বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি ভেঙে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিলেন আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরুবা ইসলাম। প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তার এই ধরনের আচরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মাংতাই হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনওকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর এলাকাজুড়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
শুক্রবার ‘স্বাধীন যুবসমাজের’ উদ্যোগে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ‘আবাসিক জুনিয়র একাদশ’ বনাম ‘রেপারপাড়া বাজার একাদশ’ ফুটবল টিমের মধ্যে ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৫ মিনিট করে ৭০ মিনিটের খেলাটি ড্র হয়ে যায়। এ কারণে রেফারি দুই দলকে টাইব্রেকার খেলার সিদ্ধান্ত দেন। খেলায় চারটি করে টাইব্রেকারে আবাসিক জুনিয়ার দলকে ৩-১ গোলে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। খেলার নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক জুনিয়র একাদশ চ্যাম্পিয়ন এবং রেপারপাড়া একাদশ রানার্সআপ হয়। খেলা শেষে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার সময় পক্ষ-বিপক্ষ দলের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও শোরগোল বাধে। ইউএনও হট্টগোলের কারণ জানতে চাইলে অনেকেই খেলার ফলাফল মানেন না জানিয়ে আবারও খেলার দাবি জানান। তখন ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এরপর তিনি খেলার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ ট্রফি দুটি টেবিলের ওপর আছড়ে ভেঙে ফেলেন।
ফেসবুকে ইউএনও’র সমালোচনা করে কমল কান্তী শর্মা নামে একজন লিখেছেন, ‘‘নিজেকে রাষ্ট্রের মালিক ভাবা কতিপয় আমলাদের দৌরাত্ব যেন দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। অমানবিক ব্যবহার, অসদাচরন না করলে যেন মনে মনে তারা নিজেকে পাওয়ারলেস ভাবেন!!!!দোষটা অনেকাংশে রাজনৈতিক নেতাদেরও আছে!! নতুন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজে গিয়ে ফুল দিয়ে বরন,জ্বি স্যার আর জ্বি ম্যাডাম করতে করতে তৈলের মাত্রা বেশি দিয়ে দেন।’’
ফাতেমা আক্তার লিখেছেন, একজন ১ম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে ইউএনও এর ট্রফিগুলো ভাঙা ঠিক হয়নি। তবে এদেশের একশ্রেণির পাবলিকের উপর মাথা ঠান্ডা রাখা খুবই কঠিন কাজ। যেখানে ট্রাইবেকারে খেলা শেষ হয়েছে সেখানে খেলা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকার কারন কি???? যদি খেলার ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্টই থাকে পাবলিক তাহলে ট্রফির কি দরকার??? সে জন্য ট্রফি ভেঙে ফেলেছে,,,,,, তবে ব্যাপার টা মেডাম আরোও ঠান্ডা মাথায় সমাধান করতে পারতেন।’’
উদ্বেগ প্রকাশ করে সোহেল সৈয়দ লিখেছেন, একদিন উনারাই সচিব হবেন, দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবেন। কিন্তু, এখনই যদি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারেন, ভবিষ্যতে তো আরও ভয়াবহ কাজকারবার করবেন উনি!
প্রজাতন্ত্রের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার এহেন অশোভন আচরণ মোটেও কাম্য নয়।ডিসি/সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত এ বিষয়ে উনার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া!
আহসানুল হক রিঙ্কু লিখেছেন, এমন ব্যক্তি যদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকেন, বুঝেন পরিবেশ কেমন হবে, কেমন থাকবে!! যাইহোক ওনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে এর মাধ্যমে! অযোগ্য ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে থাকায় আজ দেশ এগিয়ে যেতে পারছে না। মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। কর্তৃপক্ষ যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন।
ইউএনও’র শাস্তি দাবি করে মানি খন্দকার লিখেছেন, একজন ইউএনও মহোদয়ের সর্ব সাধারণের সম্মুখে এ আচরণ খুব অশোভনীয় ও সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি পরিপন্থী তৎসহ শিষ্টাচারের লংঘন।উনাকে সাসপেন্ড করে, বিভাগীয় শাস্তির দাবি করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন