২০১৯ সালের ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেললাইন পরিদর্শনে এসে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সেসময় তিনি উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন দেওয়া হবে। এতে থাকবে ওয়াইফাই ও শৌচাগারের ব্যবস্থা।’ কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কোন ব্যবস্থা এখনো হল না। শহর থেকে ২২-২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরে বসবাসকারী প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু নানান সমস্যার কারণে এই শাটল ট্রেন বর্তমানে আমাদের কাছে একটা ভোগান্তির নাম। শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত বগি না থাকার কারণে ট্রেনের ভিতর বসা তো দূরের কথা দাঁড়ানোরও জায়গা পাওয়া যায় না। একারণে ট্রেন স্টেশনে থামার আগেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবাই চলন্ত ট্রেনে লাফ দিয়ে উঠে যায় বসার জায়গা পাওয়ার আশায়। তাছাড়া অনেকেই ছাদের উপরে বসে যাতায়াত করে। এসব কারণে গত কয়েক বছরে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়, যা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। ট্রেনের ভিতর বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও পাওয়ার সাপ্লাই না থাকার কারণে কোনো পাখাই চলে না। প্রচন্ড গরমে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক ঘামে ভিজে কোনো রকমে জীবন্মৃত অবস্থায় যাতায়াত করতে হয় আমাদের। তাছাড়া দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশি সময়ের জার্নিতে ট্রেনে কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা নাই। গতি অনেক কম, যার কারণে গরমে ভোগান্তি তো আছেই তদুপরি শিক্ষার্থীদের দিনের একটা মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায় শুধুমাত্র যাতায়াতের জন্যই। শুধু মাত্র নামকাওয়াস্তে ট্রেন থাকলেও এ ট্রেনের মতো নিম্নমানের সেবা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নাই। অথচ, প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নেওয়া হয় ট্রেন সার্ভিস বাবদ। এসব সমস্যার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানালে তারা জবাব দেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নাই। যার কারণে তারা চাইলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এখন আমরা কার কাছে যাবো? কার কাছে গেলে আমরা সুষ্ঠু সমাধান পাবো? রেলমন্ত্রী ও কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের আকুল আবেদন, দয়া করে আমাদের জন্য ন্যূনতম সেবা নিশ্চিত করুন। চলমান ট্রেনের সাথে আরও কমপক্ষে তিনটা বগি সংযুক্ত করে; ডেমু ট্রেন পুনরায় চালু করে; পাওয়ার কার সংযুক্ত করে ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা করে আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে উদ্ধার করতে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জোবায়ের হোসেন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন