শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীতে সীমাহীন জনদুর্ভোগ

প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, জ্বালানির অপচয়, বাড়ছে দূষণ হ বছরে আর্থিক ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিত্যদিনের যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। গতকাল সকাল বেলা অফিসগামী লোকজন যারা বাসা থেকে রের হয়েছেন তারাই যানজটের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখী হয়েছেন। বিকেলের দিকে এই যানজট বেড়ে গেছে আরও কয়েকগুণ। রাস্তায় বের হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়েছেন নগরবাসী। এই যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, অপচয় হচ্ছে জ্বালানি তেল, এবং দূষণ বাড়ছে রাজধানীতে।

তবে সকাল থেকেই সড়কে ছিল গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকদের। তারাও ছিলেন যাত্রীর অপেক্ষায়। গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, ব্যক্তিগত যানবাহনে ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে করে যে যার মতো ছুটেছেন কর্মস্থলে। সড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ও সরু রাস্তায় রিকশার জটলার কারণে যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মব্যস্ত লোকজন। গতকাল বুধবার বেলা বাড়ার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এছাড়া ছাদখোলা বাসে বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো ক্রীড়া দলকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের জন্য এ আয়োজন। আনন্দ-উল্লাস করে তারা ছাদখোলা বাসে এসছেন তারা। গতকাল বুধবার এভাবেই বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল আরামবাগের বাবুফে ভবনের দিকে আসতে থাকা গাড়ি বহরের চাপে বেড়ে যায় এই রুটের যানজট। আস্তে আস্তে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চলার কারণে এই রুটের নিয়মিত চলাচলের গাড়িগুলোকে চলতে হয়েছে নির্দিষ্ট গতিতে। তাই এই রুটের যানজট আরও বেড়ে যায়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন নিয়মিত যাত্রীরা। এই যানজটের কারণে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও বেড়ে যায় গাড়ির চাপ। সন্ধ্যার দিকে ঢাকার যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে যানজট। এর মধ্যে গুলিস্তান, বাড্ডা, বিজয় সরণি মোড়, তেজগাঁও, মহাখালী, বিমানবন্দর এলাকা ছিল অন্যতম। এছাড়া সকাল থেকেই ফার্মগেট-শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নেয় যানজটে। তেজগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কেও যানবাহনের প্রচুর চাপ ছিল। বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িলসহ প্রগতি সরণিতে যানবাহন খুব ধীরে চলেছে।
বাসযাত্রী আল মামুন জানান, বাসা থেকে বের হলেই পড়তে হচ্ছে যানজটে। দিনদিন এই যানজট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সড়কে তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। যানজটে আটকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অন্য যাত্রীদের। বিশেষ করে নারী-শিশুরা বেশি ভুগছেন। এর মধ্যে আবার অস্বস্তি বাড়িয়েছে গরম।

এদিকে, জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি। গতকাল বুধবার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিটিসিএর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (মাস ট্রানজিট) এ কে এম হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (টিএমপিটিআই) মোহাম্মদ রবিউল আলম, ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হায়দার কামরুজ্জামান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখি’ সেøাগানকে সামনে রেখে এ বছর ৬২টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিকে ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাইকেল র‌্যালি, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ : বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয় শীর্ষক লাইভ টক শো, বসবাসযোগ্য ঢাকা : ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনাসভা, পার্কিংয়ের পরিবর্তে এলাকাভিত্তিক ছোট আকারের সামাজিকীকরণের সুযোগ গড়ে তোলার আহ্বানে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে কার ফ্রি স্ট্রিট এবং আলোচনাসভা। এ ছাড়া আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ডিটিসিএর সভাকক্ষে (নগর ভবন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সত্তরের দশকে ইউরোপে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়। এই দিবসের অঙ্গীকার অনুযায়ী ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে দূষণ। এ জন্য বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটিও দুর্ঘটনা ও দূষণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাই উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে মেট্রো রেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজ, প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং মানসম্মত ফুটপাত তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন