লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার দুটি মাদরাসা প্রধানের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে দাখিলের জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষায় সাতজন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারেননি। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও পরীক্ষা থাকা না থাকার বিভ্রান্তিতে তাঁরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হন। পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ওই সাত শিক্ষার্থী হচ্ছে উপজেলার চরআব্দুল্যাহ ফাজিল মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন, আকিব হোসেন, তাজরিন জাহান, আরমান হোসেন, রুমানা আক্তার, শরীফুল ইসলাম ও নুশরাত জাহান ইতি।
শিক্ষার্থীরা জানান,নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় তাঁরা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কৃষি শিক্ষা এবং অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে জীববিজ্ঞান বিষয় নেন। সেই হিসেবে অতিরিক্ত বিষয়ের পরীক্ষা হবে না ধরে বিগত দুই বছরে তাঁদের জীববিজ্ঞান বিষয়ের একটি ক্লাসও হয়নি। এমনকী অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় শিক্ষকরা ওই বিষয়ের পরীক্ষাও নেয়নি। কিন্তু দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্রে নয়জন শিক্ষার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে জীববিজ্ঞান উল্লেখ থাকে। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জানালেও তাঁরা ওই বিষয়ের পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এজন্য তাঁরা বৃহস্পতিবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে যাননি। কিন্তু সকাল ১১টার দিকে আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে জানানো হয় তাঁদের পরীক্ষা রয়েছে। তড়িঘড়ি করে নয় শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই জন ১১টা ১৫ মিনিটের সময় কেন্দ্রে প্রবেশ করে পরীক্ষায় অংশ নেন। অপর সাত শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর কেন্দ্রে পৌঁছালে কেন্দ্র সচিব তাঁদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেননি। যে কারণে, পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে তাঁরা এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিষয়টি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়,উপজেলার আলেকজান্ডার কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলী ও চরআব্দুল্যাহ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাকিমের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব চলে আসছে। একে ওপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে উপজেলা ব্যাপী সমালোচিত হন। দীর্ঘ বছর ধরে এই দুজন অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব টক অব দ্যা রামগতি। এই দু'জনের দ্বন্দ্বের জেরে মুলত এই ৭ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন বলে জানান ভুক্তভোগী পরিক্ষার্থীরা।
আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব ও আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলী বলেন,পরীক্ষা শুরুর পর নয় শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি দেখে আমি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর পর তাঁদের মধ্যে দুইজন পরীক্ষা শুরুর ১৫মিনিট পর আসলে আমরা তাঁদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করি। অপর সাত শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর আসায় তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চরআব্দুল্যাহ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাকিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় কেন্দ্র সচিব তাঁদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পারেনি। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন