স্টাফ রিপোর্টার : জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযংদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জানুয়ারির প্রতি শনিবারে চলবে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। বেশিরভাগ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি যাবে বলেও জানান মন্ত্রী। গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসের ৭, ১৪, ২১, ২৮ প্রতি শনিবার ও ফেব্রুয়ারির ৪ শনিবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলবে। ভারতীয় তালিকাভুক্ত ও ২০০১ সালে লাল মুক্তিবার্তায় যাদের নাম আছে তারা বাদে যারা মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য আবেদন করেছেন তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ৫৫ হাজার গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে প্রায় লক্ষাধিক আবেদন করেছে। এদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই হবে স্ব-স্ব উপজেলায়। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন এমপি যদি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হন, না হলে মুক্তিযুদ্ধকালীন জেলা কমান্ডার। যাকে মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেবে। এছাড়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) বিভাগীয় সদস্য, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য, এমপির একজন মনোনউত প্রতিনিধি। মোট ৬ জন যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকবেন। তাদের সাচিবিক সহায়তা করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এসময় উপস্থিত থাকবেন লালমুক্তি বার্তার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা ও ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা।
মন্ত্রী আরো বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে। কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে একটা ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরমে তথ্য দিতে হবে সে কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তার কমান্ডার কে ছিল, কি অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে কি না? আর মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে একটা বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ১৩ বছর বয়স হতে হবে। এদিকে জাতীয় পার্টির অপর সদস্য ফখরুল ইমামের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, টাকা নিয়ে বসে আছি। জায়গার অভাবে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স বানাতে পারছি না। আমাদের টাকার কোনো অভাব নেই। সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তালিকা এলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করে দেবো।
আদর্শ নয় অবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধ করেন জিয়াউর রহমান
এদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অবস্থার প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, আদর্শের ভিত্তিতে নয়। তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সরকারদলীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, মেজর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। তিনি একজন সেক্টর কমান্ডার ও পরে ‘জেট’ (জেড) ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। তবে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথা মুজিবনগর সরকারের অধীনে যুদ্ধ না করে ওয়ার কাউন্সিল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ করার প্রস্তাব করায় যুদ্ধকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে পুনরায় সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে খুনি খন্দকার মোস্তাকের (মোশতাক) দোসর হিসেবে পাকিস্তানের সাথে লস কনফেডারেশন গঠনের চক্রান্তে জড়িত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে চাকরি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন সভা অনুমোদন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধী আব্দুল আলীমসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে এবং ধর্মীয়ভিত্তিক রাজনীতি চালু করে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। মন্ত্রী আরো বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর সমর্থক ছিলেন বলেই ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে ‘সোয়া (সোয়াত) জাহাজ’ হতে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাস করার জন্য উদ্যোগী ছিলেন। মেজর জিয়াউর রহমান অবস্থার প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে করেন, আদর্শের ভিত্তিতে নয় বলে দাবি করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন