ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-উপমহাদেশের এ তিনটি দেশই তারুণ্য নির্ভর। তারুণ্য নির্ভর দেশ হিসেবে পৃথিবীতে সবচেয়ে এগিয়ে ভারত। সেদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ কোটি। এর মধ্যে তরুণ জনসংখ্যা প্রায় ৩৬ কোটি। তার মানে, সেদেশে তরুণ জনগোষ্ঠি মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি আর তরুণ জনশক্তি ৬ কোটি। তার মানে, সেদেশে তরুণ শক্তি মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশের একটু বেশি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই হলো তরুণ। দেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর মধ্যে তরুণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যেকোনো দেশের মূল চালিকা শক্তি হলো যুবশক্তি। বাংলাদেশ আমাদের রক্তস্নাত আন্দোলনের এক স্বাধীন মাতৃভূমি। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পরতে এ ভূমিতে জড়িয়ে আছে তারুণ্যের রক্ত। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল আরো আগে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেপথ্যের নায়করা সবাই ছিলেন বয়সে তরুণ। ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালে সংঘটিত হয় শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন। এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল দেশের তরুণ সমাজ। এছাড়া ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের ১১ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মতো আন্দোলনের মাঠকর্মী ছিলেন তরুণ সমাজ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভ্যানগার্ড হিসেবে এ যুবশক্তির অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের দামাল তরুণেরা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন দুঃসময়ে বাঙালিদের সংঘবদ্ধ হওয়ার মূল প্রেরণা ছিল এই যুব সমাজ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ যে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল, সেটাও ছিল তরুণ ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে। আজও দেশের নবজাগরণের অগ্র সেনানী যুবকেরাই। দেশের নব নব অভূতপূর্ব সব সৃষ্টিগুলোর নেপথ্যের কারিগর এখনও তারাই। কিন্তু দেশে আজকের তরুণদের বড় একটা অংশই হতাশাগ্রস্ত। বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত এ যুবসমাজ অনিশ্চিত এক গন্তব্যের পথে ধাবমান। যে তরুণেরা স্বাধীনতার লাল সূর্যকে এনে দিয়েছে, এখন আর তাদের স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্বুদ্ধ হতে দেখা যায় না। অনেক যুবক হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আজকের তরুণরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে সর্বদিক থেকে পশ্চাদগামী হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, উচ্ছল তারুণ্যে কেন এই পশ্চাৎপদতা? সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, কর্মচঞ্চল ও উচ্ছল তারুণ্যে বিষাদের ছায়া এঁকে দিয়েছে দেশের অপরাজনীতি। আশির দশকের রাজনীতি আর বর্তমানের রাজনীতিতে অনেক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। সেসময় জাতীয় রাজনীতি ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও উপাদান। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতি হয়ে গেছে অর্থ উপার্জনের একমাত্র সহজ উপায়। সে সময় ছাত্র রাজনীতি ছিল দেশ পরিচালনার বড় নিয়ামক। তখন মেধাবী তরুণ-তরুণীরা রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতো। মানবতার জন্য তারা স্বেচ্ছাশ্রম দান করতো। তাদের কৃতকর্মের জন্য তখন সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক তারা বাহবা ও স্বীকৃতি পেতো। তখনকার রাজনীতির অনন্য উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের দেশ গড়ার যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, কবিতা আবৃতি ও খেলাধুলা ইত্যাদি ছিল তাদের বিচরণ কেন্দ্র। আজকের ছাত্র রাজনীতিতে নানা দৈন্য ভর করেছে। সেখানে আজ জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদ, ভোগবাদ আর আত্মকেন্দ্রিকতা। আজকের রাজনীতিতে সুস্থধারার পৃষ্ঠপোষকতা স্বপ্নের মতো অধরা হয়ে গেছে। এখানে না আছে সুস্থ ধারার সাহিত্য, না আছে সুস্থ সংস্কৃতি আর না আছে ভদ্রতা। আজকে পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে মাদক, চুরি, চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজিতে। আজ না আছে খেলাধুলা, না আছে খেলার মাঠ, না আছে কবিতা-ছড়ার আড্ডা আর না আছে সাহিত্যাঙ্গন। আর যাও আছে তাতে রয়েছে ঘৃণ্য দলবাজি আর নৈতিকতাহীন উপাদান। দলীয় অন্ধত্ব আর নোংরা দলবাজি সমাজটাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। নীতিভ্রষ্ট রাজনীতির যাতাকলে নিষ্পেসিত আজকের তরুণ সমাজ। নৈতিকতাহীন যাবতীয় উপাদান আজকের তরুণ সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে শহরের অলি-গলিতে সৃষ্টি হয়েছে গ্যাংকালচার। বারো-তেরো বছরের একজন বালক তুচ্ছ কারণে খুনের মতো ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে! আর এসব ঘটছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশাসন এসব তরুণদের নিয়ে মোটেই ভাবছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন তরুণ সমাজের নৈতিক উন্নয়ন। তাদের নৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত দেশের কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।
দেশের যুবসমাজের বৃহৎ একটি অংশই বেকার। তারা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এসব তরুণকে বেকার রেখে উন্নয়নের স্লোগান একবারেই বেমানান। বেকার তরুণ সমাজের কাছে এসব উন্নয়নের বুলি একবারেই গুরুত্বহীন। দেশে উড়াল সড়ক হচ্ছে, বড় বড় সেতু নির্মাণ হচ্ছে, হচ্ছে মেট্রো রেল। দেশকে উন্নত রাষ্ট্র করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতকিছু করা হলেও দেশের ৪ কোটি বেকার যুবক নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করা হচ্ছে না। এজন্য দেশের উন্নয়নের বুলিতে তারা মোটেই বিশ্বাসী নয়। তারা কাজ চায়; তারা কাজ করতে চায়। সামান্য পিয়নের চাকরি পেতে দেশের কোটি কোটি গ্রাজুয়েট লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেবার জন্য প্রস্তুতি। তারপরও তারা চাকরি পাচ্ছে না। সামান্য বেতনে একজন গ্রাজুয়েটের চাকরি করতে চাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, এসব তরুণ-তরুণী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট পেরেশান। তারা পরিবার, দেশ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে বাঁচতে চায় না। এ লেখকের সাথে যুক্ত হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট হতাশা ব্যক্ত করে বলেন: ‘স্যার, তিন বছর হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস পাশ করেছি, আমার সিজিপিএ ৩.৮৪। কিন্তু বেকার জীবনের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছি! আমার কাছে দেশের উন্নয়নের সব সংবাদ অর্থহীন। আমি একটি সম্মানজনক চাকরি চাই! দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে আমিও ভূমিকা রাখতে চাই। কিন্তু স্যার, হতাশার ব্যাপার হলো, দেশের কর্তাব্যক্তিরা আমাকে নিয়ে মোটেই ভাবে না। রাষ্ট্র ও সরকার আমাদের মতো যুবকদের সঠিকভাকে মূল্যায়ন করছে না। তিনি আরো বলেন, আমি কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত নই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটা রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ, রাজনৈতিক পরিচয়েই শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হয়। আবার অন্যান্য বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রেও দলীয় ভিত্তিেিত নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমাদের কী হবে?’
আমাদের দেশে যখন কোটি কোটি গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট বেকার জীবনের ঘানি টানছে, ঠিক সেই সময় দেশে বিদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪৪টি দেশের অসংখ্য বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন। আশ্চার্যের ব্যাপার হলো, এসব নাগরিকের অনেকেই অবৈধ নাগরিক। তাদের অধিকাংশেরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। এসব নাগরিকের মধ্যে শুধু ভারতেরই আছে ৮ লাখ, যাদের মধ্যে ৪ লাখেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নাই। শুধুমাত্র বাংলাদেশের পোশাক কারখানায়ই ১০ থেকে ১৫ লাখ বিদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশই ভারতীয়। এছাড়া ২৫ শতাংশ শ্রীলঙ্কান, ১৩ শতাংশ চীনা, ৮ শতাংশ সাউথ কোরিয়ান, ১.৭ শতাংশ তার্কি এবং ১ শতাংশ পাকিস্তানি। এ শিল্প খাতের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিয়োজিত সকল শ্রমিক মাসে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। বছরে এসব নাগরিকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে ২০ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। দেশে কোটি কোটি যুবক বেকার থাকতে বিদেশি নাগরিকের চাকরি পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক!
অথচ, দেশকে এগিয়ে নিতে তারুণ্যের কোনো বিকল্প নেই। আজকের এ তরুণ-তরুণীই আগামীর দেশগড়ার কারিগর। এসব তরুণকে তাই পর্যাপ্ত সুযোগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। আজ দেশে কোটি কোটি যুবক বেকারত্বের অভিশাপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে না। ফলে দেশ এগিয়ে যেতে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যন ব্যুরোর ২০১৪-২০১৫-এর এক তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ২৭ লাখ যুবক-যুবতী কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে চাকরি পাচ্ছে মাত্র ৬ লাখ। বাকি ২১ লাখ তরুণ বেকার জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৫০ জনই বেকার বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
আন্তার্জাতিক শ্রমসংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি, যা কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে। এর অর্থ দাাঁড়ায় দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগই বেকার হয়ে পড়বে। অপরদিকে ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক পরিসংখ্যানে বলেছে, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ গ্রাজুয়েটই বেকার। অথবা যে কর্মে ঐ গ্রাজুয়েট নিযুক্ত, এজন্য তার গ্রাজুয়েট হবার দরকার ছিলনা। বেকারত্বের আরেকটি কারণ হলো, অধিকাংশ যুবকই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী নয়। তাদের অধিকাংশই সরকারি চাকরির প্রত্যাশী। কিন্ত কেউই চাকরি সৃষ্টি করতে চায় না। ফলে একজন শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয় থেকে পোস্টগ্রাজুয়েট সম্পন্ন করে নতুন করে আবার চাকরির জন্য পড়াশুনা করতে থাকে। এজন্য তাকে আরো কয়েক বছর সময় পার করতে হয়। তারপরেও অনেকে তার প্রত্যাশিত চাকরিটি পায় না।
কাক্সিক্ষত চাকরিটি না পেয়ে যুবকটি তখন মনের দিক থেকে বেপরোয়া হয়ে পড়ে। ওদিকে পাশের বাড়ির অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী একজন তরুণ রাজনীতির সুবাদে সামাজিক একটা অবস্থান করে নিয়েছে। এটি দেখে সে আরো বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একজন যুবকের জীবনে বিবাহ একটি অলংঘনীয় বিধান হলেও বেকার অবস্থায় সেটা তার কাছে অধরাই থেকে যায়। আর আমাদের সমাজে অলিখিত আইনই হয়ে গেছে যে, চাকরি নাই তো বিয়ে নাই! অন্যদিকে মেয়েদের বাবারাও বেকার যুবকের সাথে মেয়েকে বিবাহ দিতে রাজি হয় না। এমতাবস্থায়, যুবকের কপালে কাক্সিক্ষত বিবাহটি আর জোটে না। তখন তার মনের ভিতরে এক ধরণের দ্রোহ তৈরি হয়। হতাশাগ্রস্ত যুবকটি তখন কুপথ পথ বেছে নেয়। বিভিন্ন মাদকের সংশ্রব তাকে আসক্ত করে ফেলে। মনের ভিতরে জঙ্গি মানসিকতা তৈরি হতে থাকে। যুবকটি তখন বিভিন্ন বাঁকা পথের আশ্রয় গ্রহণ করে। সে জৈবিক চাহিদা মেটাতে অবৈধ অজাচারে লিপ্ত হতেও দ্বিধা করে না। জীবনের প্রতি তার চরম নৈরাশ্য সৃষ্টি হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রাজনীতি থেকে সততা, মূল্যবোধ ও ত্যাগের মানসিকতা নির্বাসিত হয়েছে। আজ আমরা নষ্ট রাজনীতিকদের মুখে শুনতে পাই মূল্যবোধের কথা! অথচ, তারাই মূল্যবোধকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারাই সমাজে অবক্ষয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা জানি, সমাজ থেকে মূল্যবোধকে কারা তাড়িয়েছে। আমরা আরো জানি, সমাজে অবক্ষয়কে কারা আমদানি করেছে। কিন্তু ভদ্ররূপী ভীরু লোকগুলো সেটা প্রকাশ করছে না! আমরাও এ বিষয়ে মুখে একবারেই কলুপ এঁটে রেখেছি! আবার কথিত নীতিবাদীরাও চুপ! কেউই আমরা মুখ খুলছি না। অন্যদিকে যারা সত্যিকারের মূল্যবোধের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা সবাই মিলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি! তাদেরকে দেশ বিরোধী বলে আখ্যা দিচ্ছি! আজকের যে তরুণটির বয়স ২০ বছর সে দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতি দেখতে পায়নি। উক্ত তরুণটি ভোটের রাজনীতি চেনে না। বিধায় সে গণতন্ত্রও চেনে না। সে রাজনীতিকে বড় লোক হবার মাধ্যম হিসেবেই দেখতে পাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে, রাজনীতি মানেই হাঙ্গামা, গুন্ডামি আর ঘৃণ্য চতুরতা।
এ চতুর রাজনীতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেওয়াজ সৃষ্টি করেছে। দুষ্টু চক্রটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উল্টো এটাকে অস্বীকার করে অসৎ লোকদেরকে সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। দেশের সরকারি কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়গুলো আজ মূল্যবোধশূন্য অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা-গবেষণা শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। অনার্সে ভর্তি হয়েই একজন শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। একারণে দেশে তেমন কোনো গবেষণা সৃষ্টি হচ্ছে না। বিসিএস ক্যাডার হয়ে শুধু টাকা কামাইয়ের ধান্ধাবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হলে হলে ইয়াবা ও মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রগতিশীলতার নামে সেখানে অবাধ যৌন স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আর এসবই হচ্ছে রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায়। আজকের সমাজে শিক্ষকগণ তরুণ শিক্ষার্থীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছে।
এসব অবক্ষয় আমাদের দেশে একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে এটা তৈরি হয়েছে। সমাজের প্রভাবশালীরা প্রতিদিন একটু একটু করে এটাকে সৃষ্টি করেছেন। কর্তৃপক্ষকে ভাববার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি!
লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দা‘ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন