যৌন হয়রানির পৃথক তিনটি ঘটনায় অভিযুক্ত তিন বিভাগের মোট ৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৬ তম সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নাম, বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ও বহিষ্কারের সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জায়েদ ইকবাল তানিনকে ২ বছর, একই শিক্ষাবর্ষ ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমাম হোসেন ইমরান, মো. রিফাত হোসেন ও মো. বিশাল আলী এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দাস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মুস্তাকিম সাকিবকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া বহিষ্কারাদেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহিষ্কৃতদের আবাসিক হলের সিট বাতিল ও ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে হয়রানির ঘটনায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়ররা পাঠানটুলা এলাকার কোনো এক মেসে ডেকে একই বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থী সৈয়দ মুস্তাকিম সাকিবকে বকাঝকা করেন। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়রানির শিকার এক ছাত্রীকে হুমকি দেন সাকিব। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী ১৩ ফেব্রুয়ারি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা প্রভাষক নাফিজা আনজুমের কাছে যৌন হয়রানির একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেন এবং পরে নাফিজা আনজুম তা বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে পাঠান। এ ঘটনায় তাকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে গতবছরের ১২ জুলাই লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন দাশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন একই বিভাগের জুনিয়র এক ছাত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, টিউশনে যাওয়া এবং টিউশন থেকে ফেরার পথে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় প্রথমে মোবাইল নাম্বার চাওয়া ও পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সিএনজিতে উঠে গেলে সুমন সে সিএনজিতে উঠে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তখন সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এরই অধিকতর তদন্ত শেষে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে আবারও ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
অপরদিকে ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জায়েদ ইকবাল তানিন, মো. ইমাম হোসেন ইমরান, মো. রিফাত হোসেন ও মো. বিশাল আলীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও মানসিক চাপ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তাদেরই সহপাঠী এক ছাত্রী। ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত ৫ জন সহপাঠী তাকে উদ্দেশ্য করে প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে ক্লাসের ভিতর এবং বাইরে অবাঞ্চিত মন্তব্য, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অশোভন অঙ্গভঙ্গি, তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, টিটকারি, কুৎসা রটানো ও চরিত্র হননের চেষ্টা করে আসছিলেন। সহপাঠী হওয়ায় সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে এতদিন চেপে রাখার চেষ্টা করলেও সর্বশেষ ফিল্ড ওয়ার্কে থাকা অবস্থায় অভিযুক্তদের একজন পুনরায় তাকে উত্ত্যক্ত করলে পরবর্তীতে এ অভিযোগ পত্র জমা দেন তিনি। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তদন্তের পর অভিযুক্তদের মধ্য থেকে মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জায়েদ ইকবাল তানিনকে ২ বছর ও মো. ইমাম হোসেন ইমরান, মো. রিফাত হোসেন ও মো. বিশাল আলীকে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন