো বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলেই এমনিভাবে তলিয়ে যায় ঘরের মেঝে (ভিট) মাটি দিয়ে তৈরি হওয়ায় নদীর স্রোতে ধ্বসে যায়। বারবার মেরামত করেও ভালো রাখা যায় না। ঘরগুলো দুর্বল হওয়ায় সামান্য ঝড় হলেই পড়তে হয় চরম ঝুঁকিতে।
গুচ্ছগ্রামস্থ উপকারভোগীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বসবাসের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি ঘরের ব্যবস্থা করায় আমরা খুব খুুশি। তবে কিছু সমস্যায় আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। নদীর পানি রক্ষায় মাত্র ৩ থেকে ৪ শ’ মিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও ঘরের মেঝেগুলো পাঁকা করার ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম। এছাড়া সুপেয় পানি, বিদুৎ ও পুকুরের পাড় বাধার ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারতাম। এ বিষয়গুলো সমাধানে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ৬০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৯০ লাখ, ৪টি নলকূপ স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার, কমিউনিটি ভবন তৈরির জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য ২৫১.৪০১ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু দায় সারা কাজ করে সমুদয় অর্থ কোথায় গেলো?
বর্তমান ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসও তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে মোংলায় কর্মরত) মো. জাফর রানার কাছে বরাদ্দের পরেও সুপেয় পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা না করে স্যালো (অগভীর নলকূপ) বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তোর মেলেনি।
এছাড়া নদীর চরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর তীরে পাইলিংয়ের মাধ্যমে বাঁধের ব্যবস্থা করতে পারলে জোয়ারের পানি আসতো না। তবে পাইলিংয়ের বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, পুকুর সংরক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা থাকার পরেও অন্যত্র চলে আসায় সেটার ব্যবস্থা করতে পারিনি।
বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, ওখানে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের একটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বাস্তবে গুচ্ছ গ্রামের দৃশ্য স্বচোখে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। সেখানে চলেছে হরিলুট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পরে আর কোনো অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না। আমরা কয়েকবার আবেদন করার পরেও বলা হয়েছে নতুন কোন বরাদ্দ দেয়া হবে না। এজন্য আমাদেরকে স্থানীয়ভাবে টিআর/কাবিখা থেকে সংস্কার কাজ করতে হয়। তা দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ অসম্ভব। এছাড়া গুচ্ছগ্রামগুলো বেড়িবাঁধের বাইরে হওয়ায় নিরাপদ না। একবার বাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, নদীর তীর হওয়ায় ফের ভেঙে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের সেদিকে দেখার সময় নেই বলে গ্রামবাসী জানান।
উল্লেখ্য, এ উপজেলায় ৬টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। নদীর চরে স্থাপিত হওয়ায় একটু ঝড়-বৃষ্টিতে অধিকাংশ স্থানেই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় বসবাসকারীদের। তাছাড়া প্রায় সবগুলোতে কমবেশি সমস্যা রয়েছে। যা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। যেখানে বাসের জন্য মাথা গুজাবার ঠাঁই নিরাপদ না সেখানে পড়াশোনার চিন্তা করা যেন আকাশ ছোঁয়ার মত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন