যুক্তরাজ্যের লন্ডন প্রবাসী সিলেট বিভাগের সাতজনকে একটি সভা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকায়। গত ২১ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ঢাকার মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ওই সভায় অংশ নিয়েছিলেন এই সাত ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আবদুল আহাদ ও তার ভাই আবদুল হাই, সুনামগঞ্জ ছাতকের জামাল উদ্দিন এবং মহানগরীর শাহজালাল উপশহরের আবদুর রাজ্জাক। আবদুর রব নামের গ্রেফতারকৃত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামাল মিয়া ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র ভাইস চেয়ারম্যান ও বাকি সবাই পরিচালক। গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাদের।
এ ঘটনায় লন্ডন ও সিলেট-সুনামগঞ্জে তৈরি হয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। অভিযোগ উঠেছে- বিলেত প্রবাসী সিলেট বিভাগের এই ৭ ব্যবসায়ী দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা।
গত ২১শে সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ওই সভায় অংশ নেন সাত ব্যবসায়ী। এ সময় ওই কার্যালয়ে হানা দেয় মতিঝিল থানা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত খান জানান, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ছিল। কিন্তু তারা দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। দেশের ফেরার তথ্য পেয়ে তাদের গ্রেপ্তারের আদালতের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে কারাগারে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আসামিদের বিরুদ্ধে।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত করা হয়নি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহা ব্যবস্থাপকসহ অন্য কোনো পদস্থ কর্মকর্তাদের। বিষয়টি রহস্যজনক সহ বুদ্ধিভিত্তিক ষড়যন্ত বলে অনেকের ধারনা।
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দেশ-বিদেশে তাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জামাল মকদ্দুস নিজ এলাকা ছাতক থানার নিজ গ্রামে জামাল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের অদূরে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কেরও অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক তিনি। ঘটনাটিকে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের বহি:প্রকাশ লে জানিয়েছেন হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের কার্যালয়ের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ এবং বীমা দাবির টাকা মিটিয়ে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক দিনের। এছাড়া নানা অনিয়ম রয়েছে ব্যবস্থাপনায়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন রকমের অনিয়মের। এব্যাপারে গ্রেফতারকৃত ওই প্রবাসী পরিচালকরা দেশে থাকা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বারবার তাগাদা দিলেও কোনো উদ্যোগ নেননি তারা। এ জন্যই তারা দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে। পুরোটায় হয়েছে পূর্বপরিকল্পনানুযায়ী, তাই আসামীর তালিকায় নেই দেশে থাকা কোনো পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন